নির্ধারিত কাজের বাইরে প্রকল্পের গাড়ির ব্যবহারে সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ

নির্ধারিত কাজের বাইরে প্রকল্পের গাড়ির ব্যবহারে সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ

নির্ধারিত কাজের বাইরে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের টাকায় কেনা গাড়ি ব্যবহারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

রোববার (৩ জানুয়ারি) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩৮টি প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সাবেক চিফ হুইপ আব্দুস শহীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য কমিটি সদস্য চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, এ বি তাজুল ইসলাম, বজলুল হক হারুন, আহসান আদেলুর রহমান, ওয়াসিকা আয়শা খান এবং খাদিজাতুল আনোয়ার অংশ নেন।

সংসদীয় কমিটি বলেছে, প্রাণীসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ি কেনা বাদে প্রকল্পটির আর কোনো বাস্তব অগ্রগতি নেই। সোয়া ৪০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে দুই বছর পার হওয়ার পরে কাজ হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ।

এছাড়া মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পগুলোর মন্থর গতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তারা। কমিটি মনে করছে, প্রকল্প কাজে ধীরগতি এবং আর্থিক সুশাসন না থাকায় সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ৩৮টি প্রকল্পের মধ্যে ২৫ শতাংশের নীচে কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১৩টি প্রকল্পের, ৫০ শতাংশের নীচে ৮টি ৫১ থেকে ১০০ শতাংশের ১৬টি আর একটি প্রকল্প শতভাগ কাজ করেছে। ৪২৮ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যায়ে প্রাণীসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) ২০১৯ সালের পহেলা জানুয়ারি শুরু হয়। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু গত নভেম্বর পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। প্রকল্পের জন্য একটি ফোর হুইলার, ৫টি ডাবল কেবিন পিক-আপ, একটি মাইক্রোবাস এবং ৪১৮টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে।

বৈঠক শেষে কমিটি সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের দুরাবস্থার কারণে আস্থা কমেছে। ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা যে প্রকল্পের সেখানে কাজ হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। গাড়ি কেনা ছাড়া আর কোনো কাজই করেনি। প্রকল্প পরিচালক যুগ্মসচিব, তিনি সরকারি গাড়ি পান। তাহলে আবার প্রকল্পের গাড়ি কেন? আগামী এক মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের সার্বিক কাজ নিয়ে কমিটিতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এই প্রকল্পের অধীনে করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি বলে জানান কমিটি সভাপতি আব্দুস শহীদ।

বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রাণীসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে গাড়ি কেনা বাদে প্রকল্পটির আর কোনো বাস্তব অগ্রগতি না থাকায় এবং প্রকল্পের গাড়ি/মোটরসাইকেল প্রকল্পের কাজের বাইরে ব্যবহার নিয়ে কমিটির পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

এদিকে মৎস্য অধিদপ্তর থাকার পরেও মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির সভাপতি বলেন, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এত অধিদপ্তর। তার ওপর আবার কর্পোরেশনের কাজ কী? তারা জানিয়েছে, ১০ কোটি টাকা লাভ করেছে। কিন্তু ওই কর্পোরেশনে ২৯৭ জন লোকবল। তাহলে লাভ কিভাবে হল? লোকবলের বেতন-ভাতা কত?

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, পিপিআর রোগ নির্মূল এবং ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি। ২০২২ সালে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ২ শতাংশ। ৩৪৫ কোটি ২ লাখ ৯৯ টাকার এই প্রাক্কলিত এই প্রকল্পে এর মধ্যে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৬১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।

সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুন মাসে। ২০২৩ সালের জুনে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ১০ শতাংশ। এক হাজার ৮৬৮ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ টাকার প্রাক্কলিত ব্যায়ের এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৮ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

আপনি আরও পড়তে পারেন