ইটভাটার কালো ধোয়ায় শতশত একর ধানের জমিতে চিটা

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের বৈরাটি ও পাঁচাশী গ্রামের শতাধিক কৃষকের সোনালী ধানের জমি এখন ধূসর, কালচে হয়ে গেছে। ধানের বদলের এসব জমিতে চিটা! ইটভাটার কালোধোয়া যেদিকে পড়েছে সেদিকেও এমন অবস্থা বলে কৃষকের অভিযোগ। শুধু ধান ক্ষেত নয়, ইটভাটার কালো ধোয়ায় ঝরে যাচ্ছে গাছের নতুন পাতাও, মরছে কলাগাছও।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ ও ক্ষতির কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল ঘটনা তদন্তে যান। এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার সাংবাদিকদের জানান, কৃষকের ফসল পুড়েছে ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায়। ক্ষতির পরিমাণও নির্ণয় করা হয়েছে। ইটভাটা মালিকরাও কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক নুর আলম বলেন, ফসলি জমিতে কোন অবস্থাতেই ইটভাটা চলতে পারে না। ইটভাটার ধোয়ায় ফসল ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. মুকতাদির হাসান জানান, শীর্ষ আসার পর পরগায়নের পূর্বে ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ার কারণে ধান চিটা হয়ে গেছে। ইটভাটার পাশে বেশিমাত্রায় হয়েছে, যতদূরে তত কমেছে ক্ষতির পরিমাণ।

বৈরাটি গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান আকন্দের পুত্র মোঃ রুবেল মিয়া জানান, শুধু ধানে চিটা হয়নি; কালো ধোয়ায় যেদিকে গেছে সেসব গাছের পাতাও ঝড়ে যাচ্ছে। একই গ্রামের আব্দুল হামিদের পুত্র কৃষক মোঃ খোকন মিয়া জানান, কলাগাছের পাতাও মরে যাচ্ছে।

পাঁচাশী গ্রামের আব্দুল বারেকের পুত্র মোঃ লিটন মিয়া জানান, কালোধোয়ায় পুড়ে গেছে কচিধানের ক্ষেত। এমন ক্ষতি দেখে অনেক কৃষক ক্ষেতের চিটা ধান হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শামছু ব্রিকসের মালিক সামছু ভূইয়া জানান, কৃষকরা দাবি করেছে ইটভাটার ধোয়ায় ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ফসলের ভুর্তুকি দেয়া হবে।

গৌরীপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন জানান, কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় বিষয়টি আমরাও দেখছি। সরজমিনে গেলে দেখা যায়, বৈরাটি গ্রামের কৃষক মোঃ রুবেল মিয়ার ৩৫শতাংশ, খোকন মিয়ার ৮০শতাংশ, আব্দুস শহীদ আকন্দের ৪০শতাংশ, মোঃ রফিক মিয়ার ২৫শতাংশ, ফারুক মিয়ার ২০শতাংশ, আব্দুল মান্নান আকন্দের ৩০শতাংশ, মোঃ মিজানুর রহমান সোহেলের ১০শতাংশ, নাঈম উদ্দিনের ৪০শতাংশ, আব্দুল মোতালেবের ৩৫শতাংশ, মোঃ আলমগীর হোসেনের ৮০শতাংশ, নাসির উদ্দিনের ৬০শতাংশ, মোজাম্মেল হোসেনের ৫০শতাংশ, হাসু মিয়অর ৮০শতাংশ, চান মিয়ার ২০শতাংশ, পাঁচাশীর মোঃ লিটন মিয়ার ৭০শতাংশ, নাজমুল হক খানের ৩০শতাংশ, মাসুদ মিয়ার ৩০শতাংশ, আব্দুর রশিদের ৪০শতাংশ, জনি মিয়ার ২০শতাংশ, আব্দুর রশিদ খানের ৭০শতাংশ, কামাল উদ্দিনের ২০শতাংশ, আমিরুল ইসলামের ১০শতাংশ, তারা মিয়ার ৫০শতাংশ, মগবুল হোসেনের ২০শতাংশ, সফুর উদ্দিনের ৭০শতাংশ, সামছুদ্দিনের ৫০শতাংশ, গিয়াস উদ্দিনের ৪০শতাংশ, আবুল মিয়ার ৫০শতাংশ, বোরহান উদ্দিনের ৫০শতাংশ, লিটন মিয়ার ৪০শতাংশ, আব্দুল আজিজের ৫০শতাংশ, মজিবুর রহমানের ৫০শতাংশ, শহিদ মিয়া ৪০শতাংশ, আব্দুল বারেকের ৬০শতাংশ, আবুল কাসেমের ৫০শতাংশ, মোহাম্মদ আলী ৭০শতাংশ জমির ফসল পুড়ে গেছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মৌসুমী ফসল উৎপাদনকারী ১১জন কৃষক।

আপনি আরও পড়তে পারেন