উপকমিটি: পদবঞ্চিতদের তোপের মুখে কাদের

উপকমিটি: পদবঞ্চিতদের তোপের মুখে কাদের

আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক পদ না পাওয়া ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ওবায়দুল কাদেরের নাম উল্লেখ করে হৈ চৈ করছিলেন। এ সময় ওই কার্যালয়েই ছিলেন তিনি।

উপকমিটি: পদবঞ্চিতদের তোপের মুখে কাদের

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত উপ-কমিটির একটি তালিকা প্রকাশ হয়। এই তালিকা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায়। অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের সাবেক অনেক নেতার নাম এই কমিটিতে নেই। আবার বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা নেতাদের নাম আছে। আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, সন্ধ্যায় ওবায়দুল কাদের তাদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা একে ধানমন্ডি কার্যালয়ে নানা কথা বলতে থাকেন। পরে ওবায়দুল কাদের বের হয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগ করেন, টাকার বিনিময়ে উপ কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। এরপর ওবায়দুল কাদের তাদেরকে ‘উপ কমিটি’কে অবৈধ বলে মৌখিকভাবে তা বাতিলের কথা জানান। কাদের বলেন, ‘আমরা কোনো সহ-সম্পাদকের পদ চুড়ান্ত করিনি। যে নামগুলো বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো বাতিল। যাচাই-বাছাই করে তিন মাস পর সহ-সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে।’ সেখানে উপস্থিত একজন সাবেক ছাত্রনেতা বলেন, ‘এটি কোন আন্দোলন ছিলো না। এটি ছিলো দায়িত্ব। দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে সাবেক ছাত্রলীগের নেতারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকে উপ-কমিটিতে বিতর্কিতদের বিষয়ে অবগত করেছেন।’

‘যারা কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে ছিল না তাদের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ায় আমরা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছি।’

বিক্ষুব্ধ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহফুজুর রহমান, শাহ মোস্তফা আলমগীর, হেমায়েত উদ্দিন, শাহীনুর রহমান, হাসানুজ্জামান লিটন, টিটন, রিয়াজ উদ্দিন সুমন, হাসানুজ্জামান তারেক, শামসুল কবির রাহাত, আল মাহমুদ, আফরিন নুসরাত প্রমুখ। তাঁরা ছাত্রলীগের বিগত তিনটি কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিভিন্ন পদে ছিলেন।

দপ্তর উপকমিটির সহ-সম্পাদক এ কে এম কবির হোসেনের বিরুদ্ধে ছাত্রদলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন তিনি।

এ উপকমিটির অপর সহ-সম্পাদক ফয়সল আহমেদ রিয়াদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়া সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য হিসেবে আছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এস ডি রুবেল। তিনি বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন দীর্ঘদিন। ছাত্রজীবনে ঢাকা কলেজে ছাত্রদলের নেতা ও ক্যাডার হিসেবে পুরো ছাত্রজীবন পার করেছেন। তিনি ছাত্রদলের ঢাকা কলেজ শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদকও ছিলেন।

ওই তালিকা অনুযায়ী রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে সহ-সম্পাদক হয়েছেন এস এম এনামুল হক আবীর।

রাসেল নামের একজন সহ-সম্পাদক হয়েছেন, যিনি আওয়ামী লীগের এক উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও মন্ত্রীর বাসার কাজের লোক। অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সহ-সম্পাদক এস এম সাইফুল্লাহ আল মামুন, এ উপকমিটির চেয়ারম্যান মশিউর রহমানের খুব ঘনিষ্ঠ। এর জোরেই তিনি এ পদে আসীন হয়েছেন।

এ কমিটির অপর সহ-সম্পাদক জিয়াউল আবেদীনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে ছাত্রদল-সংশ্লিষ্টতার। অভিযোগ রয়েছে কৃষি ও সমবায় উপকমিটির এক সহ-সম্পাদক হয়েছেন অর্থের বিনিময়ে।

শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সহ-সম্পাদক আবিদুর রহমান লিটু রাজনীতিতে অপরিচিত। একই উপকমিটির আরেক সহ-সম্পাদক ফারুক আহম্মদের (জাপানী ফারুক) বিরুদ্ধেও রয়েছে ছাত্রদল সম্পৃক্ততার অভিযোগ। ওই তালিকা অনুযায়ী জহির নামের একজন ইতালি প্রবাসীও সহ-সম্পাদক হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে তিনি ছয় মাস দেশে আর ছয় মাস ইতালি থাকেন। উপকমিটির শফিকুল বাবু ও রেজাউল করিম সুইটের বিরুদ্ধেও ছাত্রদল সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া ছাত্র ও রাজবাড়ী জেলা ছাত্রদলের এক নেতাও উপকমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। জেলা কমিটির সদস্য হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটিতে জায়গা পেয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দেব নন্দী (যশোর), ফাহিম হোসেন (মানিকগঞ্জ), ইসহাক আলী খান পান্না (পিরোজপুর)।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment