ছাতকে রেলের ভূ‌মি ও বাসা- বা‌ড়ি ভাড়া বানিজ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট লুঠে খাচ্ছে

 

সরকা‌রি সম্পদ
হাবিবুর রহমান নাসির ছাতক সুনামগঞ্জ
ছাত‌কে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী‌দের
বি‌রো‌দ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
উঠেছে। এখা‌নে রেলও‌য়ের বাসা-বা‌ড়ি ও ভূ‌মি
নি‌য়ে দীর্ঘ দিন ধ‌রে চল‌ছে ভাড়া বানিজ্য।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তৈ‌রি এক‌টি
সিন্ডিকেট লুঠে খাচ্ছে সরকা‌রি সম্পদ। জানা
যায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোন ছাতকের অধিনে
রয়েছে রেলওয়ের ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ, পাথর
কোয়ারী, কংক্রিট ম্লীপার প্ল্যান্ট এবং রেলওয়ে
ষ্টেশন, রেষ্ট হাউজ, রেলও‌য়ে হাসপাতাল, বাসা-বাড়ি
ও গোদামসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এছাড়াও ছাতক
এবং কোম্পানীগঞ্জ‌ে র‌য়ে‌ছে ক‌য়েক শতাধিক একর
মূল্যবান ভূমি। এখা‌নে রেলওয়ের এসব সম্পদকে
পুঁজিকরে কর্মকর্তা-কর্মচারী সি‌ন্ডি‌কেট
ব্যবসা-বানিজ্যসহ সরকা‌রি বিভিন্ন ধরনের সম্পদ
লুটপাঠে জড়িয়ে পড়েছে ব‌লে স্থানীয়‌দের
অ‌ভি‌যোগ । ছাতক রেলওয়ে এবং সিএসপিতে

বর্তমানে সরকারি টাকা ও সম্পদ আত্মসাতের
হরিলুট চলছে। ছাত‌কে কর্মরত রে‌লেওয়‌ের
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বি‌ভিন্ন কৌশ‌লে ও
প্রকা‌শ্যে সরকা‌রি মালামালসহ মোটা অং‌কের
টাকা আত্মসাত করে যাচ্ছে। কিছু দিন পর-পর
গোদাম চুরি হয়ে গেছে বলে ভূয়া চোরির ঘটনা
সা‌জি‌য়ে থানায় জিডি দিয়ে লক্ষ-লক্ষ টাকার
মালামাল বিক্রি করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছে
এ‌ সি‌ন্ডি‌কেট‌ের লোকজন‌। স্থানীয় একটি সুত্র
জানায়, রোপওয়ের নিজস্ব ব্যাংকা‌রের পাথর, রেলও‌য়ে
ষ্টেশ‌ন, গোদাম ও সিএসপিতে রাখা রেলওয়ের
কোটি টাকা মূল্যের স্ক্যাপমাল বিভিন্ন সময়ে
বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। ছাতক
শহরের সুরমা নদী এলাকায় রেলওয়ের নদীঘাটের ভূমি
ভাড়া, মার্কেট ভাড়া, ও গোদাম ভাড়া দিচ্ছেন
কর্মকর্তারা। এতে প্রতি মাসে অবৈধভাবে
জমি, মার্কেট ও গোদাম ভাড়ার লক্ষাধিক টাকা
যুগ-যুগ ধরে আত্মসাত করা হচ্ছে। এ ছাড়া
মাছ চাষ ও ধান ক্ষেতের জন্য রেলওয়ের ভুমি ভাড়া ও
ষ্টেশন সংলগ্ন এলাকার অধিক মূল্যবান কিছু
ভূমি ভাড়া দিয়ে টাকা আদায় করছেন
কর্মকর্তা-কর্মচারি সি‌ন্ডি‌কেট। রেলওয়ে ও
সিএসপির বিদ্যুৎ সংযোগ বাসা-বাড়িতে
দিয়েও টাকা কামাই করছে অসাধু এক‌টি চক্র।
গত ৬ মাস ধরে রেলওয়ের পুরাতন রেষ্ট হাউজসহ
বিআর-৩ এ, বিআর ৩০ এ, বিআর ৬ এ, বিআর ৭
এ-বি, বিআর ৮ এ-বি, বিআর ৬ডি, সিএসপি ৪
এ-বিসহ মোট-১৭টি বাসা বহিরাগতদের কাছে

ভাড়া দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সিএসপি’র
উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) ফারুক
হোসেন, বিআর ওয়ার্ক সুপারভাইজার শহিদুল
ইসলাম, এ ই এন (সিএসপি) মুজিবুর রহমান ও
সিএসপির গার্ড আবুবক্ক ও প্রতি মাসে প্রায়
লক্ষ টাকা বাসা ভাড়া আদায় করে ভাগ-বাটোয়ারা
করছেন তারা। এসব একাধিক বাসায়
অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা, মদ-গাঁজা,
ইয়াবা, ফেন্সিডিল সেবন ও বিক্রির অভিযোগ
রয়েছে। সিএসপির প্রধান সহকারী সুরঞ্জন
পূরকায়স্থ বাসা বরাদ্ধ নিয়ে ৬মাস বাসা ভাড়া
দেন নি। ষ্টেনো ট্রাইপিষ্ট ফারহানা আলী বিআর
২৬-বি বাসায় থাকেন কিন্তু বাসা ভাড়া দিচ্ছেন
না তিনি। নীচ তলায় ইউসুফ আলীও বিনা ভাড়ায়
অতিথি হিসেবেই বসবাস করছেন। সব মিলিয়ে
ছাতক রেলওয়ে এলাকা যেন অপরাধ, অপরাধী ও
লুটপাঠের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়ে উঠেছে।
বিআর, বিকেএইচ গাড়ি লোড টেন্ডার না দিয়ে
প্রায় দেড় লক্ষ ঘনফুট পাথর লোডের কার্যক্রম
কর্মচারীর মাধ্যমে পরিচালনা করছেন ফারুক
হোসেন ও মুজিবুর রহমান। এতে ৯ লক্ষ টাকা
হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ কাজটি
বর্তমানেও চলমান রয়েছে। সিএসপির নাইট
গার্ড আবুবক্কর জানান, ছাতক রেলওয়ের নির্বাহী
প্রকৌশলী আহসান জাবীরসহ কর্মকর্তারা এসব
বিষয়ে জড়িত রয়েছেন। ক্রাসার মিল মেরামতের
নামে ৮লক্ষ টাকার বিল উত্তোলন, সিএসপির দেয়াল
নির্মানে ১০লক্ষ টাকা আত্মসাত, কর্মচারিদের

দিয়ে পিতলের মোল্ড না¤॥^ার প্লেইট অর্ধেক করে
১২ লক্ষ টাকার বিল উত্তোলনসহ লক্ষ-লক্ষ টাকা
আত্মসাতের সাথে জড়িত রয়েছেন ফারুক
হোসেন, মুজিবুর রহমান, শহিদুল ইসলাম,
কর্মচারী প্রদিপ কুমার ও গার্ড আবুবক্করসহ
ক’জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসব বিষয়ে
কাগজে পত্রে টেন্ডার দেখানো হলেও বাস্তবে রেলওয়ের
কর্মচারীদের দিয়ে তারা সব কাজ করিয়ে থাকেন।
সিএসপিতে পাথর ও সিমেন্ট সংগ্রহের নামে
জালিয়াতি হচ্ছে বলেও রয়েছে একাধিক
অভিযোগ। পাথর গ্রহন না করেই বিল উত্তোলন ও
কম মূল্যে ৫০ কেজির স্থলে ৪০ কেজি ওজনের
সিমেন্টেরবস্তা ক্রয় করে জালিয়াতির মাধ্যমে
টাকা আত্মসাত করা হচ্ছে। রহিম আলী,
সুলেমান মিয়া, সালাহ উদ্দিন, রাজু আহমদ,
লাহিন চৌধুরীসহ স্থানীয় লোকজন জানান,
রেলওয়ে ও সিএসপির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
সরকারি সম্পদ চুরি ও লুটপাঠে জড়িত। এদের
বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা
নেয়ার দাবি জানান তারা। এসব বিষয়ে
সিএসপি’র উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী
(কার্য) ফারুক হোসেন টাকা আত্মসাতের
বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, রেলওয়ে ও
সিএসপির সকল কার্যক্রম টেন্ডারের মাধ্যমে হয়ে
থাকে। টেন্ডার ছাড়া রেলওয়ের কোন কাজ হয়নি
জানিয়ে এ ই এন মুজিবুর রহমান বলেন, এখানে
কোন দুর্নীতি নেই। রেলওয়ের বাসায় কোন
বহিরাগত লোকের বসবাসও নেই। সিএসপির

ভারপ্রাপ্ত সুপারভাইজার শহিদুল ইসলাম জানান,
রেলওয়ের ৬/৭টি বাসায় বহিরাগত লোক থাকেন।
কে-বা কারা এসব বাসার ভাড়া উত্তোলন করে তার
জানা নেই। ছাতক রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী
আহসান জাবীর এ ব্যাপারে জানান, রেলওয়েতে
দুর্নীতি-আত্মসাত, বাসা ও জমি ভাড়ার বিষয়ে
তাকে লিখিত ভাবে অবহিত করলে তিনি এর ব্যবস্থা
নিবেন। ##

হাবিবুর রহমান নাসির
ছাতক, সুনামগঞ্জ

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment