নওগাঁয় কৃষকদের ধান কেটে দিলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা 

স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁঃ
বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাসের থাবায় সারা বিশ্ব আবদ্ধ। এমতাবস্থায় নওগাঁয় জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোবারুল ইসলামের পরামর্শে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের পাশে দাড়িয়েছেন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তারা স্বেচ্ছাশ্রমে হতদরিদ্র ও বর্গাচাষিদের ধান কেটে বাড়ি তুলে দিচ্ছেন কৃষকদের ঘরে। এরই অংশ হিসেবে সোমবার জেলার আত্রাই উপজেলার হাটকালু পাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোহাম্মদ আবুল হোসেনের নেতৃত্ব সোনাডাঙ্গা গ্রামের মকবুল হোসেনের ২বিঘা জমির ধান কেটে ওই কৃষকের বাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মান্দা উপজেলার বুড়িদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভারতী মন্ডল, নকুল মজুমদার, নবকুমার ও দেবেন মন্ডল নামে চার গরীব কৃষকের ৪বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছে। নিয়ামতপুর সরকারি কলেজ ভাইস- প্রেন্সিপাল মমতাজ আলী মন্ডলের নেতৃত্বে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বালাহৌর গ্রামের বর্গাচাষী গৌতম সরকারের ২ বিঘা জমির ধান কেটে তুলে দিয়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১২০ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এদিন স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটায় অংশগ্রহণ করেন।  স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটায় কৃষকরাও খুশি।
আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ ফকির  বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় ধান কাটার শ্রমিক সংকটে ফসল ঘরে তোলা নিয়ে খুব শঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসে আমাদের জমির ধান কেটে দিলেন। এতে আমি খুব খুশি হয়েছি।
শিবপুর উচ্চ বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আফজাল হোসেন বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসারের পরামর্শে শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা হতদরিদ্র কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছি। কৃষকদের ধান যেন শ্রমিকের অভাবে মাঠে নষ্ট না হয় সে জন্য আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে তাদের ধান কেটে দিচ্ছি।
নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের  শিক্ষার্থী আব্দুল্লা আল বাকী বলেন, এখন আমাদের কলেজ বন্ধ তাই  পড়াশোনার চাপ নেই। স্যারদের পরামর্শে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে পেরে বেশ ভালো লাগছে।
নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের ভাইস-প্রেন্সিপাল মমতাজ আলী মন্ডল বলেন, এর মধ্যে দিয়ে যেকোন কাজকে ছোট করে না দেখা এবং শ্রমিক সংকটের সময় কৃষকের সহায়তায় পাশে থাকার জন্যই করা হয়েছে। এর ফলে অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হবে।  প্রয়োজনে স্বেচ্ছাশ্রমে তারা এধরনের কাজ অব্যাহত রাখবেন বলে জানান তিনি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোবারুল ইসলাম বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনায় সমগ্র নওগাঁ জেলায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে আমরা স্বেচ্ছায় একাজে যুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। আমাদের দেশের প্রধান চালিকা শক্তিই হচ্ছে ধান। এমন সংকটময় সময়ে যদি কারো ঘরে চাল থাকে তাহলে তাকে আর দুবেলা খাবার নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। তাই কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসার আগেই আমরাও যদি শ্রমিকদের পাশাপাশি মাঠের ধান কাটতে পারি তাহলে কৃষকরা দ্রুত তাদের কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। আর প্রত্যেক কৃষকের ঘরে আমাদের শিক্ষার্থী রয়েছে। কৃষকরা যদি সময়মত ধান ঘরে তুলতে না পারেন, তাহলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাহলে আমার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাই কৃষকদের বাঁচাতে এবং যাতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এজন্য  আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। সব কৃষকের ধান কাটা ও মাড়াই হওয়া পর্যন্ত আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মাঠে থাকবেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন