বাড়ছে শিক্ষার্থীদের অমনোযোগীতার হার, দুশ্চিন্তায় অভিভাবকগণ

বাড়ছে শিক্ষার্থীদের অমনোযোগীতার হার, দুশ্চিন্তায় অভিভাবকগণ

জানুয়ারি ১৫,২০২১ইং;সকাল ৯টাঃ দেখতে দেখতে  চলে গেল অভিশপ্ত ২০২০,সব দুঃখ ও তিক্ততাকে ভুলে নতুন উদ্যম ও আশার আলোর সাথে সকলে স্বাগত জানালো নতুন  ইংরেজি ২০২১ বর্ষকে।

চলমান এই করোনা ভাইরাস মহামারীর ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও নমুনা পরীক্ষায় বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর গবেষকদল দিনরাত কাটিয়ে দিচ্ছে ল্যাবে। থেমে নেই আমাদের দেশের গবেষক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও।

এদিকে অনেক আগেই দেশে লকডাউন শিথিল হলেও আপাতত নতুন বছরের শুরুতেই খুলছে না কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যাতে কোনো প্রকার বিপর্যের সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে যাতে ঘরে বসেই শিক্ষার্থীরা সিলেবাস অনুসারে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন এ্যাসাইনমেন্ট ও লিখিত  পরীক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ও মেধা মূল্যায়ন চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে এসবের পরেও কি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম তথা জ্ঞান অর্জন ও মেধার  মূল্যায়ন যথাযথভাবে হচ্ছে? – প্রশ্ন এখানেই থেকে যায়। দেখা যাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী প্রশ্নের উত্তর দেখে দেখে লিখছে এবং প্রদত্ত এ্যাসাইনমেন্টগুলো বিশেষ করে গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজির মত কঠিন বিষয়গুলো না বুঝেই ইন্টারনেট থেকে মিলিয়ে হুবহু লিখে নিচ্ছে। আর এসবের ভিত্তিতেই ফলাফল প্রকাশ করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।

দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার এই যাত্রায় সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর।শুধু লেখাপড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত নয় বরং মানসিকভাবেও ভাল নেই তারা। অনেক অভিভাবকই তাদের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ালেও,পড়ায় যেন ঠিক আনন্দের স্বাদ খুঁজে পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনই একটি শিক্ষার্থীর জন্য নিজেকে বাস্তবিক ও সামাজিক জীবনে আনন্দের সহিত নিজের মূল্যবোধ ও নৈতিকতাগুলোকে ক্ষেত্র বিশেষে বিকাশের আদর্শ সময়। এই জন্যে বিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম বলেছেন বিশ্লেষক ও অভিভাবগণ। আর অভিভাবকদের এই চিন্তার বিষয় থেকে বেরিয়ে আসার সহজ কিন্তুু গুরুত্বপূর্ণ ৬টি উপায় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের জনপ্রিয় শিক্ষামূলক অ্যাপ “বাইযুস দ্যা লার্নিং অ্যাপ” এর চিফ স্ট্রাটেজি অফিসার আঙ্কিতা কিশোর। তার এই পরামর্শ ‘Ace your learning from home’ শিরোনামে তুলে ধরেছে ‘The Tribune’ নামক একটি  অনলাইন পোর্টাল। সেখানে যে বিষয় গুলোকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো-

পড়ার নির্দিষ্ট স্থান: সারাদিন ঘরে বন্দি থেকে পড়াশোনার মনোযোগ ধরে রাখা সহজ কথা নয়। তাই ঘরের একটি নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিতে হবে পড়ার জন্য, যেখানে নিরিবিলিতে পড়ায় মনোযোগ দেওয়া যায়। আর বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সেখানে ভালোমানের ইন্টারনেট সংযোগও থাকা চাই।

বিষয়বস্তুর ওপর দখল বাড়ানো: শিক্ষার্থীদের হাতে এখন অফুরন্ত সময়, যার বেশিরভাগই হয়ত অপচয় হয়ে যাচ্ছে হতাশায়। তবে পরিস্থিতিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। বিভিন্ন বিষয়ের যে কঠিন অংশগুলো রপ্ত করা হয়নি তা এখন সময় নিয়ে অনুশীলন করার সুযোগ আছে। এজন্য বিষয়বস্তু আরও ভালোভাবে বুঝতে হবে। বোঝার ঘাটতি থাকলে নিঃসংকোচে প্রশ্ন করতে হবে শিক্ষকদের। ক্লাস, কোচিং, প্রাইভেট, পরীক্ষার চাপ এখন নেই। তাই ইন্টারনেট ঘেটে বিভিন্ন বিষয়ে বাড়তি জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ আছে।

ভিডিও দেখা: বিশেষজ্ঞরা বলেন, পড়ে শেখার চাইতে দেখে শেখা দ্রুততর। কারণ চাক্ষুস কোনো ঘটনা থেকে মস্তিষ্ক ৬০ হাজার গুন দ্রুত গতিতে জ্ঞান আহরণ করতে পারে। আর বই পড়ার চাইতে ভিডিও দেখা তুলনামূলক বেশি মজাদার একথা অনেকেই নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অসংখ্য শিক্ষামূলক ভিডিও আছে যা শেখার প্রক্রিয়াকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে, আগ্রহ বাড়ায়। বোঝানোর পদ্ধতির ওপর জ্ঞান অর্জন অনেকটা নির্ভরশীল। একই বিষয়কে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করে ভিডিও তৈরি করতে পারেন। ফলে আপনার হাতের মুঠোর আছে একাধিক শিক্ষক। এই অফুরন্ত সময়ে সব শিক্ষাকেই কাজে লাগানো সম্ভব।

রুটিন: পড়াশোনায় শৃঙ্খলা থাকা অত্যন্ত জরুরি। আর সেজন্য প্রথমেই পড়াশোনার রুটিন তৈরি করতে হবে। এই রুটিন হতে হবে বাস্তবমুখী এবং সেই রুটিন মেনে চলতে হবে প্রতিদিন, কঠোরভাবে। নতুন কিছু শেখা, তা অনুশীলন করা এবং তা পুনরালোচনা করা সবকিছুর জন্যই সময় ভাগ করা থাকতে হবে রুটিনে।

চারপাশ থেকে শিক্ষা নেওয়া: জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া শুধু বইয়ের পাতা থেকে পরীক্ষার খাতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। দৈনন্দিন জীবনযাত্রা থেকেও শেখার আছে অনেক কিছু, যা ক্ষেত্র বিশেষ পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই চারপাশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানার আগ্রহ থাকতে হবে। প্রশ্ন করতে হবে। ইন্টারনেটে তা নিয়ে আরও জানার চেষ্টা করতে হবে। আর শুধু জানলেই হবে না, তা মাথায় রাখতে হলে লব্ধ জ্ঞানকে হাতেনাতে কাজে লাগানোর চেষ্টাও থাকতে হবে।  

অনুশীলন, আরও অনুশীলন: নতুন কিছু শেখার পর তাতে দক্ষ হয়ে উঠতে অনুশীলনের বিকল্প নেই। যত বেশি অনুশীলন করা হবে, দক্ষতা ততই বাড়তে থাকবে। বারবার অনুশীলনে মাধ্যমে সেই কাজটি আরও সহজে করার পথও বের করে ফেলতে পারেন। তাই অনুশীলনেই বিকল্প নেই।

আপনি আরও পড়তে পারেন