মাদ্রাসার ৫ শিশুকে বলাৎকার অভিযোগ ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি মাদ্রাসার পাঁচ শিশু ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গাঢাকা দিয়েছেন ওই দুই শিক্ষক। গোদনাইল শান্তিনগর ক্যানেলপাড় এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া যাইনুল আবেদীন মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার শিশুদের পরিবার গতকাল মঙ্গলবার সকালে মাদ্রাসায় এসে জড়ো হয়ে অভিযুক্তের বিচার দাবি করে। তখন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটি আইনের শরণাপন্ন না হয়ে সালিশি বৈঠকে প্রতি শিশুকে পাঁচ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

সরেজমিন ওই মাদ্রাসায় গিয়ে মোহতামিম মাওলানা আবদুর রহিমকে পাওয়া যায়নি। তবে সহকারী শিক্ষক হাফেজ আবদুল আলীম ও কারি মো. জুয়েল বলেন, আমরা ওই ছাত্রদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা আমাদের কাছে সব বর্ণনা করেছে। আজ (মঙ্গলবার) সকালে বড় হুজুর, মাদ্রাসার প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি কাজী মো. মহসিন, তার ছোট ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী ওয়াসিম ও শাহজাহান মাদবরসহ এলাকার আরও কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি মাদ্রাসায় এ বিষয়ে মিটিং করেছেন।

ঘটনার শিকার শিশু ছাত্র ও তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই থেকে আড়াই মাস ধরে মাদ্রাসার শিক্ষক কারি লোকমান হোসেন ও আজগর আলী ৯ থেকে ১২ বছর বয়সের পাঁচ ছাত্রকে কৌশলে রাতে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক বলাৎকার করেন। তারা ছাত্রদের এ ঘটনা কাউকে বলতে নিষেধ করেন। জানালে তাদের মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। শিশুরা ছোট হওয়ায় ভয়ে অভিভাবকের কাছে প্রকাশ করার সাহস পায়নি। এরই মধ্যে নির্যাতনের শিকার ১২ বছরের এক ছাত্র গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পারিবারিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অপর এক ছাত্র জানায়, তাকে বলাৎকার করতে না পেরে বিদ্যুতের তার দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে।

মাদ্রাসার মিটিংয়ে থাকা শাহজাহান মাদবরের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সামাজিক মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে আমরা এ বিষয়টি সমাধানের জন্য বসেছিলাম। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক পলাতক থাকায় আগামী ১০ তারিখ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি কাজী মহসিন বলেন, সোমবার জানতে পারি শিক্ষকের দ্বারা কয়েকজন ছাত্র নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আমরা কয়েকজন মাদ্রাসায় গিয়ে রহিম হুজুরকে নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু অভিযুক্তরা পলাতক থাকায় আগামী ১০ তারিখের মধ্যে তাদের হাজির করার জন্য চাপ দিয়েছি। আর মাদ্রাসার সভাপতি ওমরাহ পালনের জন্য দেশের বাইরে থাকায় থানায় জানানো হয়নি। তিনি আগামীকাল (আজ) দেশে এলে থানায় তারা একটি অভিযোগ দেবে।

৫ হাজার টাকা করে দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কেন টাকা দেব? ওই শিক্ষক তো আমাদের কারও আত্মীয় নয়। মাদ্রাসার বিরোধী কেউ হয়তো এ অপপ্রচার চালাচ্ছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শাহীন শাহ্ পারভেজ বলেন, এ ঘটনাটি আমার জানা নেই। এমনকি কেউ অভিযোগ করেনি। বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment