বৃহস্পতিবার দাউদপুরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইস অনুষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার দাউদপুরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইস অনুষ্ঠিত হবে।

13925320_931062833671374_2150733992390824802_n

পহেলা ভাদ্র ১৪২৩ সাল, ২৫ই আগস্ট ২০১৬ ইং তারিখে ইছামতির তীরবর্তী দাউদপুরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইস অনুষ্ঠিত হবে , সকলেই আমন্ত্রিত।

আবহমানকাল থেকে বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ নৌকা বাইচ। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেলেও সাম্প্রতিক কয়েক বছরে তা আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এক সময় এ দেশে যোগাযোগ ছিল নদী কেন্দ্রিক আর বাহন ছিল নৌকা। এখানে নৌ শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র। এসব শিল্পে যুগ যুগ ধরে তৈরি হয় দক্ষ ও অভিজ্ঞ কারিগর। এভাবে একসময় বিভিন্ন নৌযানের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কালের পরিক্রমায় ‘মেসোপটেমিয়ার’ মানুষদের শুরু করা খেলাটি আমাদের দেশেও চলে আসে। শুরু হয় নৌকা বাইচ।

বৃহস্পতিবার দাউদপুরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইস অনুষ্ঠিত হবে।

শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ, সবাই আগ্রহ নিয়ে ছুটে চলেন নৌকা বাইচ দেখতে। প্রমত্তা নদীবক্ষে সঙ্গীতের-তাল-লয়ে দাঁড়ীদের ছন্দময় দাঁড় নিক্ষেপে নদীজল আন্দোলিত করে যে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা হয় তা অতুলনীয়। আবেগ-উত্তেজনার নৌকা বাইচ হয়ে ওঠে আপামর মানুষের নির্মল আনন্দের সপ্রাণ প্রতিভূ। নদীমাতৃক বাংলাদেশ নদীর তরঙ্গভঙ্গের সঙ্গে এ মাটির মানুষের আশৈশব মিতালি। নদী তাই হয়ে উঠেছে এখানে মানুষের প্রাণোচ্ছল ক্রীড়াসঙ্গী। এই প্রেক্ষাপটে নদীবক্ষে নৌকা শুধু যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, হয়ে উঠেছে জলক্রীড়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নৌকা বাইচ তারই একটি দৃষ্টিনন্দন রোমাঞ্চময় দৃষ্টান্ত।

বৃহস্পতিবার দাউদপুরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইস অনুষ্ঠিত হবে।

মূলত: নৌকাবাইচ হলো নদীতে নৌকা চালনার প্রতিযোগিতা। “বাইচ” শব্দটি ফার্সি “বাজি” শব্দজাত যার বিবর্তন। এর অর্থ খেলা। তবে এখানে দাঁড় টানার কসরত ও নৌকা চালনার কৌশল দ্বারা বিজয় লাভের লক্ষ্যে আমোদ-প্রমোদমূলক প্রতিযোগিতা বোঝায়। একদল মাঝি নিয়ে একেকটি দল গঠিত হয়। এমন অনেকগুলো দলের মধ্যে নৌকা দৌড় বা নৌকা চালনা প্রতিযোগিতাই হল নৌকা বাইচ।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আনন্দ আয়োজন, উৎসব ও খেলাধুলা সবকিছুতেই নদী ও নৌকার সরব আনাগোনা। হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংস্করণ বাংলাদেশের নৌকা বাইচের সময় মাঝিরা একত্রে জয়ধ্বনি সহকারে নৌকা ছেড়ে দিয়েই একই লয়ে গান গাইতে আরম্ভ করে এবং সেই গানের তালের ঝোকে ঝোকে বৈঠা টানে। যার ফলে কারও বৈঠা ঠোকাঠুকি না লেগে এক সঙ্গে পানিতে অভিঘাত সৃষ্টি করতে থাকে। গায়েন বা পরিচালক কাঁসির শব্দে এই বৈঠার এবং গানের গতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। অন্য সব নৌকাকে পেছনে ফেলে নিজেদের নৌকাকে সবার আগে যাওয়ার চেষ্টায় প্রয়োজন বোধে কাঁসির শব্দে বৈঠার গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয় এবং সেই সঙ্গে গানের গতিও বেড়ে চলে। এছাড়া এই সময় দেহ ও মনের উত্তেজনার বশেই গানের মধ্যে ‘হৈ হৈয়া’ এই ধরণের শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। কালের বিবর্তনে পাশ্চাত্যের ভাবধারায় আধুনিক সুযোগসুবিধার সম্মিলনে কতক শহর গড়ে উঠলেও গ্রামবাংলায় নৌকা বাইচের কদর এখনও ব্যাপক। নৌকা বাইচে আমজনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই তার প্রমাণ।

বৃহস্পতিবার দাউদপুরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইস অনুষ্ঠিত হবে।

নৌকাবাইচের সময় মাল্লারা সমবেত কণ্ঠে যে গান গায় তা সারি গান নামে অভিহিত। নৌকার মধ্যে ঢোল তবলা নিয়ে গায়েনরা থাকেন। তাদের গানগুলো মাঝিদের উৎসাহ আর শক্তি যোগায়। ঢোল ও করতালের সাথে সাথে নৌকা বাইচে সকল মাঝি মাল্লারা তালে তালে এক সুরে গান গেয়ে ছুটে চলেন। মাল্লাদের কণ্ঠে যখন দরাজ সুর ভেসে আসে, তখন বিশাল নদীবক্ষেই যেন উন্মনা হয়ে ওঠে।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment