আবহমান বাংলায় ষড় ঋতুর পরিক্রমায় আজ থেকে শুরু হলো হেমন্ত। শরত্কালের পর কার্তিক-অগ্রহায়ণ মিলে এই হেমন্ত।
শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে ধীর পায়ে প্রকৃতিতে আসে হেমন্ত। তাই তো একে বলা হয় শীতের বাহন। পঞ্জিকার পাতায় আজ থেকে হেমন্ত শুরু হলেও প্রকৃতিতে অনুভূত হচ্ছে ঈষত্ শীতের আমেজ। গ্রামীণ জনপদে এখন হিম হিম অনুভব।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কার্তিকের ঋতু হেমন্তকে নিয়ে লিখেছেন- ‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে/ জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে/ শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার/ রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার/ স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি।’
তবে শরতের পরে আর শীতের আগে এ ঋতু এখন যেন কাগুজে ঋতুতে পরিণত হয়েছে। বাস্তবে এ ঋতুর আবেশ বাঙালির ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।
জীবনানন্দ দাশের ও খুব প্রিয় মাস কার্তিক। তাঁর কবিতায় কতবার যে কার্তিকের কথা এসেছে। ‘শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে, / অলস গেঁয়োর মতো এইখানে কার্তিকের ক্ষেতে; / মাঠের ঘাসের গন্ধ বুকে তার, চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ,/ তাহার আস্বাদ পেয়ে অবসাদে পেকে ওঠে ধান’ (অবসরের গান)। গান, কবিতায় কত রং রূপেই না ধরা দেয় হেমন্ত। তবে হেমন্ত শুধু হেমন্ত নয়, হেমন্ত মানে শীতের আগমনী বার্তা। একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়ে, ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি। শহরে অতটা টের পাওয়া না গেলেও, গ্রামে খুব চোখে পড়ে প্রকৃতির এ বদলে যাওয়া। গাছীরা এখন খেজুর গাছ পরিষ্কার করার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রামবাংলার এই চিরচেনা রূপ হেমন্তের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
এখন থেকে যত দিন যাবে, ততই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমতে থাকবে। পার্থক্য যত কমবে, তত শীত বাড়তে থাকবে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এখন প্রকৃতি যেন আর নিয়ম মানছে না। অনেকটা খামখেয়ালী হয়ে উঠেছে।