নেত্রকোনা-৫ আসনের এমপি ওয়ারেসাত হোসেনকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সুবিধা আদায়, স্ত্রীর মামলা

নেত্রকোনা-৫ আসনের এমপি ওয়ারেসাত হোসেনকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সুবিধা আদায়, স্ত্রীর মামলা

নেত্রকোনা-৫ আসনের এমপি ওয়ারেসাত হোসেনকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সুবিধা আদায়, স্ত্রীর মামলা

রিপন কান্তি গুণ,  নেত্রকোনা জেলা প্রধান প্রতিনিধি;

নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল (৭৫) (বীর প্রতীক) কে অপহরণের পর বিয়ে, তাঁর স্বাক্ষর জাল করে টাকা আদায় করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী রওশন হোসেন বাদী হয়ে কলেজছাত্রীসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে পূর্বধলা থানায় মামলাটি করেন।

এ মামলার প্রধান আসামি করা হয় নাদিয়া আক্তার (২৬) নামের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া এক তরুণীকে। অন্য আসামিরা হলেন নাদিয়ার ছোট ভাই পূর্বধলা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাইফ (২০), পূর্বধলা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোলায়মান হোসেন, সংসদ সদস্যের পিএস ফেরদৌস আলম (৪২), কামারুজ্জামান উজ্জ্বল (৪২), দুই কলেজ শিক্ষক নাদেরুজ্জামান স্বপন (৪২) ও রতন পাল (৩২), ছাত্রলীগ কর্মী শাহ আলীম (৩২) ও সংসদ সদস্যের গাড়িচালক শফিকুল ইসলাম (৪৫)। তবে আসামিরা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি অসুস্থ থাকায় কারও সঙ্গে তেমন একটা কথা বলেন না। এ ছাড়াও তাঁর স্মৃতিশক্তিও কমে গেছে বলে জানা গেছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা বিভিন্ন সময় এমপি ওয়ারেসাত হোসেনের কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন। সেই সুবাদে তাঁর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। তাঁরা নানাভাবে ওয়ারেসাতকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিতে থাকেন।

মামলার এজাহার ও পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা বিভিন্ন সময় ওয়ারেসাত হোসেনের কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন এবং তাঁর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। এরপর তাঁরা নানাভাবে ওয়ারেসাত হোসেনকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিতে থাকেন।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে তাঁর কাজ দেখাশোনা করার মৌখিক দায়িত্ব দেওয়ার পর ফেরদৌস আলম ও কামারুজ্জামান উজ্জ্বল সংসদ সদস্যের নাম ভাঙিয়ে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেন। অন্য আসামিরা গত ৭ ফেব্রুয়ারি ওয়ারেসাতকে ভুল বুঝিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়ি কাজলা থেকে গাড়িতে করে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে সংসদ সদস্যের নিজের বাসা উত্তরায় না নিয়ে ধানমন্ডি এলাকায় একটি বাসায় তাঁকে আটকে রাখা হয়। পরে গাড়িচালক সংসদ সদস্যের পরিবারকে জানান, ওয়ারেসাত হোসেন বিদেশে চলে গেছেন।

মামলায় বাদী আরও উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামী ওয়ারেসাতকে জিম্মি করে স্বাক্ষর জাল করে নাদিয়া আক্তারের সঙ্গে বিয়ের একটি ভুয়া কাবিননামা তৈরি করা হয়। অতঃপর স্বাক্ষর জাল করে স্ত্রী রওশন হোসেনকে তালাক দেওয়া হয়। এমন একটি কাগজ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

মামলার সাক্ষীদের মাধ্যমে জানা যায়, আসামিরা তাকে আটকে রেখে ব্যক্তিগত মুঠোফোনের মাধ্যমে চাকরি দেবে বলে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

গত ২৭ মার্চ বিকেলে পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করে ঢাকার একটি বাসা থেকে সংসদ সদস্যকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরদিন চিকিৎসার জন্য সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেনকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেয়ের বাসায় রেখে চিকিৎসা শেষে ১১ আগস্ট দেশে আনা হয়। এরপর এ ঘটনায় বুধবার রাতে মামলা করেন ওয়ারেসাতের স্ত্রী রওশন। মামলায় ওয়ারেসাত হোসেনকে প্রধান সাক্ষী এবং আরও আটজনকে সাক্ষী করা হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ওয়ারেসাত হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার বিষয়ে আসামি ফেরদৌস আলম বলেন, ‘আমাদের নামে করা মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। একজন সংসদ সদস্যকে অপহরণ করলে দেশজুড়ে আন্দোলন হয়ে যেত। এ ছাড়া এজাহারে অপহরণ করে যে সময়ে আটকিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। কেন যে এমন ঘটনা সাজিয়ে মামলা করা হলো, তা বুঝতে পারছি না।’

মামলার প্রধান আসামি নাদিয়া আক্তার বলেন, ‘এসব ঘটনা শুনলে খারাপ লাগে। বিষয়টি খুবই লজ্জাজনক। অনেকেই আমাকে ফোন করে জানতে চাচ্ছেন। আমার সঙ্গে যদি বিয়ে হয়ে থাকে, তবে আমি আমার স্বামীকে কেন আটকিয়ে রাখব? আর কেনই–বা স্বাক্ষর জাল করতে যাব? আমি এখন এসব বিষয় নিয়ে বিব্রত। সংসদ সদস্যের সঙ্গে আমাদের পরিবারের সখ্য আছে, তা ঠিক। আমার ভাইকে তিনি নেতা বানিয়েছেন। আসা-যাওয়া হতো, কিন্তু অন্য কোনো বিষয় নেই, যা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ভিত্তিহীন।’

পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, দণ্ডবিধির ৩৪৪, ৩৬৪, ৪০৬, ৪২০, ৪৬৭, ৪৭১, ৫০০/৩৪ ধারায় মামলাটি হয়েছে। এতে অপহরণ ও বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাল কাবিননামা ও জাল তালাকনামা তৈরির কথা বলা হয়েছে। মামলার বিষয়টি তদন্ত করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন