লাইলাতুল কদরের উত্তম আমল

লাইলাতুল কদরের উত্তম আমল

মাহে রমজানে শবে কদরের রাত ইসলামী শরীয়ত মতে ফজিলতের দিকে দিয়ে অনেক বড়। এ রাতেই সুরা কদরের মাধ্যমে ঐশীগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হয়েছে।

লাইলাতুল কদরের উত্তম আমল

এই রাতকে মহান আল্লাহ তা`আলা নিজেই হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে ঘোষণা করেছেন। এ রাতকে যে কাজে লাগাতে পারেনি আল্লাহর প্রিয় হাবিব (সা.) তাকে বড় হতভাগা বলেছেন।

‍উম্মতগণ চাইলে এ রাতকে  যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেন। এ রাতের প্রত্যেকটি আমল আল্লাহর দরবারে গৃহিত হয়। কেবল কয়েক শ্রেণির মানুষ ছাড়া বাকী সবার দোয়া কবুল হয়। মাত্র একরাতের আমল দিয়ে নিজেকে জান্নাতি বানানোর সুযোগ করে দিয়েছে শবে কদর।

শবে কদরে চার শ্রেণির মানুষকে ক্ষমা করা হবে না, তাদের কোনো কিছুই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না যতক্ষণ না তারা এসব অপকর্ম থেকে সংশোধন হবে। এই চার শ্রেণির মানুষ হলো, এক- মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি, দুই- মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, তিন- আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, চার- হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী ও সম্পর্কছিন্নকারী। (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, ৩৩৬ পৃষ্ঠা)।

শবে কদর এমন একটি মহিমান্বিত রাত যে রাত সম্পর্কে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, হযরত জিব্রাইল (আ.) এর নেতৃত্বে ফেরেশতারা পৃথিবীতে চলে আসেন। প্রত্যেকের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন, যারা দাঁড়িয়ে কিংবা বসে এবাদত করে থাকেন। (জিয়াউল কোরআন, ৫ম খণ্ড)।

শবে কদরে নফল নামাজ
শবে কদরের রাতে নফল নামাজ পড়া উত্তম এবাদত। নফল নামাজ আদায় সম্পর্কে তাফসিরে রুহুল বয়ানে উল্লেখ আছে, হযরত ইসমাইল হক্কী (র.) উদ্ধৃত করেছেন, বুজুর্গানে দ্বীনগণ দশদিনের বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদরের নিয়তে নফল নামাজ পড়তেন।

প্রসিদ্ধ ফকীহ আবুল লাইস সমরকন্দী (র.) বলেন, ‘শবে কদরের নামাজে  প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা কদর ও তিনবার সূরা এখলাস পড়া। প্রত্যেক দুই রাকাতের পর সালাম ফিরিয়ে দরুদ শরীফ পাঠ করা তারপর দুই রাকাত করে যে যত নিয়ত করবে তত রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেওয়া। (তাফসিরে রুহুল বয়ান, ১০ম খণ্ড, ৪৮৩ পৃষ্ঠা)।

তবে প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে এশার নামাজের পর দুই রাকাত করে ১২ রাকাত নফল নামাজ পড়া উত্তম। নফল নামাজ এশার ফরজ নামাজের পর আদায় করা যাবে।

শবে কদরে নফল নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। নফল নামাজ পড়ার কারণে বান্দার পূর্বের সব ‍গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (তাফসিরে রুহুল বয়ান, ১০ম খণ্ড, ৪৮০ পৃষ্ঠা)।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শবে কদরে সওয়াবের নিয়তে (নফল নামাজের জন্য) দণ্ডায়মান  থাকে, তার অতীত সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)।

শবে কদরের দোয়া : মহানবী (সা.) শবে কদরের রাতে এই দোয়া পড়তেন এবং পড়ার জন্য বলতেন।

দোয়াটি হলো- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বু তুহিব্বুল আফওয়া ফাঅফু আন্নি।

এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস আছে, উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলের খেদমতে আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) যদি আমি শবে কদর সম্পর্কে জানতে পারি তবে আমি কি পড়বো? রাসুল (সা.) উত্তর দেন, এভাবে দোয়া প্রার্থণা করো- ইয়া আল্লাহ নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা পছন্দ করো, তাই আমাকে ক্ষমা করো।’ (তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, ৩০৬ পৃষ্ঠা, হাদিস- ৩৫২৪)।

শবে কদরে সুরা কদর পড়লে বান্দার অনেক কল্যাণ হয়।

এ প্রসঙ্গে আমিরুল মুমেনিন হযরত আলী মুরতাজা শেরে খোদা (রা.) বলেন, ‘যে কেউ শবে কদরে সুরা কদর সাতবার পড়বেন আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রত্যেক বালা মুসিবত থেকে রক্ষা করেন। আর সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জান্নাত পাবার জন্য দোয়া করেন…। (নুজহাতুল মাজালিস, ১ম খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা)।

মহিমান্বিত এই রজনীতে উচিত নিজেকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র রাখা, ফরজ নামাজ আদায় করে তার সঙ্গে সুন্নত, নফল নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করা, না পারলে তেলাওয়াত শোনা, বেশি পরিমাণে রাসুল (সা.) এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করা, না ঘুমিয়ে রাতভর জিকির আসকার করা, দোয়া মোনাজাতে শামিল হওয়া, বেশি করে দান সদকা দেয়া, অনাহারির মুখে ভাল খাবার তুলে দেয়াসহ যত ভাল কাজ আছে সবকিছু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।

তাই আসুন! শবে কদরের এই ভাগ্য রজনিকে হেলায় নষ্ট না করি। তাহলে আমাদের মত বড় দুর্ভাগা আর কেউ থাকবে না।

আল্লাহ আমাদের ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক শবে কদরে উত্তম আমল করার তওফিক দিন … আমীন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment