গুলশান হামলায় কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনের সরাসরি সংবাদ প্রচার কার্যক্রম অভিযানে বিঘ্ন ঘটিয়েছে জানিয়ে তাদেরকে এবিষয়ে প্রকাশ্যে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যখন সন্ত্রাস দমনের জন্য কোনো একটা অপারেশনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ যদি দেখাতে থাকেন, তাহলে কীভাবে সে অপারেশন সফল হবে?
“আমরা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি, টেলিভিশন সব দেখিয়ে দিচ্ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “যে টেলিভিশনগুলো এগুলো দেখায়, তারা কি একবারও চিন্তা করে না যে, ভেতরে যে সন্ত্রাসীরা মানুষদের জিম্মি করে রেখেছে, তারা তো ওগুলো দেখবে। তারা এগুলি দেখার মধ্য দিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেবে সেটাও তারা ঠিক করে ফেলে।
“কোনো প্রিপারেশনই নেওয়া যাচ্ছে না; সবই টেলিভিশনে এসে যাচ্ছে।”
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির বিডিআর বিদ্রোহের সময় ‘একই চিত্র’ দেখা গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হামলা ও জিম্মি সঙ্কট শুরুর পর র্যাবের অনুরোধে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে।
কয়েকটি টিভি চ্যানেল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি এবং হতাহতদের রক্তাক্ত ছবি সম্প্রচার করে; যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সমালোচনা হয়েছে।
শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনায় লাশের বা রক্তাক্ত ছবি সিএনএন বা অন্য মিডিয়ায় না দেখানোর কথা তুলে ধরে বলেন, “কিন্তু আমাদের দেশে কী হয়? ছবি দেখানোর জন্য প্রতিযোগিতা তৈরি হয়।
“এসব ছবি দেখানোর মধ্য দিয়ে বাচ্চা, অসুস্থ মানুষ বা গর্ভবতী মহিলাদের উপর কী প্রভাব পড়তে পারে- সে চিন্তাটা করা উচিৎ।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, জিম্মি উদ্ধারে অভিযান চালাতে ওই এলাকার ইন্টারনেট সংযোগ ও কেবল লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সরাসরি সম্প্রচার বন্ধের অনুরোধ জানানোর পরও কোনো কোনো টেলিভিশন তা ‘শুনতে চায়নি’ বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “টেলিভিশনগুলিকে অনেক রিকোয়েস্ট করা হয়। কিছু কিছু টেলিভিশন তো শুনতেই চায় না। আমি তাদেরকে নজরে রেখেছি। কারা কারা শুনতে চায়নি- সেটা আমার খেয়াল আছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “এই প্রাইভেট টিভি চ্যানেল আমারই দেওয়া। আমার হাতে দেওয়া। আমি দিতেও যেমন পারি, নিতেও তেমন পারি।
“কাজেই আমার কাজে যারা বাধা দেবে, সেটা কখনো সহ্য করা হবে না। ভবিষ্যতে প্রত্যেককে আমি বলব- সতর্ক হওয়ার জন্য। কারণ এটা একটা ছেলেখেলা না।”
‘মানুষ যেন সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে’- গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় সেই প্রচার চালানোর অনুরোধও করেন প্রধানমন্ত্রী।
জঙ্গি-সন্ত্রাস প্রতিরোধে জনগণকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বেসরকারি খাতে টেলিভিশনের মালিকানা উন্মুক্ত করা হয়।
দেশে বর্তমানে ৩০টির বেশি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমতি রয়েছে; যার মধ্যে কমপক্ষে ২৫টি সম্প্রচারে রয়েছে।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ১০টি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমতি দেওয়া হয়, যেগুলোর মধ্যে ৬টি সম্প্রচারে রয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সেসময় একুশে টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেয়, পরে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পুনরায় সম্প্রচার শুরু করে চ্যানেলটি।
২০১৩ সালের মে মাসে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের দিন বন্ধ করা হয় দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশন।