বৈবাহিক ধর্ষণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সংজ্ঞায় বৈবাহিক ধর্ষণের উল্লেখ না থাকায় এই ধারার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। চারটি মানবাধিকার সংগঠন— ব্লাস্ট, ব্র্যাক এইচআরএলএস, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও নারীপক্ষ রোববার (১ নভেম্বর) যৌথভাবে এই রিট আবেদন করে।

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিনের বেঞ্চে এই আবেদন করা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান ধর্ষণ আইনে দণ্ডবিধির ধারাটি লৈঙ্গিক সমতার প্রশ্নে বৈষম্যমূলক। এ ছাড়া, বিবাহিত নারীদের (তেরো বছরের বেশি বয়সী) ক্ষেত্রে এই বিধান সংবিধানের ২৭, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে।

আবেদনে দণ্ডবিধির ধর্ষণ সংক্রান্ত ৩৭৫ ধারা এবং ধর্ষণের সাজা সংক্রান্ত ৩৭৬ ধারা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

টাঙ্গাইলে চৌদ্দ বছরের এক কিশোরীর বিয়ের এক মাসের মধ্যে স্বামীর দ্বারা যৌন নিপীড়নে মারা যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই রিট আবেদন করা হয়।

এদিকে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রোববার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র নিউজরুম এডিটর ওয়াহিদা আফসানার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জাহিদ চৌধুরী জনি এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।

নোটিশে বৈবাহিক ধর্ষণ, অর্থাৎ ম্যারিটাল রেপকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে আইনের সংশোধনী চাওয়া হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক সচিব, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হবে বলেও জানিয়েছেন আইনজীবী।

নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রচলিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এবং দণ্ডবিধির কোথাও বৈবাহিক জীবনে স্বামী কর্তৃক ধর্ষিত হলে কোনো আইনি পদক্ষেপ নারীরা নিতে পারেন না।

এ ছাড়া সামাজিক বিবেচনায় ওই নারী কখনো এ বিষয়টা নিয়ে জনসমক্ষে আসতেও পারেন না। অথচ গবেষণায় এসেছে যে, এ বছর ৬৪ জেলার মধ্যে ২৭ জেলাতেই বৈবাহিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। জাতিসংঘ হিউম্যান রাইটস কমিশন ১৯৯৩ সালে বৈবাহিক ধর্ষণ, অর্থাৎ ম্যারিটাল রেপকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০টি দেশের বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে আইন রয়েছে জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বাংলাদেশে বৈবাহিক ধর্ষণ-সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো আইনি বা শাস্তির বিধান রাখা হয়নি।

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বৈবাহিক সম্পর্ক নেই এমন কোনো ব্যক্তি ধর্ষণ করলে তার শাস্তির বিধান রয়েছে। অথচ পারিবারিক নির্যাতনের মাধ্যমেও যে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে, তাদের জন্য আইনের সুরক্ষা নিশ্চিতে আইন সংশোধন এখন সময়ের দাবি উল্লেখ করে নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান নোটিশ পাঠানো আইনজীবী।

আপনি আরও পড়তে পারেন