অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পতন হলো হাসিনা সরকারের। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা করে গঠন করা হলো অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো সহজ হবে না। বিশ্লেষকরাও বলছেন, নতুন যে সরকার গঠিত হবে তাকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে মূলত পাঁচটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার বেসামরিক নেতৃত্বাধীন হতে চলেছে, তবে সেনাবাহিনীর হাতে কতটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে তা স্পষ্ট নয়।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের প্রধান ভূমিকা থাকবে, এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে তারা নেতৃত্ব না দিলেও।’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও সরকারের শেষ সময়ে এসে সামরিক বাহিনীর অবস্থান সরকারের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।

বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগের ব্যাপারে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে একমত হয়নি সেনাবাহিনী। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সেনাবাহিনীর আনুগত্যের অবসান শেখ হাসিনার পতন ঘটায়।

অর্থনীতি-

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের বেশি ছিল। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ ২০২১ সালে ভারতকে ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুফল বাংলাদেশে সবাই পায়নি। ২০২২ সালের সরকারি হিসাব বলছে, ১৫-২৪ বছর বয়সী ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মহীন ছিল।

সাম্প্রতিক অস্থিরতা গার্মেন্টস শিল্পকেও নাড়া দিয়েছে। সহিংসতার মুখে গার্মেন্টস কারখানাগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। বাংলাদেশে ৫৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮৫ শতাংশই আসে এই খাতের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কারখানা থেকে।

লিভাইস, জারা এবং এইচএন্ডএমসহ বহু শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করে। পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান।

যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক প্রস্তুতকারক হুলা গ্লোবাল, জানিয়েছে তারা ইতোমধ্যে তাদের কিছু উৎপাদন সরিয়ে নিয়েছে। কোম্পানির প্রধান করণ বোস বলেন, আমরা বছরের বাকি সময়ে বাংলাদেশে যাওয়া সব নতুন অর্ডার বন্ধ করে দিয়েছি।

নিরাপত্তা-

শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর তার সহযোগীরা জনরোষের মুখে পড়ছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের স্মৃতি সিং বলেছেন, মানুষের জীবনধারণের অধিকার, বাকস্বাধীনতার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সহিংসতা বন্ধ করা যেকোনো অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য প্রথম কাজ হওয়া উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী যদি নিরপেক্ষভাবে সরকারকে সহযোগিতা করে তাহলে পরিস্থিতি শান্ত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

নির্বাচন-

গত জানুয়ারি মাসে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনে জয়লাভ করে সেই নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্য কোনো বিরোধীদল ছিল না।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক থমাস কিন বলেছেন, বিক্ষোভ আন্দোলন ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়ার কারণের একটি অংশ হল দেশটি ১৫ বছরে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

ন্যায়বিচার-

শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে পুলিশ প্রধান এবং একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আন্দোলন চলাকালে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা সবাই মুক্তি পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক বন্দিরাও মুক্ত হচ্ছেন।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, ‘আশা করি এই নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন করে কাজ শুরু করবে এবং একটি নতুন ব্যবস্থা ফিরবে, যেটি বিশ্বাসের ওপর নির্মিত হবে এবং জনগণকে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।’

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন