বাংলা নববর্ষ !

পৃথিবীতে প্রচলিত অধিকাংশ বর্ষপঞ্জির উৎপত্তি কোনো না কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত, কিন্তু বাংলা নববর্ষের সঙ্গে ধর্মীয় অনুষঙ্গ নেই। কৃষিকাজ ও খাজনা সংগ্রহের ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই এর প্রচলন। পরে যুক্ত হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের দেনা-পাওনার হিসাব মেটানো। সময়ের ব্যবধানে পয়লা বৈশাখ হয়ে ওঠে বাঙালির সর্বজনীন সাংস্কৃতিক আনন্দ-উৎসব। ধর্ম-সম্প্রদায়নির্বিশেষে বাংলা ভূখণ্ডের সব মানুষের প্রাণের উৎসব।

অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির এই উৎসব আয়োজনে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। কিন্তু আবহমান সংস্কৃতির চেতনায় ঋদ্ধ এ দেশের মানুষ তা মেনে নেয়নি। তারা প্রতিবাদ করেছে। ষাটের দশকে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসব বাঙালির আত্মপরিচয়ের আন্দোলন-সংগ্রামকে বেগবান করেছে।

শুরুর দিকে পয়লা বৈশাখের উৎসব ছিল মূলত গ্রামাঞ্চলকেন্দ্রিক। শহরে-বন্দরেও এটি হালখাতার মধ্যে সীমিত ছিল। বর্তমানে এই উৎসব শহরাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের আদলে প্রায় সর্বত্র অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে। বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। তরুণ-তরুণীরা বৈশাখী উৎসবের রঙিন পোশাক পরে বেরিয়ে আসে, ঐতিহ্যবাহী দেশি খাবারের উৎসব চলে। সর্বত্র দেখা যায় নতুন প্রাণের উচ্ছ্বাস।

এটি যেমন আনন্দের, তেমনি বেদনার দিক হলো বিগত একাধিকবার পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে জঙ্গি–সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ঘটেছে নারী নিগ্রহের ঘটনাও। কিন্তু এর প্রতিকারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবার ঢাকায় অনুষ্ঠান আয়োজনের ওপর যে বিধিনিষেধ জারি করেছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকার সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নাম করে উৎসব পালনকারী সাধারণ মানুষকে ঘরে বসে থাকতে বলতে পারে না। যারা এই সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে কিংবা নববর্ষ নিয়ে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছে, কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে তাদের বিরুদ্ধেই।

 মানুষ নির্বিঘ্ন-নিরাপদ ও আনন্দমুখর পরিবেশে ১৪২৩ বঙ্গাব্দকে বরণ করুক। সবার জীবন হোক শান্তিময়—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment