স্বপ্নের মেট্রোরেলে নাম লেখালেন নওগাঁর ছেলে নিশান

স্বপ্নের মেট্রোরেলে নাম লেখালেন নওগাঁর ছেলে নিশান

বিকাশ চন্দ্র প্রামানিক, নিজস্ব প্রতিনিধি:   বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ইতিহাসের বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল। স্বপ্নের এই মেট্রোরেলের বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে উত্তরা স্টেশন থেকে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নিজে টিকিট কেটে প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলে চড়েন। আর  স্পপ্নের এই মেট্রোরেলের লোগো বানিয়ে ইতিহাসে অংশ নিলেন নওগাঁর কৃতি সন্তান আলী আহসান নিশান। মেট্রোরেলের লোগো ছাড়াও মেট্রোরেলের স্টেশনে যে সাইনগুলো থাকবে সেগুলোও তাঁর করা। নিশানের জন্মস্থান নওগাঁ শহরের ধামকুড়ি এলাকায়। বাবা মৃত আব্দুস কুদ্দুস। তিনি ছিলেন একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। সৈয়দপুরে রেলের লোকোমোটিভ ওয়ার্কসপের (ইঞ্জিন হল্ড কারখানার) তত্ত্বধায়ক হিসেবে কাজ করতেন নিশানের বাবা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ থেকে সদ্য পাস করা উজ্জ্বল শিক্ষার্থী আলী আহসান নিশান নিজের বানানো লোগো সম্পর্কে জানান, এই লোগের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে পুরো বাংলাদেশকে। একটা লাল সূর্য উঠছে। নিচে বাংলার চিরচেনা সবুজের মাখামাখি। দুইয়ে মিলে বাংলাদেশ। মেট্রোর ‘এম’ অক্ষরটাও এমনভাবে বসানো, মনে হবে যেন প্লাটফর্ম। রেলটির দিকে কিছুক্ষণ তাকালেই মনে হবে, ওটা স্থির নয়, ছুটে চলেছে। উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে ইঙ্গিত করছে ছুটে চলা রেল। লোগো তৈরির গল্প জানতে চাইলে নিশান বলেন, ‘সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরিয়েছি। কোনো কাজ নেই। চলতি বছরের শুরুর দিকে একদিন বিভাগের এক শিক্ষকের কাছে যাই। তিনি আমাকে বললেন, মেট্রোরেলের লোগো নির্বাচনের জন্য প্রযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। তুমি প্রতিযোগিতায় অংশ নাও। স্যারের আহ্বানে আমি তিনটি লোগো বানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে জমা দিলাম। আর অনেকেই লোগো বানিয়ে জমা দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো তিনটি লোগোর মধ্যে আমার দুটো ও অন্যজনের একটি পাঠানো হয়। এরপর জাতীয়ভাবে জমা হওয়া লোগোগুলোর মধ্যে থেকেও শর্টলিস্ট হয়। সেখান থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার লোগোটি চূড়ান্ত করেন।’ লোগোর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যে উন্নয়নের গতি, সেটা লোগোর দিকে তাকালে লক্ষ করা যাবে। সাধারণত লোগো স্থির প্রকৃতির হয়। এর রঙের ব্যবহারেও এক ধরনের ভারসাম্য থাকে। যেন চোখটা আটকে থাকে। কিন্তু এই লোগোতে সেটা ইচ্ছে করেই রাখা হয়নি। এতে এক ধরনের গতি আছে।’ প্রতিযোগিতায় নিশানের বানানো লোগো নির্বাচিত হওয়ার পর সেই লোগো নিয়ে কয়েকবার কাজ হয়েছে বলে জানান নিশান। তিনি বলেন, এখন লোগোতে থাকা ‘এম’ অক্ষরটি লিখে যে প্লাটফর্ম বোঝানো হয়েছে, প্রথমে তা ছিল না। বিশ্বের ৩৫টি দেশে মেট্রোরেলের লোগোতে ‘এম’ রয়েছে। ওটাকে যুক্ত করার সময় একটু নতুনত্ব আনা হয়েছে। এছাড়া লোগো যখন বানানো শুরু করি, তখন মেট্রোরেল দেখতে কেমন সেটাও জানা ছিলো না। তাই প্রথম যে রেলটা ব্যবহার করেছিলাম সেটি দেখতে বুলেট ট্রেনের মতো ছিলো। পরে যখন মেট্রোরেলের ইঞ্জিন দেখলাম তখন কিছুটা পরিবর্তন করে দেওয়া হলো।’ নিশান আরও বলেন, ‘পুরো কাজ শেষ করতে ছয় মাসের মতো লেগেছে। চলতি বছরের মে মাসে যখন কাজটি হলো আমি ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম। অনেক প্রতিষ্ঠানে লোগো করেছি, কিন্তু এতটা ভালো লাগা কাজ করেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হওয়ার আনন্দ অবশ্যই অন্যরকম।’মেট্রোরেলের স্টেশনে যে সাইনগুলো থাকবে, সেগুলোও তাঁর করা। তিনি বলেন, ‘সাইনের কাজ করতে গিয়ে দেশের সব স্তরের মানুষ যেন চিহ্নগুলে দেখেই বুঝতে পারেন কোনদিকে যেতে হবে, টয়লেট কোনদিকে, টিকিট কোথায় পাবেন, এসব ভাবতে হয়েছে।’ মেট্রোরেলের লোগো ও স্টেশনের সাইন বানানোর অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নিশান বলেন, ‘দেশের মানুষ যে জিনিসগুলো ব্যবহার করবেন সেখানে আপনার সম্পৃক্ততা আছে যখনই জানবেন, সেটার অন্যরকম একটা অনুভূতি হবেই।’ নিশানের লক্ষ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ায়। ইতোমধ্যে নিশান অসংখ্য স্মৃতিফলকের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। চারুকারুর নান্দনিকতায় নিজেকে মেলে ধরেছেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কাজে। চাকরি নয়, নিজেই কিছু করার অদম্য স্পৃহা নিয়ে ছুটছেন এই তরুণ মেধাবী উদ্যোক্তা।  এ ব্যাপারে আলী আহসান নিশান বলেছেন, ‘যুগযুগ  বেঁচে থাকার মতো কিছু করতে চাই। এখন তেমন কিছু করতে পারিনি। পাশাপাশি যাপিত জীবনে নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।’ নিশান নিজেই গড়ে তুলেছেন একটি চারুকারু স্কুল। যেখানে শিশুরা এসে ছবি আঁকা শিখে; আঁকে নিজেরাও। সেই ছবি আঁকা নিশানকে প্রতিদিন অনুপ্রাণিত করে। নিশান অক্সিজেন পান নিজ কর্মস্পৃহায়। মেট্রোরেলের লোগো বানিয়ে ইতিহাসের অংশ হওয়া নিশানকে নিয়ে গর্বিত নওগাঁর মানুষ। নওগাঁ পৌরসভার ধামকুড়ি এলাকার বাসিন্দা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নওগাঁ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম বলেন,  ‘স্বপ্নের মেট্রোরেলের লোগো বানিয়েছে, আমাদের গ্রামের সন্তান নিশান। দোয়া করি, ইতিহাসের অংশ হওয়ার মতো নিশান যেন আরও ভালো ভালো কাজ করতে পারে।’ নওগাঁর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি ডিএম আব্দুল বারী বলেন, ‘নিশানের মধ্যে যে শিল্পী সত্তা আছে আশা করি, ভবিষ্যতে তাঁর আরও অনেক ভালো কাজ দেখতে পারবে। তাঁর দ্বারা দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।’ উল্লেখ্য, মেট্রোরেলের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় এ মেগা প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল লাইন (উত্তরা-মতিঝিল) নির্মাণ কাজ ২৬ জুন ২০১৬ সালে শুরু হয়। আজ এই লাইনের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন হয়।   আরও পড়ুন.. অনলাইন শপিং … জেনারেল উইন্ডো এসির দাম ও কোথায় পাবেন বাংলাদেশে ? সনি টিভি অফার | Sony showroom Bangladesh এসির দাম ২০২২| বাংলাদেশে শীর্ষে থাকা ৫টি এসির রিভিউ- Click Here অনলাইন শপিং বাংলাদেশ | গ্রী এসির দাম | Gree AC Showroom Bangladesh গ্রি ইনভার্টার এসির দাম | Click here

বিস্তারিত