নোটিশ পেয়েও বিনা ছুটিতে দীর্ঘদিন হাসপাতালে অনুপস্থিত চিকিৎসক তানজিয়া

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা হাসপাতালের কর্মকর্তা (সহকারী সার্জন) ডাঃ মিনজিয়া রহমান ছুটি বিহীন দীর্ঘ দিন তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও স্বাস্থ্য বিভাগ এ ছুটির প্রযেজ্য নয়। অথচ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ৫১ শয্যা বিশিষ্ট হাসাপাতালের ডাঃ মিনজিয়া বিনা ছুটিতে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন।

উপজেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় ডাঃ মিনজিয়া রহমান সহকারী সার্জন হিসেবে গোয়ালন্দ উপজেলায় গত বছর ১২ ডিসেম্বর যোগদান করেন।

ডাঃ মিনজিয়া রহমানের এই অনুপস্থিতি বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসিফ মাহমুদ বলেন, কর্তৃপক্ষ গত ২৫ মার্চ তাকে কারণ দর্শাতে নোটিশ প্রদান করেছে। এ সময় তিনি আরো বলেন, নোটিশ প্রদান করার পরও শুক্রবার পর্যন্ত তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত হননি।

উপজেলা হাসপাতাল সূত্র জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গত ২৫ মার্চ চিকিৎসক কর্মকর্তা ডাঃ মিনজিয়া রহমান এর কাছে অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চেয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ২১ মার্চ থেকে মিনজিয়া রহমান কর্মস্থলে কেন অনুপস্থিত রয়েছেন তার কারণ দর্শানোর কথা বলা হয় এবং তাকে কাজে যোগদান করার কথাও বলা হয় ।

সেই সাথে তার ব্যক্তিগত ফোনে কার্যালয়ে আসতে যোগাযোগ করা হলেও তিনি আসতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

অথচ মন্ত্রী পরিষদ কর্তৃক দেশের সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি ও কর্মস্থল ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই অনুপস্থিতি সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা ২০১৮ এর পরিপন্থি। এমতাবস্থায় কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্বোতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে না তার সন্তোষজনক জবাব পত্র জারির ৩ (তিন) কার্যদিবসের মধ্যে নিম্ন স্বাক্ষরকারী দপ্তরে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হইল।

গত ২৮ মার্চ স্বাক্ষরিত ই-মেমইলে পাঠানো জবাবে চিকিৎসক মিনজিয়া রহমান জানান, তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারি সার্জন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গত ২১ মার্চ ডে-অফ ছিল। তার ১ বছর ৩ মাস বয়সী এক সন্তান আছে। তার অনুপস্থিতিতে সন্তানের দেখভালের জন্য তার মা বাসায় থাকেন। কিন্তু তিনি (মিনজিয়ার মা) ডায়াবেটিস, ক্রনিক কিডনী ডিজিজ, উচ্চরক্ষচাপ ইত্যাদি রোগে ভুগছেন। ৩১ মার্চ রাতে আমার সন্তানের ঠান্ডা-সর্দির সমস্যা শুরু হয়। সে সময় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে শুরু হওয়ায় আমি ও আমার পরিবার অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি এবং বাসায় আসি।

পরবর্তীতে আমার সন্তানের শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করলে উনি আমাকে আশ্বস্ত করেন সন্তান সম্ভবত সাধারণ ঠান্ডা-সর্দির সমস্যায় ভুগছেন। এও সতর্ক করেন যে আমরা যেন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকি। উদ্ভুত পরিস্থিতি আপনাকে (স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) মোবাইল ফোনে মৌখিক ভাবে অবগত করি। এমতাবস্থায় আমার সন্তানের ঠান্ডা-সর্দির সমস্যা ২৭ মার্চ থেকে উন্নতি হলে ঢাকার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় আমি কর্মস্থলে আসতে পারছিনা। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার সাময়িক অনুপস্থিতি সহানুভুতির দৃষ্টিতে দেখবেন ও পরবর্তী দায়িত্বসমূহের সাথে সমন্বয় করার আবেদন জানান।

এদিকে গত ২৪ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-১) মো. এনামুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের ২২ মার্চ তারিখের সংখ্যক স্মারকের আলোকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও এর প্রাদুর্ভাবজনিত যেকোন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির সময়ে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ না করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসিফ মাহমুদ বলেন, এমনিতে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এরমধ্যে বিনা ছুটিতে মিনজিয়া রহমান কর্মস্থল ত্যাগ করে এখন পর্যন্ত যোগদান না করায় তাকে ২৫ মার্চ কারণ দর্শাতে নোটিশ দেয়া হয়। দুই দিন পর ২৮ মার্চ তিনি জবাব দিলেও সন্তোষজনক না হওয়ায় এক-দুইদিনের মধ্যে ফের আরেকটি কারণ দর্শাতে নোটিশ দেয়া হবে। বিষয়টি উর্দ্বোতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ছুটি বিষয়ক প্রজ্ঞাপন প্রতিটি দপ্তরে দিয়েছি। কয়েকটি জরুরী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ অতিব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কেউ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন