কুষ্টিয়ায় অবৈধভাবে ২১টি বালুমহালের বালু উত্তোলন

কুষ্টিয়ায় অবৈধভাবে ২১টি বালুমহালের বালু উত্তোলন

শাহাজাদা বেলাল স্টাফ রিপোর্টার


কুষ্টিয়া জেলার ২১টি বালুমহাল থেকে দিনে অন্তত পাঁচ লাখ ঘনফুট মোটা বালু তোলা হয়। আর এসব বালু যায় খুলনা ও বরিশাল বিভাগ সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। 


এদিকে কুষ্টিয়ায় ২১টি বালুমহালে মামলা জটিলতায় দশ বছর ধরে ইজারা বন্ধ রয়েছে। তবে ইজারা বন্ধ থাকলেও বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন। বালু খেকোরা প্রতিনিয়তই সরকারি নিষেধাজ্ঞা অম্যান্য করে স্যালো ইঞ্জিন চালিত ও ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে চলেছে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। 

গত দশ বছরে সরকার অন্তত বালু মহাল থেকে দুইশ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীনসহ বন্যায় বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙনের আশংঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আর এই বালুকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে প্রভাবশালীরা নৌকাপ্রতি এক হাজার ও ট্রলিপ্রতি দুই হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। 


শুধু বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থেমে থাকেনি এই চক্রটি। নদীপথেও রয়েছে চ্যালেঞ্জ চার্জ সেখানেও গুনতে হয় টাকা। সব মিলিয়ে একটি নৌকা ও ট্রলিপ্রতি নেওয়া হয় ৩/৪ হাজার টাকা। আর এই অর্থগুলো ভাগ-বাটোয়ারা হয় স্থাণীয় প্রভাবশালীদের মধ্যে। 


মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া বালুঘাটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, পশ্চিম বাহিরচর ও রানাখড়িয়া-তালবাড়িয়া বালু ঘাটে পদ্মা নদী থেকে প্রতিদিন নির্মাণ কাজের সর্বোচ্চ মান সম্মত প্রায় পাঁচ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন ও সরবরাহ হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। জানা যায়, ২১টি বালুমহালের মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাহাদুরখালী, মহানগর, চকুয়াদামা ও শুকদেবপুর, জুগিয়া মৌজার বালুমহাল। ভেড়ামারা উপজেলার পশ্চিম চরদাদাপুর, চরগোলাগনগর-আরাজীসাড়া ও রূপপুর বালুমহাল। 


মিরপুর উপজেলার ঘোড়ামারা-রানাখড়িয়া, চরমাদিয়া, পশ্চিম দাদাপুর, মিনাপাড়া ও চর তালিবাড়িয়া বালুমহাল। কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া, জয়নাবাদ-ছেঁউড়িয়া, সেরকান্দি-আগ্রাকুন্ডা-তেবাড়ীয়া-বরুড়িয়া, পাথরবাড়ীয়া-উত্তর হিজলাকর-এনায়েতপুর, গোবিন্দপুর, ভাড়রা-এলঙ্গী বালুমহাল।

খোকসা উপজেলার চাঁদট-ভবানীপুর-গণেশপুর-কোমরভোগ এবং ওসমানপুর বালুমহাল। ২০০৮ সালে স্থানীয় জেলা প্রশাসন থেকে সর্বশেষ বালুমহালগুলোর ইজারা ডাকা হয়। এরপর থেকে আর কোনো ইজারা দেয়া সম্ভব হয়নি।


জেলা ম্যাজিস্ট্রেট-জেলা প্রশাসক ক্ষমতা বিধিমালা মতে, নদী, পাহাড়, খনিজ সম্পদ, বনভূমি রাষ্ট্রের সম্পদ। যার বৈধ মালিক হচ্ছেন রাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিটি জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসক। নির্দিষ্ট সময়ে ধার্যকৃত টাকায় খোলা দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে প্রতি বছর নদী, ঘাট, হাট, খনিজসম্পদ তার কাছ থেকে আগ্রহী প্রার্থীকে ইজারাগ্রহণ করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে কোনোরূপ অবৈধভাবে দখল-জোরপূর্বক ইজারা না নিয়ে উত্তোলিত সম্পদ বিক্রি করা শুধু অপরাধই না রীতিমতো রাষ্ট্রদ্রোহী। কুষ্টিয়ার ২১টি বালুমহাল রাষ্ট্রের সম্পদ। এ সম্পদকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের নিযুক্ত সরকারি কর্মচারী থেকে সব সচেতন নাগরিকের। তাই এ সময়ে দাবি উঠেছে ওই দখলদারদের হাত থেকে কুষ্টিয়ার এ সম্পদকে রক্ষা করতে হবে।


এবিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মামলা জটিলতায় এসব বালুমহালে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিরসন করে খুব শীঘ্রই আমরা সরকারি রাজস্ব আয় নিশ্চিত করতে পারব। সেভাবেই আমরা এগুচ্ছি।

আপনি আরও পড়তে পারেন