চুয়াডাঙ্গায় ভুয়া অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি

চুয়াডাঙ্গায় ভুয়া অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি

চুয়াডাঙ্গায় ভুয়া অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি চাঁদাবাজ নাঈম গ্রেপ্তার; ভুক্তভোগী পরিবারগুলো গোপনে তথ্য দিলেও সর্ব্বচ্চ সেবা দেবে পুলিশ, ওসি আবু জিহাদ

আফজালুল হক, চুয়াডাঙ্গা (০৩-১১-২০):
চুয়াডাঙ্গায় ভুয়া গলা কাটা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ক্লিপ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে সমভ্রান্ত পরিবারকে জিম্মি করে কয়েক দফা চাঁদাবাজির ঘটনায় ওই চক্রের এক সদস্য আকন্দবাড়ীয়ার নাঈম হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পুলিশ। (২রা নভেম্বর) সোমবার সকালে সদর উপজেলার আকন্দবাড়ীয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া আসামী নাঈম হাসান (৩০) চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আকন্দবাড়ীয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের এক ব্যক্তি তার মেয়েকে ভুয়া অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবির ভয় দিখেয়ে চাঁদাবাজীর ঘটনায় সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৬ অক্টোবর তার মেয়ের মোবাইল ফোনে অজ্ঞাতনামা একটি নাম্বার দিয়ে এক ব্যক্তি গলা কাটা ভুয়া অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবির কথা বলে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন। মান সম্মানের কথা ভেবে প্রথমে ওই ৫ হাজার টাকা দিলেও পরে আরও দু’ দফা ৫ হাজার ও ২ হাজার ৪০ টাকা দেওয়া হয় প্রতারক চক্রটিকে। মোট ১২ হাজার ৪০ টাকা দেওয়ার পরও ওই প্রতারক চক্রটি আরও ১ লাখ টাকা দাবী করেন। গত ৩১ অক্টোবর দাবীকৃত ওই ১ লাখ টাকা আনতে গেলে মেয়েটি কৌশলে চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন। এ সময়
স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে প্রতারক চক্রটি পালিয়ে যায়। তবে স্থানীয়রা নাঈম, হাসান নামে ওই প্রতারককে চিনতে পারেন। বিষয়টি পুলিশকে জানালে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পুলিশ সোমবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে সংশ্লিষ্ট মামলাতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) সামিম হাসান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করাসহ জানায় ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন মানুষের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ডাউনলোড করে তা এডিট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে নাঈমসহ ওই প্রতারক চক্রটি। পরে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন উপায়ে তার আশ পাশের এলাকার সমভ্রান্ত পরিবারসহ উঠতি বয়সি মেয়েদের ছবি সংগ্রহ করে ওই গলা কাটা ছবি বা ভিডিও ক্লিপ জুড়ে দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলো তারা। পরে ওই মেয়েদের মোবাইল নাম্বার জোগাড় করে কৌশলে তাদের ফোন দিয়ে বলতো, আপনার একটি অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি পাওয়া গিয়েছে এখন এটা কি করবো। বর্তমানে যে সকল উঠতি বয়সি মেয়েরা বন্ধুদের সাথে আশে পাশে ঘুরতে যাই তারা এ ধরণের ফোন পেয়ে প্রথমেই ভয় পেয়ে যায়। তাদের কাছে প্রতারণা করাটাও সহজ ছিলো এই প্রতারকদের। আবার যে সকল মেয়েরা এ ধরনের ফোন পেয়ে প্রতিবাদ করা শুরু করনে, তখন প্রতারকরা সরলভাবে স্বীকার করে নেন এটা গলা কাটা ছবি বা ভিডিও ক্লিপ। অন্য কেও এডিট করে নেটে ছেড়েছে। টাকা না দিলে তারাও এডিট করা এই ছবিটিই আবারও নেটে ছেড়ে দেবে বলে ভয় ভীতি দেখানো হতো। এক প্রকার বধ্য হয়েই প্রতারক চক্রটিকে টাকা দিতে হয়েছে ভুক্তভোগী পরীবারকে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও জানান, গত কয়েক মাস পূর্বে মেহেরপুর থেকে একটি মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়, আর ওই হারানো ফোনটি হাতে পেয়ে নাঈম হাসান চক্রটি প্রতারণার ফাঁদ পাততে শুরু করেন। পরে মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করতে স্বক্ষম হয় সদর থানার পুলিশ। চাদাবাজ নাঈম হাসানকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ আবু জিহাদ খান বলেন, এ ধরণের অনেক পরিবার তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ার ভয়ে পুলিশ কে জানান না, যেটা মোটেও ঠিক না বলে তিনি মনে করেন। ফলে চক্রটি পরবর্তীতে বড় বড় অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করে বসে। এ সকল ভুক্তভোগী পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গোপনে হলেও আপনার পুলিশকে তথ্য দেন। আপনার সামাজিক মর্যাদার সর্ব্বচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

আফজালুল হক
চুয়াডাঙ্গা

আপনি আরও পড়তে পারেন