সাংবাদিক সুমনকে নির্যাতন: আরও ৫ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

সাংবাদিক সুমনকে নির্যাতন: আরও ৫ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

বরিশালে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের ক্যামেরাপারসন সুমন হাসানকে নির্যাতনের ঘটনায় বরিশাল মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের উপকমিশনার উত্তম কুমার পালকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ডিবি পুলিশের আরও ৫ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এর আগে, সুমন হাসানকে নির্যাতনকারী ওই ডিবি পুলিশের টিমের ৩ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়। এ নিয়ে নির্যাতনকারী ডিবি পুলিশের ওই টিমের সব সদস্যকেই বরখাস্ত করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

এ ঘটনায় সাময়িক বরখাস্তরা হলেন, সুমন হাসানকে নির্যাতনকারী ডিবি পুলিশের ওই টিমের প্রধান এসআই আবুল বাশার, এএসআই মো. আক্তারুজ্জামান, স্বপন চন্দ্র দে, কনস্টেবল মাসুদুল হক, মো. আব্দুর রহিম, চৌধুরী রাসেল পারভেজ, মো. হাসান মাহামুদ ও কাজী সাইফুল ইসলাম।

এদের মধ্যে ১৩ মার্চ দুপুরে ঘটনার পরপরই প্রাথমিক তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ১৪ই মার্চ সাময়িক বরখাস্ত হন প্রধান নির্যাতনকারী পুলিশ কনস্টেবল মাসুদুল হক। এরপরে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৫ মার্চ আরও দুজন অর্থাৎ আব্দুর রহিম ও চৌধুরী রাসেল পারভেজকে বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়।

সর্বশেষ গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৮ মার্চ রাতে সাংবাদিক নির্যাতনকারী ডিবি পুলিশের ওই টিমের নেতৃত্ব দেয়া এসআই আবুল বাশার এবং এএসআই আক্তার এবং স্বপনসহ ৫ জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিন।

ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সুমনকে নির্যাতনকারী ডিবি পুলিশের টিমের ওই আট সদস্যকে বহিষ্কারের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব পাওয়ার পরে স্ব-স্ব অপরাধ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ডিবি পুলিশের উপকমিশনার উত্তম কুমার পালকে তার অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সদ্য যোগদানকারী উপকমিশনার মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞাকে ডিবির উপকমিশনার পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার এসএম রুহুল আমিন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করেছি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সঠিক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। ইতিমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে সব সদস্যকেই। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, ১৩ই মার্চ দুপুরে বরিশাল নগরীর দক্ষিণ চকবাজার এলাকার পুরাতন বিউটি হলের সামনে ডিবি পুলিশ একটি বাসায় মাদকের খোঁজে অভিযান চালায় গোয়েন্দারা। এসময় সাংবাদিক সুমন হাসান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সুমন জানান, অভিযানের বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ড হয়। এক পর্যায়ে আট পুলিশ সদস্য তার উপর চড়াও হয়। তারা সুমনকে মাদকসহ ধরিয়ে দিয়ে ক্রসফায়ারে দেয়ার কথা বলে। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজাতে রাজি না হওয়ায় সুমদকে বেধড়ক মারধর ও অ-কোষ চেপে ধরে অজ্ঞান করে ফেলা হয়। পরে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জ্ঞান ফিরলে তাকে আবার পেটানো হয়। খবর পেয়ে বরিশালের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা মহানগরের উপ পুলিশ কমিশনার গোলাম রউফকে বিষয়টি জানান। তিনি বিষয়টি সমাধানের জন্য সবাইকে তার কক্ষে নিয়ে আসেন।

এসময় সুমন হাসান তার গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, ‘বিউটি হল সংলগ্ন একটি বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের কাছে অভিযানের বিষয়টি জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের এসআই আবুল বাসার, তার টিমের সদস্য সাইফুল, মাসুদ ও আলতাফসহ ওই টিমের সকলে আমার সঙ্গে চড়াও হয়।’
‘আমি সাংবাদিক পরিচয় দিলে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আমার উপর। এক পর্যায়ে তারা আমাকে বেধড়ক মারধর শুরু করে এবং ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি করতে থাকে।’ ‘আমার বাসায় মাদক দিয়ে ধরিয়ে দেয়াসহ ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হয়। আমি সেখানে যাব না বললে তারা আমার অণ্ডকোষ চেপে ধরে এবং আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।

তারপর আমাকে ডিবি অফিসে নিয়ে বুকের উপর লাথি দেয়াসহ নানা কায়দায় নির্যাতন শুরু করা হয়।’সুমনকে উদ্ধারে যাওয়া সংবাদ কর্মীরা জানান, তারা গোয়েন্দা কার্যালয়ে গেলে অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সেখানে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে কয়েকজন সংবাদ কর্মীকে লাথি, কিল-ঘুষিও দেয়া হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও এসবের প্রমাণ পেয়েছেন। এ ঘটনার পরপরই সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে এ অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করা হয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে সৃষ্টি হয় সমালোচনার ঝড়।ওই ঘটনার পর এখনও বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতা চিকিৎসাধীন রয়েছেন সুমন হাসান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment