হোসেনপুরে ধীরেধীরে হারিয়ে যাচ্ছে বেলগাছ

হোসেনপুরে ধীরেধীরে হারিয়ে যাচ্ছে বেলগাছ
মাহফুজ রাজা,জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ;
কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা একটি ফল
বেল, বেল একটি পুষ্টিকর আর উপকারী ফল। কাঁচা-পাকা দুটিই সমান উপকারী। কাঁচা বেল ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগে ধন্বন্তরী। পাকা বেলের শরবত সুস্বাদু। বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের মতো মূল্যবান পুষ্টি উপাদান। বেলকে বলা হয় শ্রীফল, কারণ হিন্দুদের পূজা-অর্চনায় বেলের পাতা ও ফল ব্যবহার করা হয়। হিন্দুরা বেল কাঠকে পবিত্র জ্ঞান করে বিধায় কখনও বেল কাঠ পুড়িয়ে রান্না করে না।
হোসেনপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,
মহাগুনীয় বেল গাছ বিলুপ্তি প্রায়।অথচ বেল চাষ করার জন্য আলাদা কোন কিছু করার দরকার পড়ে না। অন্য ফলজ গাছ যেমন: আম, জাম, লিচু আর কাঠালের মত সাধারন পরিচর্যাতেই এগুলো বড় হয়ে থাকে।
জানা যায়,ইংরেজিতে বেলকে ডাকা হয় Wood Apple কারণ এ ফলের খোসা কাঠের মত শক্ত।
বীজ থেকে একটি বেলগাছ হতে এবং তা থেকে ফলন পেতে সময় লাগে প্রায় ১৫ বছর যা এদেশে চাষাবাদযোগ্য যেকোনো ফলের তুলনায় বেশি। ফল পাওয়ার জন্য এত দীর্ঘ সময় কেউ অপেক্ষা করতে চায় না ফলে বেলের চাষাবাদ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।
 বাড়ির আশেপাশে যে ১/২টি গাছ চোখে পড়তো তা আসলে বীজ থেকে জন্মানো। তবে মূলের কাটিং করে, এয়ার লেয়ারিং এবং ক্লেফট গ্রাফটিং বা ফাটল কলমের মাধ্যমে বেলের বংশবিস্তার করা যায়।কিন্তু অযত্ন অবহেলায় বিলুপ্তির চূর্ণ শিখড়ে হোসেনপুরে বেলের গাছ,এখন আর আগের মত  বাড়ির আঙ্গিনায় মিলেনা বেলবৃক্ষ।
উপজেলার জিনারীতে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শরিফুল আলম কে দেখা যায়,কয়েক জনকে নিয়ে ভাগাভাগি করে বেল খাচ্ছেন, তিনি জানান,চোখের সামনে বেল কমই পড়ে আগের তুলনায়,বেল চোখে পড়লে, খেতে মনটা নাড়া দিয়ে উঠে।
রুনি বেগম নামে এক মাঝ বয়সী নারী বলেন,
ছোট বেলায় গাছে উঠে কিংবা গাছের নিচ থেকে কুঁড়িয়ে বেল খেতাম আনন্দের সহিত তখন পর্যাপ্ত বেল গাছ ছিল প্রায় প্রতিটা বাড়িতে।এখনতু বেল নেই বললেয় চলে।
 গবেষণার ফলাফল হতে দেখা গেছে, স্বাভাবিক নিয়মে বেলগাছ ১৫ বছর লাগলেও কলমের গাছ থেকে মাত্র ৪ থেকে ৬ বছরেরই বেল সংগ্রহ করা সম্ভব। সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রায় ১০ বছর আগেই কলমের গাছ থেকে বেল সংগ্রহ করা সম্ভব।
বর্তমানে বেলের চাষাবাদ নেই বললেই চলে, প্রতিনিয়ত এই গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় কোনো কোনো সময় বেল বাজারে খুঁজেই পাওয়া যায় না। ফলটির বাজারমূল্যেও কম নয়। ছোট আকারের একটি বেলের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর বড় আকারের বেলের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বাণিজ্যিক ও পরিকল্পিতভাবে বেলের বাগান করলে বর্তমানে অবশ্যই চাষি লাভবান হবেন।
 বেল গাছের মূল হতে শুরুর ডগা পর্যন্ত প্রত্যেকটি অংশই মানুষ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে। কাঁচা বেলের সরবতে ডাইরিয়া ও পাতলা পায়খানা ভাল হয়। আধাপাকা বেল মোরব্বা তৈরিতে ব্যবহূত হয়। পাকা বেলেরও রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। গাছ থেকে পেড়ে পাকা বেলের শাঁস সরাসরি খাওয়া যায়। পাকা বেলের সরবত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়াও পাকা বেলের শাঁস সরবত, জ্যাম, জেলি, চাটনি, স্কোয়াস, বেভারেজ ও বিভিন্ন ধরনের আর্য়ুবেদীক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহূত হয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বেলের পাতা ও ডগা সালাদ হিসেবে ব্যবহার করে। বেল পুষ্টিগুণে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা বেলের শাঁসে থাকে আর্দ্রতা ৬৪.২০ ভাগ, প্রোটিন ৭.১০ ভাগ, চর্বি ৩.৭০ ভাগ, খনিজ ১.৯০ ভাগ, ফাইবার ৫.০ ভাগ এবং শর্করা ১৮.১০ ভাগ। এমনকি বেল গাছের কাণ্ড হতে যে আঠা পাওয়া যায় তা গাম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
রমজানে ইফতারে বেলের শরবতে রোজাদারদের রয়েছে আলাদা এক তৃপ্তি। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে এক গ্লাস বেলের শরবত দূর করে দেয় রোজাদারের সকল ক্লান্তি।
০৮/০১/২২(শনিবার)উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের পশ্চিম দিগন্তে একটি উজার ভিটায় ঝোপঝাড়ের ভিতরে, লোকালয় থেকে অনেকটা দূরে,ছোটখাটো একটা জঙ্গলের মতই স্থানে,
এয়াসিন নামে এক কিশোরকে গাছে উঠে বেল ক্ষেতে দেখা যায়।সে জানায়,আমরার আশেপাশে কোনো বেল গাছ নাইগা,বাজারোও সবসময় পাওয়া যায় না,
এল্লাইগা এইনো আয়া বেল পাইরা খাইতাচি,গাছও পাইক্কা রইছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন