৬ চিকিৎসক বরখাস্ত, ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’ বললো বিএমএ

 

ঢাকার উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ছয় চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত ‘হয়রানির আদেশ’ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী।

রোববার (১২ এপ্রিল) এ চিঠি দেয়া হয়। বিএমএ’র দপ্তর সম্পাদক ডা. মোহা. শেখ শহিদ উল্লাহ জানান, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এ চিঠি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা গেছে যে, সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক আদেশে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ছয়জন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। উল্লিখিত কর্মকর্তাদের বরখাস্তের পূর্বে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযােগ দেয়া হয়নি। সেখানে দুজন চিকিৎসক রােস্টার ডিউটিতে ছিলেন। একজন চিকিৎসক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গিয়ে জানতে চেয়েছেন তিনি ১ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ডিউটি শেষ করে বর্তমানে পরবর্তী রােটেশনের অপেক্ষায় ছিলেন, তিনি কেন বরখাস্ত হলেন? আরেকজন চিকিৎসক মিডিয়ায় বলেছেন যে, তিনি ৩১ মার্চ পর্যন্ত ডিউটি করেছেন, পুনরায় ১৫ এপ্রিল রােস্টার অনুযায়ী কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়ার কথা। তিনি বর্তমানে একটি হােটেলে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এছাড়া দুজন চিকিৎসককে ১৩ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে তারা ওখানে যােগদান করেছেন, তাদের এখন কেন বরখাস্ত করা হলাে?

চিঠিতে আরও বলা হয়, সমন্বয়হীনতার ব্যর্থতা কি উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানাের একটা কৌশল মাত্র। জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে চিকিৎসকদের বিব্রত করে প্রশাসন কি অদক্ষতার পরিচয় দেয়নি? চিকিৎসক হলেই যে মানুষ মানসিকভাবে খুব শক্ত হবেন এমনতাে নয়। বিদেশে দু-একজন চিকিৎসক মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যাও করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যে কেউ নিজেকে নিবৃত রাখতে পারেন। তথাপি এসব চিকিৎসক বক্তব্য অনুযায়ী তারা কেউই কোভিড-১৯ রােগী দেখতে অপারগতা প্রকাশ করেননি। কোনো কিছুই বিবেচনায় না নিয়ে সরকারি চাকরিবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন না করে এ সব চিকিৎসককে বরখাস্ত আদেশ গােটা চিকিৎসক সমাজকেই হতাশ করেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা অত্যন্ত সাহসের সাথে যেখানে করােনা মােকাবিলা করছেন সেখানে এ ধরনের আদেশ হঠকারী ও অনভিপ্রেত।

এতে আরও বলা হয়, প্রয়ােজনে যে কাউকে অন্য কোথাও বদলি করা যেত, তাদের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া যেত। কিন্তু অকস্মাৎ গণমাধ্যমের এই চাঞ্চল্যকর বিষয়টি বর্তমান মহামারি আক্রান্ত জনগােষ্ঠীর সেবায় স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে খারাপ বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। এতে করে কারা লাভবান হচ্ছে বিষয়টি পরিষ্কার নয়। এ ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি আপনার কাছে উপস্থাপন করা হলাে।

গতকাল শনিবার (১১ এপ্রিল) কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা দিতে অপারগতা জানানোর অভিযোগে ছয় জন চিকিৎসককে বরখাস্ত করে কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এরা হচ্ছেন:- ডা: হীরম্ব চন্দ্র রায় (জুনিয়র কনসালট্যান্ট), ডা: ফারহানা হাসনাত (মেডিকেল অফিসার), ডা: শারমিন হোসেন (জুনিয়র কনসালট্যান্ট), ডা: উর্মি পারভিন (মেডিকেল অফিসার), ডা: কাওসারউল্লাহ (মেডিকেল অফিসার), ডা: মুহাম্মদ ফজলুল হক (আরপি)।

ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, আমার অ্যাজমা আছে। দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিউটি দেবেন। ১৫-২১ তারিখ পর্যন্ত আমার ডিউটি। ডিউটি করার জন্য হোটেলে রুমও নিয়েছি।

তবে কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল তত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ সোহাব উদ্দীন বলেন, আজকে ২ মাস যাবৎ আমরা এই সার্ভিস দিচ্ছি। সকল চিকিৎসকরা বলছে আমরা করতে পারলে সে কেন করবে না। সে আসলে ভয়ে অজুহাত দিচ্ছে। তাহলে এটার সমাধান কি?

ডা: শারমিন হোসেন ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক স্যার আমাকে কোনো টেলিফোন না করে বা কোনো কিছু না জানিয়ে আমার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নাম পাঠিয়েছেন যে আমি নাকি কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দিতে ইচ্ছুক না। এমন কথা আমি মৌখিক বা লিখিতভাবে কখনো স্যারের কাছে অথবা কারও কাছে প্রকাশ করেছি বলে আমার জানা নেই।

তিনি জানান, তিনি ১ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত কাজ করেন। রাতের পালার কাজ সেরে বাসায় ফেরেন সকালে। এক দিন পর তিনি জানতে পারেন তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

শারমিন হোসেন তার হাজিরা খাতার অনুলিপি নিয়ে রোববার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. বেলাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন বলেও ওই পোস্টে বলেন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) বেলাল হোসেন বলেন, আজ সকালে শারমিন হোসেন তার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি শারমিনকে তার বক্তব্য লিখিতভাবে স্বাস্থ্যসচিবকে জানাতে বলেছেন।

তিনি বলেছেন, কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালের সুপারিশে চিকিৎসকেরা সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। তদন্তের পর নির্দোষ প্রমাণিত হলে তারা নির্দোষ।

বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ উল্লেখ করে চিকিৎসক নেতারা বলছেন, চিকিৎসকদের মানবাধিকারের বিষয়টি উপেক্ষিত হওয়া দুঃখজনক।

তারা বলছেন, পৃথিবীর এই ক্রান্তিকালে যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের তারাই প্রকৃত বীর। করোনা মোকাবিলার এই অগ্রসেনানীদের কোনোভাবেই উপেক্ষা নয় বরং সাদরে বরণ করা উচিৎ তাদের।

চিকিৎসক নেতাদের একজন ইকবাল আর্সেনাল বলেন, তাদের সাথে কথা বলে অধিকতর তদন্ত করে দেখা উচিত সত্যিকারে তারা যেটা বলছে সেটি সত্য কি না।

এদিকে দেশে এখন পর্যন্ত ৬২১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্য ৩৩ জন চিকিৎসক। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৪ জন।

আপনি আরও পড়তে পারেন