কেরানীগঞ্জে দু গ্রামবাসী মধ্যে হামলা – পাল্টা হামলায় নিহত ১ আহত ৫০ জন

 মোঃ মাসুদ (কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি )

দক্ষিন কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাপুর এলাকায় রিক্সা চালককে মারধর করার প্রতিবাদ করায় দফায় দফায় দু’গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে টেটা-বল্লম ও ইটপাটকেল নিয়ে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বুধবার এক ব্যাক্তি নিহত হয়েছে। নিহত ব্যাক্তির নাম মোঃ তানভীর ভুইয়া (৪৮)। এ হামলার ঘটনায় দু’পক্ষের কমপক্ষে ৫০ আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হামলার অনেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মঙ্গলবার রাতে করেরগাও এলাকার আশকর মেম্বারের ছেলে এক রিক্সা চালককে মারধর করে। এ সময় সেখান দিয়ে পার্শ্ববর্তি গ্রাম কলাকান্দি এলাকায় মোঃ মজিবর মাদবর বাড়ি ফিরছিলেন। ঘটনাটি দেখে মজিবর মাদবর আলী বাধা প্রদান করে। রিক্সা চালককে মারধর করতে না বলায়,ক্ষিপ্ত হয়ে রিক্সা চালকের পরিবর্তে মজিবর মাদবরকে মারধর করে। এ ঘটনাটি কলাকান্দি এলাকার লোকজনের কাছে পৌছলে রাতেই দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট হয়। এ নিয়ে (আজ) বুধবার স্থানীয় আ,লীগ ক্লাবে বিচার হওয়ার কথা থাকলে কলাকান্দি গ্রামের লোকজন আ,লীগ অফিসে এসে অবস্থান আসলেও করের গাও এর লোকজন বিচারে না এসে ফের হামলা চালায়। এরপর কলাকান্দি গ্রামের লোকজন পাল্টা হামলা চালালে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে। এ সময় সড়কের দু’পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে থানা, ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব-১০ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ডিবি,থানা পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে অবস্থান নেওয়ার পর হামলাকারীরা গোপনে থেকে ইট পাটকেল মারতে থাকে। ইটপাটকেলের এক পর্যায়ে করেরগাও এলাকার লোকজন কলাকান্দি গ্রামে ঢুকে হামলা চালিয়ে ইটপাটকেল মারতে থাকে। এ সময় কলাকান্দি গ্রামের লোকজন বিভিন্ন বাড়িতে অবস্থান নেন। নিহত তানভীর ভুইয়াও কলাকান্দি গ্রামের নুর আলীর বাড়ির ছাদে অবস্থান নেয়। তখন বিপক্ষ দলের কয়েকটি ইট নিহত তানভীরের নাকে ও মাথায় আঘাত এসে লাগে তানভীর ছাদ থেকে পড়ে যায় বলে অভিযোগ করেন কলাকান্দি বাসী। পরে তানভীরকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্ত্যব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। তানভীরের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌছলে দু’পক্ষের মধ্যে ফের হামলা-পাল্টা হামলা শুরু হয়। এ হামলা দু’পক্ষের অন্তত ৩০জন আহত হয়। পরে ডিবি, থানা পুলিশ,সিভিল ডিফেন্স (ফায়ার সার্ভিস) ও র‌্যাব সদস্যরা লাঠিপেটা করে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিাতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তানভীরের মৃত্যুর খবরে তার বাড়িসহ পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার স্ত্রী কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন আমার স্বামী আজ সকালে আমাদের বাজার করে দিয়ে বাহিরে যান তার কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যুর খবর শুনতে পাই, আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিনা সে আমাদের মাঝে নেই,আমাদের এখন কি হবে, আমি আমার স্বামী হত্যার সঠিক বিচার চাই। এ হত্যার সাথে জড়িত আশকার মেম্বার ও তার ছেলে আলী আজগর, সোহেল ও মোহাম্মদ হোসেন, সেলিম সহ জড়িত সকলের ফাঁসি চাই, নিহত তানভীর ভূঁইয়ার এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। আমি তাদের নিয়ে এখন কোথায় যাবো। এ ব্যাপারে কলাকান্দি গ্রামের নিহতের চাচাত ভাই বারেক মাদবর বলেন, করেরগাঁও এলাকার আশকর মেম্বার ও তার বড় ছেলে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ব্যাপক অত্যাচার, জুলুম করে আসছে । তারা নিজেরাই গায়ে পরে সাধারন মানুষের সাথে মারামারি করে,তারা ইচ্ছে করেই আজ আমাদের উপরে প্রথম হামলা চালায়, তাদের হামলায় আমাদের গ্রামের ১৫/২০জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে জহিরুল, খোকন, আলিম উল্লাহ, রিফাত, জাহিদ, শাহ্নেওয়াজ, অলিসহ অনেকেই আহত হয়েছেন, আজকের এই ঘটনার জন্য আমি একা না আমরা কলাকান্দির সকলেই এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই এবং নিহত তানভীর ভূঁইয়ার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। আশা করি আমরা সঠিক বিচার পাবো। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আলী আজগর জানান, মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় বুধবার সকালে স্থানীয় আ,লীগ অফিসে বিচার হওয়ার কথা থাকলে বিচারের আগেই কলাকান্দি গ্রামের লোকজন বিচারে আশা আমাদের করেরগাও এলাকার লোকজনের উপর হামলা চালালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তানবীর আমার বাড়ির পাশে নুর আলীর বাড়ির ছাদে উঠে আমাদেরকে ইট মারতে উঠে সে নিজেই পড়ে মারা যায় এবং বারেক মাদবরের শালক কোন্ডা ইউনিয়নের হাবিবের শর্টগান দিয়ে ৫/৬ টি গুলি ছুড়লে আমার ছোট ভাই সোহেল সহ আরো ১ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় আমাদের গ্রামের কমপক্ষে ২০/২৫জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ্ জামান বলেন, বুধবার বেলা ১২ টার দিকে করের গাঁ ও কলাকান্দি এই দুই গ্রামবাসীর মাঝে ব্যাপক মারামারি, ধাওয়া -পাল্টা ধাওয়ার খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কিছুক্ষণ পর আবারো ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে পুলিশ আবারো লাঠিচার্জে মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনি, এঘটনায় এখনো কোন পক্ষ থেকে থানায় মামলা বা অভিযোগ দিতে আসেনি। হাসপাতালে আমার পুলিশ নিহতের সুরতাহাল প্রতিবেদন করার জন্য গেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা হওয়া পর আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment