ইয়াসের প্রভাব: জোয়ারে ভেসে গেছে বন্যপ্রাণীসহ শত শত গবাদিপশু

ইয়াসের প্রভাব: জোয়ারে ভেসে গেছে বন্যপ্রাণীসহ শত শত গবাদিপশু

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে চরফ্যাশনের চরাঞ্চলীয় এলাকায় শত শত গবাদিপশুর প্রাণহানি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে নবসৃজিত ম্যানগ্রোভ বনের। বনের অনেক বন্যপ্রাণী জোয়ারে ভেসে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

জেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢালচর, চরনিজাম, কুকরি-মুকরিসহ উপজেলার একাধিক চরাঞ্চলে নবসৃজিত ম্যানগ্রোভ বন ও বনের হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। উপজেলার নতুন স্লুইসগেট এলাকায় একটি মৃত হরিণ ভেসে আসলে স্থানীয়রা হরিণটির দুটি শিং ভেঙে নিয়ে যায়। নজরুলনগর ইউনিয়ন থেকেও কোস্টগার্ড জবাইকৃত একটি হরিণ উদ্ধার করে। এছাড়াও চরনিজাম থেকে ভেসে আসা দুইটি হরিণশাবক উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করেছে বন বিভাগ।

জেলা বন বিভাগ দাবি করেন, চরফ্যাশন উপজেলায় ৪০ শতাংশ সৃজিত বনের ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানিতে দীর্ঘদিন প্লাবিত হয়ে শত শত হেক্টর জমির চারা গাছ মরে গেছে। তবে চরফ্যাশনের বনাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা না আসায় ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনো অজানা বলে জেলা বন কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান মূল তথ্য দিতে পারেননি।

উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ঢালচর, কুকরি-মুকরি, চরনিজাম, মুজিবনগরসহ নদী সংলগ্ন একাধিক এলাকার কৃষক, খামারিসহ শতাধিক গৃহস্থের গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়া ও হাজার হাজার হাঁস মুরগি জোয়ারের পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

চরফ্যাশন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১১টি গরু, ৮টি মহিষ, ৩টি ছাগল, ২০টি ভেড়া ও প্রায় দেড় হাজার হাঁস মুরগি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে মারা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢালচর ইউনিয়নের বাসিন্দা লোকমানসহ একাধিক ব্যক্তি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন নদী সংলগ্ন এলাকায়। গত ২৪ মে চরের বাগান থেকে তার চারটি মহিষ ও ছয়টি গরু হটাৎ করে জোয়ার জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ভেসে যায়। একই এলাকার বাবুল মিয়ার ১০টি ভেড়া ও ৮টি ছাগল এবং সিদ্দিকের পাঁচটি ও আলমগীরের দুইটি গরু ভেসে গিয়েছে জোয়ারের পানিতে।

এছাড়াও মোশারেফ ও সেলিমের দুইটি গরু পানিতে ডুবে মারা যায়। কুকুরি-মুকরি ইউনিয়নের চরপাতিলা এলাকার এক খামারির তিনটি গরু ও গিয়াস উদ্দিনের একটি গরু এবং দুইটি ভেড়া জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ডুবে মারা গেছে। এছাড়াও হারুনের একটি গরু ও তিনটি ছাগল মারা গেছে এবং ফারুকের প্রায় ২০টি হাঁস মুরগি জোয়ারে ভেসে গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের এ জলোচ্ছ্বাসে লোকমান ও মোশারেফের মতো উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নে আরও অনেকের গবাদিপশু মারা গেছে বা ভেসে গেছে।

ঢালচর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার জানান, আড়াই শতাধিক গরু প্রায় ১ হাজার ছাগল ও ১৮৭টি মহিষ নিখোঁজ রয়েছে। এসব গবাদিপশু বর্গা নিয়ে কৃষক ও গৃহস্থেরা বাড়ির আঙিনা ও বনবাদাড়ে ছেড়ে পালন করত।

কুকরি-মুকরি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন জানান, সংসারের সচ্ছলতার জন্য চরাঞ্চলের অসচ্ছল নারী ও কৃষকেরা গরু ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করেন। এবারের জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. আতিকুর রহমান বলেন, গত এক সপ্তাহের জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে ২৭ হাজার ৪১টি গরু, ১৮ হাজার ৭২টি মহিষ ও ৮ হাজার ছাগল, ৫৪৭টি ভেড়া, ১০ হাজার ৭৮৩টি মুরগি, ৪ হাজার ৮৭৪টি হাঁস আক্রান্ত হয়েছে। খামারি ও কৃষকের প্রায় কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

জোয়ারের পানিতে ক্ষতি হয়েছে শতশত একর জমির দানাদার খাদ্যসহ গো-খাদ্য, কাঁচা ঘাস ও খামারিদের শত টন খড়কুটা। বর্তমানে এসব চরাঞ্চলে গো-খাদ্যের ব্যাপক সংকট রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বন্যাপরবর্তী অবস্থায় উপকূলীয় এলাকার প্রায় সব পুকুর ও বিল জলাশয়ে এখনো লবণ পানি রয়েছে। যার ফলে স্বাদুপানির অভাবে গবাদিপশু এসব লবণ পানি খাওয়ার কারণে ডায়রিয়া দেখা দিচ্ছে। এসব চরের গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবায় এবং ভ্যাক্সিনেশনে ৩টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন