হিরোশিমার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্ববাসী, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ডাক

শিশুরা বাবার হাত ধরে স্কুলের পথে। কেউ আবার ঘুম থেকে উঠে নাস্তা না করেই ট্রেন ধরার জন্য হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়েছেন তার কর্মস্থলে যোগ দিতে। দোকানিরাও নানা পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন হিরোশিমার পথে, আয়-রোজগার ভালো হলে সামনে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর হাজারো স্বপ্ন নিয়ে।

কি হয় তারপর:
হিরোশিমায় তখন সকাল আটটা বেজে ১৫ মিনিট। কে জানতো সাজানো সংসার তাসের ঘরের মতো উড়ে যাবে। তাই হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ সময়ে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বিমান বি-২৯ থেকে নিক্ষেপ করা হয় ‘লিটল বয়’, যা বিশ্বের প্রথম ভয়ংকর পরমাণু বোমা। যার তাণ্ডবে মুহুর্তেই মৃত্যু হয় ৮০ হাজার মানুষের। তুলোর মতো উড়তে থাকে হিরোশিমার অবকাঠামো। চিকিসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও ৬০ হাজার মতো।

হিরোশিমার পর নাগসাকির ভয়াবহতা:
হিরোশিমার ভয়াবহ হামলার ঠিক তিনদিন পর ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরের ঘুমন্ত শিশু-নারী-পুরুষ, বেসামরিক নাগরিকদের উপর ফ্যাটম্যান নামে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান।

পরমাণু বোমার প্রতিক্রিয়ায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হয়েছেন সাধারণ মানুষ। যার ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। মূলত এই হামলার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের।

হিরোশিমোর বর্বরতার ৭৫ বছর:

সেই বিভীষিকাময় ঘটনার ৭৫ বছর পূর্তিতে বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি স্মরণ করছে জাপান। হিরোশিমায় সমবেত হন সেই দিনের বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে বেশ কয়েকজন। ইতিহাসের জঘন্য ঐ হামলায় ক্ষোভ এবং ঘৃণা জানিয়ে হতাহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন তারা। কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। বিগত বছরগুলির তুলনায় এবার করোনার কারণে লোকজনের আনাগোনা কম ছিল। তারপরও হিরোশিমা শান্তি স্মারক বা পিস মেমোরিয়ালে স্থানীয় সময় ৮টা ১৫ মিনিটে গান, কথা সব বন্ধ করে দেয়া হয়। নীরব থেকে স্মরণ করা হয় তাঁদের, যাঁরা ৭৫ বছর আগে মারা গেছিলেন পরমাণু বোমার তাণ্ডবে।

পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ডাক:
বিশ্বে হানাহানি বন্ধে এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ডাক দিয়েছেন আগতরা। বিশ্ব থেকে পরমাণু অস্ত্রের অস্তিত্ব মুছে ফেলার আওয়াজ আসে তাদের কণ্ঠে।

দিবসটি উপলক্ষে উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই। উগ্র জাতীয়তাবাদই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ উল্লেখ করে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান মাতসুই।

পারমাণবিক অস্ত্র কিংবা কোভিড-১৯ এর মতো মানুষ-সৃষ্ট ও প্রাকৃতির দুর্যোগের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী মানুষের সম্মিলিত লড়াইয়ের ওপর জোর দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।

বোমা হামলার এত বছর পরও শহর দুটোতে জন্ম নিচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু। ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য রোগে ভুগছে বহু মানুষ। হামলার সাত দশক পার হয়ে গেলেও ভয়াল সেই দিনের কথা এখনও ভোলেনি সাধারণ মানুষ।

সাধারণ মানুষের কি বলছে:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঐ হামলার পৃথিবীতে এ ধরনের নৃশংসতা দেখতে চান না বিশ্ববাসী। একই সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ এবং এর প্রতিযোগিতা থেকে সড়ে না আসলে এমন ভয়াবহতার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন তারা।

সূত্র: বিবিসি, ডয়চে ভেলে

আপনি আরও পড়তে পারেন