এমপি নিক্সনের বিরুদ্ধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসনের ওপর চটেছেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন)।

চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শনিবার সন্ধ্যায় এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য স্থানীয় প্রশাসনকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেটরা ভবিষ্যতে তার নেতাকর্মীদের কোনো কাজে বাধা দিলে হাত-পা ভেঙে দেয়া হবে।’

এমনকি নির্বাচন কমিশন ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়ায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকারের কাছে কৈফিয়ত তলব ও তাকে গালাগাল করেন।

এ বিষয়টি নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছেন ফরিদপুরের ডিসি অতুল সরকার।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে।

সোমবার ইসিতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ১০ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় সহকারী রিটার্নিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়।

এ বিষয় নিয়ে হুমকি, মিথ্যা, মানহানিকর ও অশালীন বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র) মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন), চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের বিজয়ী চেয়ারম্যান মো. কাউছার এবং তার অনুসারীরা।

তাদের এহেন আচরণ উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা-২০১৬ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন মর্মে প্রতীয়মান হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়ায় তার (ডিসি) কাছে টেলিফোনে কৈফিয়ত তলব করেন মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন)।

ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়ার কারণে তার সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয় হলে মহাসড়ক অবরোধসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন তিনি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিক্সন চৌধুরীর সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ১১ হাজারের বেশি ভোটে বিজয় লাভ করে।

কিন্তু রাত সাড়ে ৮টার দিকে নির্বাচন-পরবর্তী জনসভায় নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিজয়ী প্রার্থী মো. কাওছার ও সংসদ সদস্য ও তার অনুসারীরা ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েনের কথা উল্লেখ করে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য কোনোভাবেই স্থানীয় নির্বাচনে সম্পৃক্ত হতে পারেন না। তিনি নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন।

বিধিতে বলা আছে, নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোনো সভা-সমাবেশ করা যাবে না। কিন্তু নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় তিনি জনসমাবেশ করেছেন। এটা নির্বাচন আইনের লঙ্ঘন।

প্রসঙ্গত, এর আগে ওই সমাবেশে নিক্সন বলেন, ‘প্রশাসনের মধ্যে লুকাইয়া থাকা ওই জেলা প্রশাসক এ নির্বাচনে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে নৌকার কর্মীদের অ্যারেস্ট করছে, পিটাইছে ওই জেলা প্রশাসক।’

জেলা প্রশাসক একজন রাজাকার’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তা না হলে মাত্র চারটি ইউনিয়নে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে আমার নেতা-কর্মীদের যেখানে পাইছে সেখানে আমার নেতাকর্মীদের উপর হামলা করা হয়েছে।’

জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি যত বড় উপদেষ্টার নাতি হোন না কেন আপনি নিক্সন চৌধুরীর সাথে চোখ রাঙাইয়া কথা বলবেন না।

আমি যদি আমার জনগণ নিয়া আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামি, আমি যদি নেতা কর্মীদের নিয়ে নামি তবে আপনি এক মিনিট দম নেওয়ার সুযোগ পাবেন না।

এছাড়া, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করায় তার একজন কর্মীকে স্বল্প সময়ের জন্য আটক করায় চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে গালাগাল করেন নিক্সন চৌধুরী। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন।

রোববার দুপুরে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ফরিদপুর শাখার জরুরি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ফরিদপুরের ডিসি, ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে অশালীন আচরণ এবং দুর্ব্যবহার করার বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়।

বৈঠকে বলা হয়, শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিক্সন চৌধুরীর সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ১১ হাজারের বেশি ভোটে বিজয় লাভ করেন।

কিন্তু রাত সাড়ে ৮টায় নির্বাচন পরবর্তী জনসভায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিজয়ী প্রার্থী মো. কাওছার ও সংসদ সদস্য এবং তার অনুসারীরা ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েনের কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলেন।

নিক্সন চৌধুরীর অনুসারীরা বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেন যা একজন সংসদ সদস্য বা সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে অকল্পনীয়।

সভায় উপস্থিত সবাই একমত হন যে, সরকারের সিদ্ধান্ত ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসনের প্রতি এহেন আচরণ অত্যন্ত অবমাননাকর।

আপনি আরও পড়তে পারেন