ময়মনসিংহের ফুলপুরে প্রতিবন্ধীদের আলো জ্বালানোর স্থান ফজলুল হক অটিজম স্কুল

ময়মনসিংহের ফুলপুরে প্রতিবন্ধীদের আলো জ্বালানোর স্থান ফজলুল হক অটিজম স্কুল

মিজানুর রহমান ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ-
কারো ডান হাত অকেজো, লিখে বাম হাতে। কেউ কথা বলতে পারে না, কেউ বলে তুতলিয়ে, কেউবা হাঁটতে পারে না, আসে মা বাবার কোলে বসে। এমন অটিজম, বাক প্রতিবন্ধী, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার এক অনন্য উদ্যোগ নিয়েছে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার এ কে এম ফজলুল দুদুমিয়া অটিজম বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়।
ময়মনসিংহের ফুলপুরে প্রতিবন্ধীদের আলো জ্বালানোর স্থান ফজলুল হক অটিজম স্কুল ফুলপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে দিউ এলাকায় অবস্থিত প্রতিবন্ধী শিশুদের এ বিদ্যালয়টি ফুলপুর ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মরহুম একে এম ফজলুল হক দুদু মিয়ার নামে নামকরণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন দুদু মিয়ার ছেলে ফুলপুর কলেজের সাবেক ভিপি ইটালি প্রবাসী তরুণ সমাজকর্মী মোঃ এমদাদুল হক। এমদাদুল হকের ইচ্ছা ছিল এলাকায় একটি বৃদ্ধাশ্রম করবেন। এ নিয়ে কাজও শুরু করেছিলেন বলে জানান তিনি। এক পর্যায়ে তার নজরে আসে এলাকার অনেক প্রতিবন্ধী শিশুর লেখাপড়া করার কোন বিদ্যালয় নেই। মা বাবার বোঝা হয়ে বড় হচ্ছে তারা। একদিন এসব শিশুরাই বড় হয়ে সমাজের বোঝা হয়ে অযত্নে অবহেলায় অসহায় দিন কাটাবে। এ চিন্তা থেকেই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার কাজে হাত দেন সাবেক এই ছাত্র নেতা। তার এ কাজে সহযোগিতা করেছে তার কলেজ জীবনের বন্ধু সাখাওয়াত হোসেন।

২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের চাচাত ভাই গোলাম হাসান মিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যালয়টি উদ্বোধন করেন। বর্তমানে প্রায় ২০০ প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী এ বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করছে।

সরেজমিন গিয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলে বুঝা গেছে তাদের শরীরে ও মানসিকতায় নানা সমস্যা থাকলেও তাদের মধ্যে ইচ্ছাশক্তি আছে প্রবল। অদম্য এই প্রতিবন্ধীরা শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। চাচ্ছে আর দশটা ছেলে-মেয়ের মতো ভালোভাবে বাঁচতে। শারিরিক মানসিক প্রতিবন্ধকতা তাদের এই অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে যেন দমিয়ে রাখতে পারছে না। আজ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একাডেমিক পাঠদান ছাড়াও পরিবেশ, পুষ্টি, খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিষয়েও শিক্ষা পাচ্ছে তারা। ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী সজীবুর রহমান জানায়, তার ডান হাত অচল, এখন সে বাম হাতেই লিখতে পারছে। একই ক্লাসের অপর এক ছাত্র কথা বলতে পারে না, নাম জানতে চাইলে খাতায় লিখে জানায় তার নাম রকিব। তার পিতার নাম জালাল উদ্দিন, গ্রাম কাতুলী। ২য় শ্রেণীর ছাত্র সাহিদা। সেও বই পড়তে পারে। উছমান নামে এক ছাত্র বেটে। সে গত বিজয় দিবসে জামাইর অভিনয় করে উপজেলা পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছে। কয়েক জন অভিভবাক জানান, উপজেলা শহরে প্রতিবন্ধী শিশুদের লেখাপড়ার অন্য কোন প্রতিষ্ঠান নাই। প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াতে এই স্কুলটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তবে সেটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। নেই পাকা ভবন। নেই বিদ্যালয়ে আসার মানসম্মত রাস্তা, শিক্ষা উপকরণ ও আসবাবপত্র। যথেষ্ট অভাবের মধ্য দিয়েও চলছে স্কুলটি।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি শহিদুল হক জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিনামূলে পাঠ্যপুস্তক ছাড়া কোন সরকারি সহায়তা তারা পায়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে একটি ল্যাট্রিন করে দেয়াসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টি অনুমোদনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি দরখাস্ত জমা দেয়া থাকলেও এখন পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ফলে শিক্ষকরা সরকারী সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশেদ হোসেন চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি সংবাদকে জানান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি, বিদ্যালয়টির অনুমোদনের বিষয়ে তিনিও চেষ্টা করছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment