নির্বাচনী হাওয়া ফরিদপুর-৩ : মোশাররফে ভরসা আ’লীগের বিএনপিতে চ্যালেঞ্জে কামাল

নির্বাচনী হাওয়া ফরিদপুর-৩ : মোশাররফে ভরসা আ'লীগের বিএনপিতে চ্যালেঞ্জে কামাল

দু’বারের এমপি ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কোনো বিকল্প নেই আওয়ামী লীগে- ফরিদপুর-৩ (সদর) আসন থেকে এবারও প্রার্থী হচ্ছেন তিনি। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক এমপি ও মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে এবার। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি দলের তিন নেতা মনোনয়নযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ায়।

বিএনপিতে শক্তিশালী প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ছাড়াও এবার মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন যুবদলের গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মাহাবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু, জেলা বিএনপির সভাপতি জহুরুল হক শাহাজাদা মিয়া ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল আলী আহসান মুজাহিদকে। নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটে এ জোটের। ফলে ফরিদপুর সদর আসনে নৌকার জয়ের ধারা সূচিত হয়। ১৯৯১ থেকে শুরু করে ২০০১ সালের নির্বাচন অবধি এ আসনে একটানা সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। ২০০৮ সালের তিনি বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও উল্লেখযোগ্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কাছে। এভাবে বিএনপির এ ‘দুর্গে’ নৌকার জয়পতাকা ওড়ে। এবার তাই আসনটিকে পুনরুদ্ধার করার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।

ফরিদপুর সদর আসনের নির্বাচন এবার অতীতের যে কোনো বারের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এরই মধ্যে ফরিদপুর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করতে সম্প্রতি পৌর এলাকার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। বৃহত্তর ফরিদপুরের জেলাগুলো নিয়ে পদ্মা নামে বিভাগ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার, যার সদর দপ্তর হবে ফরিদপুর সদরে। বড় রাজনৈতিক দল দুটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে এখানে গণসংযোগ শুরু করেছেন। সম্প্রতি এ আসনের সব ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও নৌকা ও ধানের শীষের ব্যাপক গণসংযোগ হয়েছে, যাতে ভবিষ্যৎ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা হয়েছে।

এ আসনে আওয়ামী লীগে সম্ভাব্য প্রার্থী মাত্র একজন হলেও প্রচারণায় থেমে নেই দলটির নেতাকর্মীরা। দলের ফরিদপুর কোতোয়ালি ও শহর কমিটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে সভা-সমাবেশ করছেন সমান তালে। এ আসনের বর্তমান এমপি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনও নিয়মিত এলাকায় আসা-যাওয়া করছেন। যোগাযোগ রাখছেন বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গিয়ে তিনি তুলে ধরছেন সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা, স্বাধীনতার পর দীর্ঘকাল উন্নয়নবঞ্চিত থাকা ফরিদপুরের সাম্প্রতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কথা। সাধারণ মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যাতে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারেন, সেজন্য সাধারণ মানুষের কাছে সমর্থন চাইছেন তিনি ও তার সহযোগী নেতারা।

একক দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ও বিজয়ের ব্যাপারে দৃঢ় নিশ্চয়তা ও আশাবাদ ব্যক্ত করে মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, শুধু কথার ফুলঝুরি দিয়ে ভোট পাওয়া যায় না, জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে হয়। তিনি এবং তার দল ফরিদপুরে সেটা বাস্তবে করে দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, জনগণ এখন আগের চেয়ে অনেক সচেতন, বিএনপি তাদের আর বোকা বানাতে পারবে না।

অপরদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এরই মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছেন বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। সম্প্রতি দেশব্যাপী বিএনপির বিভিন্ন কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করছেন তারা।

দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং ভোটকেন্দ্রে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকলে ফরিদপুর সদর আসনটি বিএনপি আবার ফিরে পাবে বলে আশাবাদী সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। এরই মধ্যে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি ও সামাজিক কার্যক্রমে তিনি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক দলে নেতৃত্ব বিকাশের ধারায় একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন চাইতে পারেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে নির্বাচন ছেলেখেলা নয়, জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী এই নেতা বলেন, ক্ষমতাসীনদের দুঃশাসনের জবাব দিতে বিএনপি সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে। এ কারণে অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত প্রার্থীরাই মনোনয়ন পাবেন।

জেলা বিএনপির ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তৎপর রয়েছেন দীর্ঘদিন। তিনি বলেন, রাজনীতি করতে এসে মামলা-জেলসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়লেও দলের দুঃসময়ে মাঠে থেকেছি। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন তাই তারই প্রাপ্য। তিনি বলেন, সুবিধাবাদী নেতাদের দিয়ে দল নির্বাচনী বৈতরণী পেরোতে পারবে না। তাই নতুন নেতৃত্বের বিকল্প নেই।

কেন্দ্রীয় যুবদলের গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মাহাবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু বিভিন্ন উৎসব ও পার্বণে গণসংযোগ করে আসছেন। সর্বশেষ দুর্গাপূজায়ও তিনি বিভিন্ন মণ্ডপে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে পিংকু বলেন, সাধারণ মানুষের সুখে-দুঃখে জেলা বিএনপির নেতাদের পাওয়া যায় না। তিনি নীরবে তাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

জেলা বিএনপির সভাপতি জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, অসুস্থতার কারণে সম্প্রতি গণসংযোগ করতে না পারলেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রেখেছেন। জীবনের দীর্ঘ সময় দলের জন্য ব্যয় করেছেন। তাই মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment