ফিরে দেখা : আন্তর্জাতিক ফুটবল ২০১৭

‘শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিয়ে’ মেসির
বছর জুড়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে ছিল বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা লিওনেল মেসির বিয়ে। চলতি বছরের ৩০ জুন শৈশবের বান্ধবী অ্যান্তোনেল্লা রোকুজ্জোকে বিয়ে করেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা। আর্জেন্টিনার রোসারিওর সিটি সেন্টার ক্যাসিনো হোটেল কমপ্লেক্সে বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করেন বার্সেলোনা সুপারস্টার।

রোকুজ্জোর পাঁচ বছর বয়স থেকেই তার সঙ্গে পরিচয় মেসির। ১৩ বছর বয়সে মেসি আর্জেন্টিনা ছেড়ে বার্সেলোনায় চলে আসলেও তাদের ভালবাসার টান কমেনি। দীর্ঘ পথচলার পর এ বছরের জুনে বিয়ে করেন মেসি। তার চেয়ে মাত্র এক বছরের ছোট স্ত্রী রোকুজ্জো। জাঁকজমকপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ২৬০ জন। তাদের মধ্যে ফুটবল তারকা সহ অন্যান্য সুপরিচিত নামী দামী ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বার্সেলোনায় মেসির সতীর্থ খেলোয়াড় লুইস সোয়ারেজ, নেইমার, জেরার্ড পিকে এবং তার স্ত্রী, কলম্বিয়ার পপ স্টার শাকিরা। ফুটবলের এই বরপুত্রের বিয়েকে আর্জেন্টিনার একটি পত্রিকায় “শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিয়ে’ বলেও উল্লেখ করেছে।

নেইমারের পিএসজি রেকর্ড
চলতি মৌসুমের শুরুতে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আক্রমণ ত্রয়ী ‘এমএসএন’ (মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার) ভেঙে যায়। বার্সেলোনা ছেড়ে ক্লাব ফুটবলে ট্রান্সফার ফি’র আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজিত) পাড়ি দেন নেইমার। তাকে দলে ভেড়াতে রেকর্ড সংখ্যাক ২২২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হয়েছে পিএসজিকে।আগের বছর ফরাসি তারকা পল পগবা ১০ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে (১০৫ মিলিয়ন ইউরো) জুভেন্টাস ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে গিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের আসনে বসেন। তার দ্বিগুণেরও বেশি ট্রান্সফার ফি’তে দলবদলের বাজারের নতুন রেকর্ড গড়েন ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন নেইমার। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার হিসেবে নিজের সেরাটা জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন নেইমার। জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য ইতিমধ্যেই সেরা ফুটবলারদের দৌড়ে মেসি ও রোনালদোর সঙ্গে তৃতীয় স্থানটি দখলে নিচ্ছেন নেইমার।

পাঁচ বছর পর রিয়ালের লা লিগা
ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই চ্যাম্পিয়স লিগে নিজেদের সেরাটা জানান দিলেও স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপাটা দীর্ঘদিন হাতের নাগালের বাইরে ছিল রিয়াল মাদ্রিদের। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের দাপটে পাঁচ বছর লিগ শিরোপা জিততে পারেনি লস ব্লাঙ্কোসরা। তবে সবশেষ মৌসুমে জিনেদিন জিদানের অধীনে লিগ শিরোপার খরা কাটায় রোনালদো-বেল বেনজেমারা।চলতি বছরের মে মাসে মালাগাকে ২-০ গোলে হারিয়ে লিগ শিরোপার উচ্ছ্বাসে ভাসে রিয়াল মাদ্রিদ। ২০১২ সালের পর এই প্রথম লিগ শিরোপা ঘরে তুলেছে মাদ্রিদের ক্লাবটি। স্পেনের সবচেয়ে সফলতম ক্লাবটির এটা ৩৩তম লা লিগা শিরোপা।

টানা চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়ালের ইতিহাস
চ্যাম্পিয়নস লিগে এর আগে চারটি দল টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠলেও শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি। তবে ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতে রেকর্ড গড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ফরাসি কোচ জিনেদিন জিদানের অধীনে চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা দুই মৌসুমে শিরোপা জিতল লস ব্লাঙ্কোসরা।চলতি বছরের জুনে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রক্ষণ নিয়ে গড়া জুভেন্টাসের বিপক্ষে কার্ডিফের ফাইনালে ইতিহাস গড়ে রিয়াল। মর্যাদার ফাইনালে ৪-১ গোলে জিতে নিজেদের টানা দ্বিতীয় ও চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ ১২তম শিরোপা ঘরে তুলে ইউরোপের জায়ান্ট ক্লাবটি। এর আগে এসি মিলান, আয়াক্স, জুভেন্টাস ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড টানা দ্বিতীয় ফাইনালে উঠেও শিরোপা হাতে নিতে পারেনি।

মেসি চমকে রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা
বিশ্বকাপের বর্তমান রানার্সআপ দল আর্জেন্টিনা। ২০১৮ বিশ্বকাপেও হট ফেবারিট ভাবা হয় তাদের। কিন্তু বিশ্বকাপের মূলপর্বের লড়াই শুরুর আগেই ছিটকে পড়ার শঙ্কা জেগেছিল দুই বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। তবে সেই খাঁদের কিনারা থেকে বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে নাটকীয় পারফরম্যান্সে আর্জেন্টিনাকে রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট এনে দেন দলটির প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি।দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে বাছাইপর্বের আগের টানা তিন ম্যাচের ড্রয়ে শেষ রাউন্ডের আগে দারুণ শঙ্কায় ছিল টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে থাকা আর্জেন্টিনা। তবে শেষ ম্যাচে মেসির হ্যাটট্রিকে ইকুয়েডরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নেয় আর্জেন্টিনা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৮৫০ মিটার উঁচুতে কিটোয়ে যেখানে ২০০১ সালের পর জেতেনি আর্জেন্টিনা। কিন্তু বিশ্বকাপে টিকে থাকার ম্যাচে আর্জেন্টিনার আকাশি-নীল জার্সিতে হ্যাটট্রিক করে দলকে জিতিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জানান দিয়েছেন মেসি।

চোখের জলে ইতালির বিদায়
বিশ্বকাপে চার-চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি। ইউরোপীয়ান অঞ্চল থেকে হট ফেভারিট হয়েও এবার রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট পায়নি আজ্জুরিরা। গত মাসে প্লে অফের ম্যাচে সুইডেনের বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে হেরে চোখের জলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে বুফন-কিয়েল্লিনিদের। প্রথম লেগে স্টকহোমে সুইডেনের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের পর ঘরের মাঠে কোনো গোল করতে পারেনি ইতালি। আর এ হারের ফলে ৬০ বছর পর বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা হারায় চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।১৯৫৮ সালের পর ১৩টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতালি খেলেছে প্রতিবারই। দুবার বিশ্বকাপ জিতেছে, দুবার ফাইনালে খেলেছে। একবারের আয়োজক। এর আগেও দুবারের চ্যাম্পিয়ন তারা (১৯৩৪, ১৯৩৮)। এমন একটি দলের বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়া ফুটবলপ্রেমীদের জন্য বড় এক ধাক্কাই। তাদের আগে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকে বাদ পড়েছে ইউরোপের আরেক ফেবারিট ও টোটাল ফুটবলের দেশ নেদারল্যান্ডস। এছাড়া টানা দুই বারের কোপা চ্যাম্পিয়ন চিলি ও গ্যারেথ বেলের ওয়েলস বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট পেতে ব্যর্থ হয়েছে। দল বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ায় আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন বুফন ও জর্জো কিয়েল্লিনিরা।

ক্লাব বিশ্বকাপে রিয়ালের রেকর্ড
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী দলের হাতেই উঠেছে এবারের ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা। চলতি মাসে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে শিরোপা জিতে রিয়াল মাদ্রিদ। এর ফলে প্রথম দল হিসেবে টানা দুই মৌসুমে ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল লস ব্লাঙ্কোসরা।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর একমাত্র গোলে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব গ্রেমিওকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মত বিশ্বসেরার খেতাব অর্জন করে ইউরোপের এ জায়ান্ট ক্লাবটি। এ নিয়ে গত চার বছরে তৃতীয়বার ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলে সংখ্যায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনাকে ছুঁয়েছে ফেলেছে গ্যালাকটিকোরা।   সব মিলে চলতি বছর পঞ্চম শিরোপা শিরোপা জিতল জিনেজিদন জিদানের রিয়াল মাদ্রিদ।

পঞ্চম বারের মতো রোনালদোর ব্যালন ডি’অর
ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচটি ব্যালন ডি’অর জিতে এতদিন শীর্ষে ছিলেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি। চলতি মাসেই পঞ্চম বারের মতো ব্যালন ডি’অর জিতে মেসির রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন সময়ের সেরা আরেক তারকা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এর আগে ২০০৮, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৬ ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের সেরা স্বীকৃতি ব্যালন ডি’অর জেতেন রোনালদো। এবার ফিফা বেস্ট অ্যাওয়ার্ড জয়ের পর ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়েও লিওনেল মেসিকে হারালেন রোনালদো।চলতি বছরে পর্তুগিজ ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য ব্যালন ডি’অর পুরস্কার পেয়েছেন রোনালদো। রিয়ালের হয়ে জিতেছেন লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। তাছাড়া রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সব প্রতিযোগিতায় এবার ৪০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। আর জাতীয় দলের জার্সিতে দলকে রাশিয়া বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সিআরসেভেনের।

মেসিকে টপকে শীর্ষে হ্যারি কেন
গ্রহের অন্যতম সেরা ফুটবল লিওনেল মেসিকে পেছনে ফেলে চলতি বছরের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন টটেনেহাম হটস্পারের স্ট্রাইকার হ্যারি কেন। সবশেষ এল ক্লাসিকোতে এক গোলসহ এবার ফর্মে থাকা মেসির গোল হয়েছিল মোট ৫৪টি।

তবে ইংলিশ লিগ বক্সিং ডে ম্যাচে সাউদাম্পটনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করায় চলতি বছরে তার মোট গোল দাঁড়িয়েছে ৫৬টিতে। ৫৬ গোলের ৪৮টি করেছেন টটেনহ্যামের হয়ে। ৮টি করেছেন ইংল্যান্ডের জার্সিতে। আর এ ৫৬ গোলে পাঁচ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসিকে পেছনে ফেললেন হ্যারি কেন।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment