নওগাঁয় নকল কীটনাশক রাখায় দোকান সিলগালা; ১০হাজার টাকা অর্থদন্ড; জনমনে নানা প্রশ্ন

নওগাঁয় নকল কীটনাশক রাখায় দোকান সিলগালা; ১০হাজার টাকা অর্থদন্ড; জনমনে নানা প্রশ্ন

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় চলছে আমন ধান রোপনের মৌসুম। আর ধান চাষ মানেই বিভিন্ন ধরনের সার, কিটনাশক, ভিটামিনসহ নানা ধরনের কৃষি পন্যের প্রয়োজন হয়। সরকারের কাছ থেকে গুটিকয়েক কৃষক প্রণোদনা পেলেও সিংহ ভাগ কৃষককে বিভিন্ন কৃষি পন্য ও উপকরণ বাজারের বিভিন্ন ডিলারদের কাছ থেকে কিনতে হয়। আর এই সুযোগেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আঁতাত করে নকল কৃষিপন্য সহজ-সরল কৃষকদের কাছে বিক্রি করে তারা যেমন হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ অপরদিকে চরম ভাবে প্রতারিত হচ্ছে নিরীহ কৃষকরা। তবুও নজর নেই কর্তৃপক্ষের।

নওগাঁ শহরের তাজের মোড়ের অদূরে ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে (এসআর কাউন্টার সংলগ্ন) শহীদুল ইসলাম নামের একজন বিসিআইসি ডিলার রয়েছেন। এই ডিলারের প্রধান ব্যবসা হচ্ছে পান, সিগারেটসহ অন্যান্য খাবার সামগ্রী বিক্রি করা। আর তার মাঝে ব্যবসা করেন কীটনাশকের। তারই কীটনাশকের দোকানে বিপুল পরিমাণ (প্রায় ২৫-৩০টন) নকল কীটনাশক, বালাইনাশক, মাইক্রোনিউটেন (জিংক, বোরন, ম্যাগনেসিয়াম ও জিপসাম) পন্য মজুদ রাখার খবর পায় সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ। খবর পেয়ে কৃষি বিভাগ প্রাথমিক ভাবে বুধবার বিকেলে শহীদুলের দোকান সিলগালা করে দেয়। পরের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে র‍্যাবসহ একটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এসময় নকল কীটনাশক রাখার অপরাধে দোকানটি সিলগালা করে শহীদুলের ১০হাজার টাকা অর্থদন্ড ও দোকান সিলগালা করে মোবাইল কোর্টের বিচারক। কিন্তু বিপুল পরিমাণ নকল কীটনাশশকসহ অন্যান্য পণ্যের কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিংবা যে সব কোম্পানী এই পন্যগুলো তৈরি করেছে তাদের বিরুদ্ধে কি কোন ব্যবস্থা কিংবা যাদের কাছ থেকে শহীদুল এই পন্যগুলো কিনেছে তাদের বিরুদ্ধেও কি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা এই সব বিষয়ে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে। তাই এতো বড় একটি অপরাধে অভিযুক্তের ওই শাস্তি প্রদান করায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে গনমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করার কথা থাকলেও অভিযান পরিচালনা করার সময় রহস্যজনক ভাবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কোন গনমাধ্যমকর্মীকেই জানানো হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, শহীদুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবত পান-সিগারেটের ব্যবসার আড়ালে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নকল কীটনাশকের ব্যবসা করে আসছে। কিন্তু সে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ তার কোন কিছুই করতে পারে না। যার কারণে বিপুল পরিমান নকল কীটনাশকের মজুদ তার দোকানে পাওয়া গেলেও প্রশাসন সামান্য কিছু অর্থদন্ড করে চলে গেছে। শহীদুলের এই দোকান থেকেই নকল এই সব কৃষি পন্য পুরো নওগাঁ জেলাসহ আশেপাশের অঞ্চলে চালান করা হয়। মাঝখান থেকে শহীদুল হচ্ছে টাকার মালিক আর নকল কীটনাশক ব্যবহার করে মরছে জেলার লাখ লাখ কৃষক।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন বিসিআইসির ডিলার শহীদুল ইসলামের দোকানে ও মজুদ ঘরে বিপুল পরিমাণ নকল কীটনাশকসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ রয়েছে। তারই ভিত্তিতে বুধবার বিকেলে আমরা প্রাথমিক ভাবে এসে দোকানটি সিলগালা করে আসি। পরে বিষয়টি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানোর পর বৃহস্পতিবার বিকেলে পুনরায় ডিলার শহীদুল ইসলামের দোকানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় মোবাইল কোর্টের বিচারক সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাহারুল ইসলাম ১০হাজার টাকা অর্থদন্ড ও যাবতীয় কৃষি পণ্যসহ দোকানটি সিলগালা করে দেন। নকল কীটনাশক ও অন্যান্য উপকরণ বিষয়ে বিচারক মহোদয় কোন সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় পরবর্তিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে  জানান কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন