৩০ বছরের স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক আতিক

৩০ বছরের স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক আতিক

দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি.
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ঢাকা-বান্দুরা আন্তঃসড়কে স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক আতিকুর রহমান খান (৬০)। বর্তমানে সে নবাবগঞ্জের বান্দুরা ব্রীজের ঢালে যান চলাচল নিয়ন্ত্রন করেন। পরিবার কিংবা নিজের কথা চিন্তা না করে, দিনের প্রায় ৮ঘন্টা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে বান্দুরা ব্রীজের ঢালে গিয়ে দেখা যায়, বান্দুরা ব্রীজ সরু হওয়ায় প্রতিনিয়তই যানজট লেগেই থাকে। এরমধ্যে অটোর চলাচল বেশি। এক প্রান্ত থেকে ট্রাক এলে অন্য প্রান্ত থেকে মানুষ হেটে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

তাই মানুষ যাতে অল্প সময়ে বাড়িতে ফিরতে পারেন সর্বদা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই সেচ্ছাসেবী ট্রাফিক। একদিকে যানবাহন অন্যদিকে মানুষের ভীড় সব মিলিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয় দিনের প্রায় ৮ঘন্টা।
সেচ্ছাসেবী ট্রাফিক আতিক বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এখানে ট্রাফিকের কাজ করি। বয়স প্রায় হয়েছে তাই আগের মত আর পরিশ্রম করতে পারি না। শুধু মাত্র বড় ট্রাক কিংবা প্রাইভেট কার থেকেই মাঝে মাঝে কিছু বকসিস পাই। প্রতিদিন কাজ শেষে নিজের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানের গিরিনগর গ্রামে চলে যাই। সকাল হলে আবার কাজে ফিরি।

জানা যায়, ৮০ দশকের দিকে স্বেচ্ছা ট্রাফিকের কাজে লিপ্ত হন আতিক। শুরুতে মরিচা ব্রিজের ঢালে বাসের লাইন ম্যানের কাজ করতেন তিনি। পরে বাস লাইনের পরিধি বেড়ে স্ট্যান্ড মরিচা হতে বান্দুরায় চলে আসে। তখন ‘বান্দুরা টু জিনজিরা’ নবাবগঞ্জ বহর নামে বাস চলাচল করত। মূলত এই বাসের যানজট নিরসনেই কাজ করতেন তিনি। পরবর্তীতে বান্দুরা ব্রিজ নির্মানের পর, ব্রিজের ঢালে যানজট নিরসনে বিনা পয়সায় সেচ্ছাসেবী ট্রাফিক হয়ে এখনও পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

সম্প্রতি আতিকের নিজ বাড়ি সিরাজদিখান উপজেলার গিরিনগরে গিয়ে দেখা যায়, সেদিন অসুস্থ্য থাকায় কাজে আসতে পারেননি। বয়সের ভার অন্যদিকে নানা রোগ থাকায় এখন তিনি বেশির ভাগ সমই অসুস্থ্য থাকেন। ভাঙ্গা দুটি টিনের ঘর, এক ছেলে, নাতি, ছেলের বউ এবং স্ত্রী নিয়ে থাকেন তিনি।

ছেলে নাজমুল ভাড়ায় সিনএজি চালায়। দিন শেষে জমা খরচ দিয়ে যা থাকে তাই দিয়ে কোনমতে সংসার চলে তাদের। মাঝে মধ্যে ইনকাম না হলে বাড়িতে তাদের চুলাও জ্বলে না। হয়তো সেই দিনটি না খেয়েই পার করতে হয় আতিক ও আতিকের পরিবারের। কিন্তু তারপরেও কোনো আফসোস নেই আতিকের স্ত্রীর। ঠিক মত খাবার খেতে না পারায় পরিবারের প্রায় সদস্যের দেহে নানা রকম রোগ বাসা বেঁধেছে।
আতিকের স্ত্রী নাসিমা জানান, আমার বিয়ের আগে থেকেই তিনি এসব কাজ করেন। কিন্তু তাকে কখনো বাধা দেয়নি। কিন্তু আমি আর পারছি না। তাই শেষ বয়সে আমার স্বামীর জন্য সরকারের কাছে একটু সুব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।

আতিকের প্রতিবেশি মো. শহিদ বলেন, আতিক ভাইকে দীর্ঘদীন ধরে আমি চিনি। আমিও এক সময় যমুনা পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। তখন থেকেই তাকে রাস্তায় কাজ করতে দেখতাম। সরকারের পক্ষ হতে তাকে যদি একটা কর্মস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, অন্তত শেষ বয়সে একটু ভালভাবে পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারবেন তিনি।
যমুনা পরিবহনের পরিচালক চন্দন মন্ডল জানান, আমরা মালিক পক্ষ হতে তাকে সহায়তা করতে চাই। কিন্তু আমাদের সহায়তায় তো তার পেট বাঁচবে না। তাই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু এব্যাপারে বলেন, বিষয়টি আমার দৃষ্টি গোচর হয়েছে। জানার পর পরই তার পরিবারের জীবনধারণের জন্য সামান্য বেতনের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছিলাম। স্থানীয় পরিবহন সংস্থা তা দেয়ার আশ^াস দিয়েছিলেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন