কাস্টিং কাউচ সারা পৃথিবীতেই রয়েছে। এবার এ দেশের টিভি মিডিয়ার প্রযোজকদের অনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে বাকযুদ্ধে মেতেছেন দুই লাক্স তারকা ফারিয়া শাহরিন ও নাফিজা জাহান। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে নাটক-সিনেমার প্রযোজকের অনৈতিক প্রস্তাব সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ফারিয়া শাহরিন। তার সেই বক্তব্যের পর থেকে আলোচনা শুরু হয় তাকে নিয়ে। এবার তার ওই সাক্ষাৎকারের বিপরীতে প্রতিবাদ করে মুখ খুললেছেন নাফিজা জাহান। গত রোববার ফেসবুক লাইভে এসে ফারিয়ার কথার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। সেই সঙ্গে যে গণমাধ্যমটিতে সেই সাক্ষাৎকার ছাপা হয় সেটিরও একহাত নেন।
লাইভে এসে ফারিয়াকে উদ্দেশ্য করে নাফিজা জাহান বলেন, আপনাকে কেন সবাই কফি খাওয়ায়, বিছানায় যাওয়ার প্রস্তাব দেয়? দেশের নামকরা অভিনেত্রীরা তো এমন অভিযোগ করেন না। কেন পুরো মিডিয়াকে আপনি খারাপ বলছেন? সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন নাফিজা। তিনি ফারিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি কিন্তু দুধে ধোয়া তুলশিপাতা না।
লাইভের শুরুটাই নাফিজা শুরু করেন গণমাধ্যমে প্রকাশতি ওই লেখাটির সূত্র টেনে। তিনি বলেন, সকালে ঘুম ভাঙার পর একটা নিউজ দেখলাম। এরপর আমি টাইম বের করার চেষ্টা করছিলাম যে, কখন লাইভে আসবো। কারণ নিউজটি দেখার পর গা কিটমিট করছিল যে, আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। একজন আপা, আপা তার লাইফের হিস্টোরি লিখেছেন মিডিয়া নিয়ে। নাফিজা আরও বলেন, মিডিয়া অনেক খারাপ, মিডিয়া যদি অনেক খারাপই হয়ে থাকে তাহলে আপনি কেন মিডিয়ায় এসেছেন? আপনার বাপ-মা আপনাকে আটকায় রাখতে পারেন নাই। ভাই যদিও আমি অনেকটা সময় মিডিয়ায় ছিলাম না, কিন্তু মিডিয়াতে তো ছিলাম। মিডিয়ার মানুষজন আমাদের তো পাবলিকের কাছে এতোটা নিচে নামানোর প্রয়োজন নেই। উনাকে নাকি অনেকেই অফার দিয়েছিলেন, কফি খাওয়ার জন্য এটা সেটা করার জন্য। করলেন না কেন? শোনেন, যদি শুধু খারাপই হয়ে থাকে তাহলে আজ একজন সুবর্ণা মোস্তফা তৈরি হতো না।
শোনেন, ভালো খারাপ সব জায়গাতেই আছে। নিজে ভালো তো দুনিয়ার সব ভালো। নিজেকে ঐটা ম্যানেজ করতে শিখতে হবে। নাফিজা বলেন, আপনাকে এখন লোকজন কাজে নেয় না দেখে যে মিডিয়াকে আপনি এতো নিচে নামায় দিতে পারেন। আপনি এগুলো বলে কী প্রমাণ করতে চান? মিডিয়ার পয়সা একদিন হলেও বাসায় গেছে। আমি একটা সময় কাজ করতাম মিডিয়ায়, এজন্য আমার গায়ে লাগছে। আপনি দুধে ধোঁয়া তুলশিপাতা না। আপনি যদি মিডিয়াতে না আসতেন আজ আপনাকে কেউ চিনতো না। মিডিয়াতে এখন খুব একটা কাজ করছেন না ফারিয়া। তবে করছেন না বলে কাজ পাচ্ছেন না বলেই মন্তব্য নাফিজার। বিষয়টি উল্লেখ করে নাফিজা বলেন, আজ আপনাকে কেউ কাজে নেয় না বলে মিডিয়াটাকে নেগেটিভ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে ফেমাস হবেন? এগুলো করে লাভটা কী? ওপরে থুথু ফেললে নিজের গায়েই সেটা পড়ে। আজ আপনার কাজ নাই বলে আপনি মিডিয়াটারে যা-তা বলবেন। আজ আপনি বলেন, প্রডিউসারের সাথে শুতে যান না বলে আপনার পেমেন্ট দেয় না, আপনি এমন … হয়ে গেছেন?
লাইভে মিডিয়ার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সার, বিপাশা হায়াত, সুবর্ণা মোস্তফা তাদের কথা উল্লেখ করে নাফিজা জানতে চান, মিডিয়ায় এদের মতো তারকারাও তো আছেন। তারা তো এমন অভিযোগ করে না। কিন্তু তারা জানে কীভাবে কি করতে হয়। আমি এখন মিডিয়াতে নেই, কিন্তু মিডিয়ার প্রতি আমার ভালোবাসা আছে। আমি নাফিজা ছিলাম, মানুষ আমাকে চেনে মিডিয়ার কল্যাণে। তুমি যেখানে যাওয়ার যাও, মিডিয়াকে কালার করার কী দরকার? আপনাকে একাই কফির দাওয়াত দেয়, আর কাউকে দেয় না?
এদিকে, মিডিয়ায় নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ে গতকাল সোমবার দুপুরে তিনি তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ফেসবুকে দেওয়া বক্তব্যে ফারিয়া বলেছেন, ‘আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছি নিউজে। সবাই এসব ফেস করেই কাজ করেন। আমার ঘৃণা লাগছিল তাই সবাইকে এক ভেবে কাজ করিনি।’ দুটি পোস্ট তিনি দিয়েছেন, যেখানে বলার চেষ্টা করেছেন, আসলে তিনি যা ওই গণমাধ্যমে বলতে চেয়েছিলেন। ফারিয়া বলেন, মিডিয়াটা আমার প্রফেশন না। শখ অলওয়েজ। কিন্তু যাদের কাছে প্রফেশন তাদের অনেকেই আমার এ নিউজটা দেখে কষ্ট পেয়েছেন। ওয়েল, আমার নিউজ এ কি কোথাও সব কথা লেখা ছিল? ওকে লেট মি ক্লিয়ার দেজ এগেইন টাফ আই এম টায়ার্ড। কিন্তু আমি কারো পেশাকে অসম্মান করিনি বা কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি। স্টেটমেন্ট নম্বর ওয়ান- মিডিয়াতে অবশ্যই ভালো মেয়ে আছে। যারা কষ্ট করে টাকা ইনকাম করে যাদের গডফাদার বা সুগার ড্যাডি নেই। এবং যা কামায় তাতেই খুশি থাকে নম্বর ওয়ান হতে চেয়ে যারা নিজেকে বিক্রি করেননি আমার মতো, করবেনও না।
কিন্তু মিডিয়ার কিছু মেয়ের জন্য সব মেয়েকে সবাই এক কাতারে ফেলেন যে, তা আমি মানতে পারি না দেখে আমার এতো প্রোটেস্ট। স্টেটমেন্ট নম্বর টু- সব প্রডিউসার ডিরেক্টররা খারাপ না, অনেক ভালো শিক্ষিত প্রোডিউসার ডিরেক্টর আছেন যারা কাজটা চায়। সমস্যা হলো আমি এসব এতো ফেইস করেছি যে, একটা সময় ভালোদেরও আমার খারাপ লাগতো। তাই ভালোদের কাজ আমি ফিরিয়ে দিয়ে আমি ভালো কাজ হারিয়েছি। আমি যতগুলো কাজ করেছি নিশ্চই ভালো লোকজন দেখেই কাজটা করেছি। তার মানে মিডিয়াতে অনেক ভালো মানুষ আছে। কিন্তু কিছু লোকের কারণে মিডিয়ার এতো বদনাম এবং আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছি নিউজে। সবাই এসব ফেইস করেই কাজ করেন। আমার ঘৃণা লাগছিল তাই সবাইকে এক ভেবে কাজ করিনি। আমি কি পরিষ্কার করতে পেরেছি?
উল্লেখ্য, ফারিয়া শাহরিন। ছোটো পর্দার তারকা। অভিনয়ে আপাতত বিরতি। ২০০৭ সালে ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার’ অনুষ্ঠানের প্রতিযোগী হিসেবে পথচলা শুরু হয় তার। ‘কথা দিলাম’ শিরোনামের বাংলালিংকের একটি বিজ্ঞাপনে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেন তিনি। ২০১৪ সালে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘আকাশ কত দূরে’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে এ তারকার। এখন পড়াশোনা করছেন মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্যদিকে, লাক্স তারকা হয়ে মিডিয়া যাত্রা শুরু করেন নাফিজা। অভিনয় দিয়ে একসময় জনপ্রিয়তাও পান। কিন্তু এখন আর অভিনয় করছে না তিনি। নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাস করেন এ অভিনেত্রী।