তনু হত্যার বিচার দাবিতে আবারো উত্তাল কুমিল্লা

তনু হত্যার বিচার দাবিতে আবারো উত্তাল কুমিল্লা

কুমিল্লা প্রতিনিধি:-
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে মঙ্গলবার। সহপাঠী হত্যার বিচার দাবিতে আবারো উত্তাল হয়ে উঠেছে ভিক্টোরিয়া কলেজ ক্যাম্পাস।
তনু হত্যার বিচার দাবিতে আবারো উত্তাল কুমিল্লা মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে জড়ো হয়ে তনু হত্যার বিচার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে অংশ নেন শত শত শিক্ষার্থী।

সবার দাবি অবিলম্বে তনুর হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক। অন্যথায় কুমিল্লা থেকে আবারো উত্তাল হয়ে সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া নাবিল মাহমুদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বোন তনু হত্যার ২ বছর পূর্ণ হলো আজ। এ দীর্ঘ সময় ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার হত্যাকারীদের এখনো চিহ্নিত করতে পারেনি। তাই সময়ের দাবি হয়ে গেছে আবারো আন্দোলনে নামার।

দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ করা না হলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আবারো তীব্র আন্দোল সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে তিনি জানান।

সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি তনু। পরদিন সকালে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে ক্ষত-বিক্ষত তনুর মরদেহ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর ২০১৬ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা।

দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল ফরেনসিক বিভাগ।

পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকা সিআইডি কার্যালয়ে বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, চাচাতো বোন লাইজু ও চাচাতো ভাই মিনহাজকে দিনভর পুরনো বিষয়গুলো জিজ্ঞেস করেন ঢাকা সিআইডির কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার সংগঠক খায়রুল আনাম জানান, একটি সুরক্ষিত স্থানে তনুকে হত্যা করা হয়েছে। দুই বছরেও অপরাধীদের শনাক্তে সিআইডি’র ব্যর্থতা প্রমাণ করে সাধারণ মানুষ কত অসহায়।

তনু হত্যা মামলাটি দীর্ঘদিন সিআইডিতে পড়ে আছে, কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। তনুর মা যাদের সন্দেহ করছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ না করে, সিআইডি তনুর পরিবারকেই বার বার হয়রানি করছে। মানুষ ধৈর্য্য ধরে আছে, এর দৃশ্যমান বিচার না হলে এক সময় মানুষের ধৈর্য্য’র বাঁধ ভেঙে যাবে।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হত্যাকারী কে জানা যাবে। কারণ সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ জানান, মামলার স্বার্থে আবারও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা মিশনে ছিলেন, তারা আসছেন। আরো ২/১ মাস সময় লাগবে। এর মধ্যেই রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের শনাক্ত করা হবে বলে তিনি জানান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment