সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের স্মরণিকায় বাংলাদেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ লেখায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও উপাচার্যের গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
ওই স্মরণিকা বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি প্রকাশনার দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমানকে অব্যাহতি দিয়েছেন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
তিনি বলেছেন, “স্মরণিকার একটি প্রবন্ধে আমরা মারাত্মক ভুল লক্ষ্য করেছি। এটা বাইলাইন পাবলিকেশন ছিল। যার নামে প্রকাশনা, ওই প্রকাশনার দায় প্রাথমিকভাবে তার উপর বর্তাবে। তাকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”
ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের বিচারের দাবিতে শুক্রবার দুপুরে তাকে তার কার্যালয়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা আটকে রাখে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
তাদের বিক্ষোভের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গাড়ি ভাঙচুরের শিকার হয়। উপাচার্য সে সময় গাড়িতেই ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মরণিকার ‘স্মৃতি অম্লান’ শিরোনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে উনবিংশ পৃষ্ঠায় জিয়াউর রহমান হলের ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াকে ‘বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
সেখানে লেখা হয়, “মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন এবং ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থান নিহত হন।”অষ্টাদশ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু হল ও বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে স্মরণিকার অষ্টাদশ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে লেখা হয়েছে, তিনি “বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা, যিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে বিবেচিত।”
আর ত্রয়োদশ পৃষ্ঠায় জগন্নাথ হলের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু তথা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায় এবং উপজাতি ছাত্রদের জন্য এই হল প্রতিষ্ঠিত হয়।
ওই স্মরণিকা প্রকাশনার দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ রেজাউর রহমান।
এছাড়া উপদেষ্টা হিসেবে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন ) অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের নাম রয়েছে সেখানে।
দুপুরের আগে টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভায় একজন বক্তা এর কড়া প্রতিবাদ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এর প্রতিবাদ জানান।
এরপর উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠান স্থগিত করে ওই স্মরণিকা বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দেন।
ওই অনুষ্ঠানের পর সৈয়দ রেজাউর বিষয়টিকে‘মুদ্রণ ত্রুটি’ হিসেবে তুলে ধরেন সাংবাদিকদের সামনে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা বেলা ১২টার দিকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে তার কার্যালয়ে তালাবন্ধ করে বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন এবং রেজাউর রহমানকে বের করে আনেন।
এরপর ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে কর্মীরা বেলা ২টার দিকে উপাচার্যের বাংলোর সামনে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। তারা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের বিচার দাবি করেন এ সময়।
বেলা পৌনে ৩টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে নিয়ে তার গাড়ি বাসভবনের সামনে পৌঁছালে গাড়িতেও হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা।
এ সময় উপাচার্য গাড়ির ভেতরেই ছিলেন। হামলায় তার গাড়ির এক পাশের কাচ ভেঙে যায়। পরে তিনি হেঁটে বাসভবনে ঢুকে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ও পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পাঁচটার পর সৈয়দ রেজাউর রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে আদেশ জারি হয়।
বিএনপির আমলে উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজের সময়ে ২০০৭ সালে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে রেজিস্ট্রার পদে আসেন সৈয়দ রেজাউর রহমান।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ওই বছর ১৫ জানুয়ারি উপাচার্য পদে আসেন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদে রেজাউরের ওপরই তিনি আস্থা রাখেন। অবশ্য পুরোপুরি রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব তার আর পাওয়া হয়নি।