দেশে আনা ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ?

দেশে আনা ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ?

ইতিহাসের বৃহত্তম টিকাদান শুরু হয়েছে। আর বাংলাদেশও কয়েক দিনের মধ্যে কোভিড ভ্যাকসিন গ্রহণের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এই অবস্থায় অতি আবেগী এই জাতি আবারও দ্বিধাবিভক্ত। 

ব্লুমবার্গের সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, ৫১টি দেশে ৫ কোটি ৪৭ লাখের বেশি ডোজ দেওয়া হয়েছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের মধ্যে প্রথম গত ১৪ ডিসেম্বর থেকেই টিকা দেওয়া শুরু হয়েছিল এবং ব্লুমবার্গের ডেটা অনুসারে এখন পর্যন্ত ২ মিলিয়ন শট দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে, প্রতিদিন গড়ে ৯ লাখ ১২ হাজার ৪৯৭ ডোজ দেওয়া হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে?
১. বাংলাদেশে কোন ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে?
২. এটি কোন ধরনের ভ্যাকসিন? 
৩. সাইড ইফেক্ট কি কি হতে পারে?
৪. বয়স্কদের কি রিস্ক বেশি?
৫. ইমিউনিটি কমে যায় এ ধরনের রোগে যারা ভুগছেন বা ইমিউনিটি কমে যায় এমন ওষুধ সেবন করছেন, তাদের ঝুঁকি কেমন?

প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এক্ষেত্রে অথেনটিক পেপার খুব কম থাকায়, অনেক তথ্য নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্যবার্তা থেকে। এখানের তথ্যে কোন ভুল, ঘাটতি থাকলে, সংশোধন করে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব। বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড ভ্যাকসিন।

কীভাবে কাজ করে? 

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি এই টিকাতে অ্যাডেনোভাইরাস নামে এক ধরনের ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। জিনগতভাবে ভাইরাসটিকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছিল যাতে এটি কোনও করোনাভাইরাস প্রোটিনের জন্য একটি জিন বহন করে, যা তাত্ত্বিকভাবে একজন ব্যক্তির প্রতিরোধ ব্যবস্থাটিকে আসল করোনাভাইরাসকে চিনতে শেখায়। 

সোজা কথায় একটি ভেক্টর ভাইরাস এখানে টিকা হিসেবে কাজ করে, যার ফলে কোভিড মানুষের শরীরের কাছে আসলেই ইমিউনিটি সিস্টেম জাগ্রত হয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা শুরু করে দেয়। 

এর সঙ্গে ফাইজার/বায়োএনটেক এবং মডার্না ভ্যাকসিনগুলোর পার্থক্য, তারা একটি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যেখানে মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA)-এর ভূমিকা রয়েছে। 

এটি কতটা ভালো?

ব্রিটেন এবং ব্রাজিলের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন ফলাফলগুলো ভ্যাকসিনটিকে ৭০.৪% সফল মনে করেছে। ২০ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক এই পরীক্ষাগুলিতে জড়িত ছিলেন এবং তাদের অর্ধেক ছিলেন যুক্তরাজ্যে। যারা দুটি সম্পূর্ণ ডোজ পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে ভ্যাকসিনটি ছিল ৬২% সফল। প্রাথমিকভাবে অর্ধ-ডোজ হিসাবে এবং দ্বিতীয় ধাপে সম্পূর্ণ ডোজ দেওয়া হয় এবং পরে ৯০% এ উন্নীত করার সম্ভাবনা আছে।

এটি কতটা নিরাপদ?

গবেষকরা যখন কোভিড-১৯ এর জন্য ChAdOx1 মানিয়ে নিয়েছিলেন, তাদের প্রাথমিক ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলো কোনও প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায়, স্বেচ্ছাসেবীরা স্নায়বিক সমস্যার সম্মুখীন হলে পরীক্ষার জন্য দুবার বিরতি দিতে হয়েছিল। 

২৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর একটি ডাটাবেস থেকে এসেছে যারা এপ্রিলের পর থেকে ইউকে, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলোতে অংশ নিয়েছিল। ভ্যাকসিন সম্পর্কিত কোনও গুরুতর সাইড ইফেক্ট পাওয়া যায়নি। 

সাইড ইফেক্ট

সাধারণত যে কোনো ভ্যাকসিন নিলেই শরীর জ্বরসহ সাধারণ কিছু উপসর্গ তৈরি করে, যা স্বাভাবিক রিয়েকশন। এ ক্ষেত্রেও তাই। তবে তীব্র সাইডইফেক্ট যেমন ট্রান্সভার্স মাইলাইটিসসহ কিছু স্নায়ুরোগ দেখা দিয়েছিল কয়েকজনের ক্ষেত্রে, যা সংখ্যায় খুব কম। 

এটি কি বয়স্কদের জন্য নিরাপদ?

প্রবীণরা কোভিডের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, তাই বিজ্ঞানীরা বয়স্ক পরীক্ষার স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে ভালো প্রতিক্রিয়া দেখতে আগ্রহী ছিলেন। অক্সফোর্ডের ডেটা থেকে জানা যায় যে অল্প বয়স্ক এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া প্রায় একই দেখা গেছে।

উল্লেখ্য যে, অনেক রোগের ভ্যাকসিন প্রবীণদের ক্ষেত্রে কম কার্যকর, কারণ ইমিউন সিস্টেমটি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পায়। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার রোগ বা ঔষধ গ্রহণকারীর জন্য নিরাপদ? 

সাধারণত live ভ্যাকসিনগুলো immunity কমে গেলে উল্টো শরীরে রিয়েকশন করতে পারে। এস্ট্রাজেনেশিয়া ভ্যাকসিন যেহেতু এই ভেক্টর ভাইরাস ব্যবহার করছে, যদিও তা এক্টিভ ভাইরাস নয়, তারপরেও এ প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। 

হেলিও রিউমাটোলজির প্রধান মেডিকেল সম্পাদক এবং ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ক্লিনিকাল ইমিউনোলজির আরজে ফ্যাসনমিয়ার সেন্টারের প্রধান লিওনার্ড ক্যালব্রিজের মতো অনেকেই এই রোগ এ ধরনের জনগোষ্ঠীকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে সে সম্পর্কে ‘বড় প্রশ্ন’ রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন। তারপরেও উনি আশার আলোই দেখছেন বলে ভাবছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন