জীবননগরে আরিফ ফুডের ইদুরের দেহাবশেষ যুক্ত পাউরুটি খেয়ে বমি করে অসুস্থ এক নারী

মামুন মোল্লা ,চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:

নিউজ করা হলে দেখে নেওয়ার হুমকি! চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে যত্রতত্র ও নোংরা পরিবেশে গড়ে ওঠা আরিফ ফুড বেকারীর রুটি বিস্কুট খেয়ে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য) খাদ্য একটি প্রধান ও অন্যতম মৌলিক চাহিদা। জীবন ধারণের জন্য খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। আর এ বিশুদ্ধ খাদ্য সুস্থ ও সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে একান্ত অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে বিশুদ্ধ খাবার প্রাপ্তি কঠিন করে ফেলছে কিছু বিবেকহীন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। জীবননগর ইসলামপুর গ্রামে অবস্থিত কালি-ঝুলি মাখা আরিফ ফুডের কারখানার ভেতরে-বাইরে কাদাপানি, তরল ময়লা-আবর্জনাযুক্ত নোংরা পরিবেশ। দুর্গন্ধের ছড়াছড়ি। আশপাশেই নর্দমা ময়লার স্তূপ। মশা-মাছির ভনভন আর একাধিক কাঁচা-পাকা টয়লেটের অবস্থান। কারখানাগুলো স্থাপিত হয়েছে টিনশেড বিল্ডিংয়ে। বহু পুরনো চালার টিনগুলো স্থানে স্থানে ছিদ্র থাকায় বৃষ্টির পানি অনায়াসেই কারখানা ঘরে ঢুকে। এতে পিচ্ছিল কর্দমাক্ত হয়ে থাকে মেঝে, কাদাপানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় খাদ্য-সামগ্রীতে, কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা নেই, দম বন্ধ হওয়া গরমে থাকে রাত-দিন গরমে ঘামে চুপসানো অবস্থায় খালি গায়ে বেকারি শ্রমিকরা আটা-ময়দা দলিত মথিত করে। সেখানেই তৈরি হয় ব্রেড, বিস্কুট, কেকসহ নানা লোভনীয় খাদ্যপণ্য। অভিযোগ আছে উৎপাদন ব্যয় কমাতে এসব বেকারির খাদ্যপণ্যে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল, পচা ডিমসহ নিন্মমানের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়। কেক ও ব্রেড তৈরির জন্য সেখানে পিপারমেন্ট, সোডা ও ব্রেকিং পাউডার রাখা হয়েছে পাশাপাশি। বেকারির কারখানায় উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য সতেজ রাখতে ট্যালো, ফ্যাটি এসিড ও ইমউসাইল্টিং, টেক্সটাইল রঙসহ নানা কেমিক্যালও ব্যবহার করতে দেখা যায়। আশপাশের কারখানাগুলোতে দেদারছে ব্যবহার হচ্ছে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল ও পচা ডিম। বেকারিতে পচা ডিম ব্যবহার যেন সাধারণ বিষয়। এসব নিন্মমানের বেকারী পন্য কিনে মানুষ কোন সময় ইদুরের দেহাবশেষ, ছাগলের নাদি, মশা- মাছি, টিকটিকি, পোকামাকড়, মাথার চুল ইত্যাদি খাবারের সাথে খেয়ে বমি করে মারাত্মক ভাবে অসুস্থ হচ্ছে। গতকাল সোমবার বিকালে জীবননগর পৌর এলাকার ইসলামপুর গ্রামের সোহেল তার অসুস্থ স্ত্রীর জন্য একই এলাকার সাত্তারের চায়ের দোকান থেকে একটি পাওরুটি কিনে নিয়ে যায়। এমতাবস্থায় সোহেলের স্ত্রী আকলিমা খাতুন রুটি চিবিয়ে খাওয়ার সময় সন্দেহ হলে মুখ থেকে রুটি বের করে দেখে ইদুরের লেজ ও দেহাবশেষ। এসময় সে বমি করে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। অভিযোগ করেন একই এলাকার আইনাল হক, আলামিন, নাসির, সাত্তার তারা জানান এসমস্থ খাবার আমরা বাচ্চাদের জন্য কিনে নিয়ে যায়। খাবার এরকম স্বাস্থ্য ঝুকি থাকলে আমরা কার কাছে যাবো। বেকারীর এসমস্থ খাবার খেয়ে তারা নিজেরাও অসুস্থ হয়েছেন। এঘটনার সুত্র ধরে সরেজমিনে বেকারীতে গেলে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকী প্রদান করে বেকারী মালিকের কন্যা হ্যাপী খাতুন। এবং সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন করে। জীবননগর পৌর শহরে মোট তিনটি বেকারী রয়েছে। এর মধ্যে আব্দুল হান্নানের আরিফ ফুড, পাঙ্খী মিয়ার রানী ফুড, মোজাফফর হোসেনের মুজাহিদ ফুড । এসমস্থ বেকারীর মধ্যে আরিফ ফুডের পন্য একে বারেই নিন্ম মানের ময়দা দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে সম্পূর্ন নোংরা পরিবেশে অপরিষ্কার পাত্রে খাবার তৈরী করা হচ্ছে। রুটি- বিস্কুট তৈরীর সময় এবং ময়দার খামীর করার সময় কর্মচারীদের মাথা মোড়ানো টুপি ও মাস্ক ব্যবহার করা হয়না এই বেকারীতে। গোপন সুত্রে জানা গেছে পুরাতন পোকাযুক্ত ময়দা ব্যাবহার ও পচা ডিম ও খামারের অসুস্থ রোগাক্রান্ত মুরগীর মাংস সরবারাহ করে ডিম প্যাটিস ও মাংস প্যাটিস তৈরী করা হয়। যা মানুষ না জেনে হরহামেশাই কিনে খেয়ে পেটের পীড়ায় ভুগছেন। এসব বিষয়ে প্রতিকার ও আইনগত ভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহবান জানান স্থানীয় এলাকাবাী ও ভুক্তভোগী মানুষেরা। এবিষয়ে জীবননগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ সিরাজুল ইসলাম এবিষয়টি গুরত্ব সহকারে দেখে তিনি আইনী পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে জানান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment