দেশের তিন সিটিতে ভোটের আগের দিন এক গবেষণা সংস্থার জরিপের ফলাফল তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলছেন, দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের বড় বিজয় এবং একটিতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাচ্ছেন তিনি।রোববার নিজের ফেইসবুক পেইজে রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (আরডিসি) করা ওই জরিপের ফলাফল তুলে ধরেছেন জয়।
তিনি লিখেছেন, “নির্বাচনী লড়াইয়ে বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের জন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই না।”
জয় জানাচ্ছেন, পুরো জুলাই মাস ধরে আরডিসির মাধ্যমে বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভোটারদের মধ্যে ওই জরিপ চালিয়েছেন তারা।
সেখানে দেখা যাচ্ছে, বরিশালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন জনপ্রিয়তায় বিএনপির প্রার্থী মো. মজিবর রহমান সরওয়ার ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।
এই জরিপে সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দীন কামরান বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীর চেয়ে এগিয়ে থাকলেও তাদের মধ্যে ব্যবধান কম।
গেল দুইবার নির্দলীয় প্রতীকে হলেও এবার রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে সিটি করপোরেশনের ভোট হচ্ছে দলীয় প্রতীকে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা এই ভোটগ্রহণ চলবে।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি- দুই দলই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় বলছেন, গত পাঁচ বছর ধরে আরডিসি-এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন জরিপ চালিয়ে আসছেন।
“তাদের জরিপের পদ্ধতি ও ফলাফল বরাবরই আমার সঠিক মনে হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, যেহেতু জরিপগুলো গত এক মাস ধরে করা হয়েছে এবং এর মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা জোরেশোরে চলেছে তাই জরিপ ও নির্বাচনের ফলাফলে কিছুটা তফাৎ হতে পারে।
“কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসী যে বরিশাল ও রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ বিশাল ব্যবধানে জয়ের পথে। যদিও সিলেটে আমরা কিছুটা এগিয়ে আছি, এই মুহূর্তে আসলে কাউকেই বিজয়ী হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।”
জয় লিখেছেন, “বিএনপি অনেক ধরনের অভিযোগ করতে থাকে, কিন্তু আসল কথা হচ্ছে তাদের কোনো জনপ্রিয়তাই নেই। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন দিন দিন বাড়ছে।”
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, সম্প্রতি গাজীপুর ও খুলনা সিটির নির্বাচনে ‘ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির’ মাধ্যমে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এখন ‘সেই কৌশল’ তারা সোমবারের তিন সিটির ভোটেও কাজে লাগাতে চাইছে।
ওই অভিযোগের পাল্টায় জয় লিখেছেন, “আমি আমাদের দলীয় নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন সজাগ থাকেন। কারণ আমাদের আশংকা বিএনপি ভোট কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিয়ে সেই দায় আমাদের উপর চাপানোর চেষ্টা চালাবেন।”
গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে এক বিএনপি নেতার কথিত ফোনালাপের প্রসঙ্গ টেনে জয় তার ফেইসবুক পোস্টে বলেন, “বিএনপির প্রার্থীরা যতই ভোটারদের কাছে যান, ততই তারা বুঝতে পারেন তাদের দল বাংলাদেশের মানুষদের থেকে কতটা দূরে সরে গিয়েছেন। তাই আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের একমাত্র কৌশল।”
এই তিন সিটির সর্বশেষ ভোট হয়েছিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। সেই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের কাছে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি হয়।
তার আগে ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জরুরি অবস্থার মধ্যে এই তিন সিটির ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি।
কিন্তু স্থানীয় বিএনপি নেতারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ওই নির্বাচনে অংশ নেন। তাতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়ী হন।