রাজধানীর গুলশান ২ এর ৭৯ নং সড়কে হলি আর্টিসান রেস্তোঁরায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সেই সন্দেহভাজন জিম্মির পরিচয় পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক হাসনাত করিমই হচ্ছেন হামলার ঘটনায় সেই সন্দেহভাজন জিম্মি যাকে ভিডিও ফুটেজে সন্দেহজনক অবস্থায় দেখা যায়। গুলশানের ঐ রেস্তোঁরায় বিদেশি নাগরিক সহ বেশ কিছু মানুষকে জিম্মি করে রাখার সময়কালের কিছু ভিডিও ফুটেজের বেশকিছু জায়গায় দেখা মিলে এক ন্যাড়া মাথার লোকের। তিনিও তখন সেখানে
জিম্মি ছিলেন এমনটা বলা হলেও ভিডিও ফুটেজে তার কর্মকান্ড সন্দেহের সৃষ্টি করে অনেকের মনে। জিম্মি থাকা অবস্থায় একটি ছবিতে তাকে ছাদের উপর ধূমপান করতে দেখা যায় যখন তার পেছনে
দুইজন আক্রমনকারী সন্ত্রাসীকে দেখা যায়। আরেকটি ফুটেজে তাকেই দেখা যায় ক্যাফের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। শেষ ফুটেজে তাকেই পরিবার এর সাথে বের হয়ে যেতে দেখা গেছে। সব জিম্মিরা
যখন এই হামলায় আতংকিত তখন এই ব্যক্তির এতো নিশ্চিন্ত আচরণ ও গতিবিধি সন্দেহের সৃষ্টি করে। অনেকেই তখন ধারণা করেন এই ব্যক্তি ঐ হামলার সাথে জড়িত থাকতে পারেন।
এরপর সেই ব্যক্তির পরিচয় খুঁজে বের করতে গিয়ে দেখা যায় তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ফ্যাকাল্টি। তার নাম হাসনাত করিম যিনি ছেলের জন্মদিন পালন করতে সেদিন স্ত্রী, পরিবার সহ ঐ রেস্তোঁরায় গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
শনিবার উদ্ধার অভিযানের পর পরিবারকে সাথে নিয়ে জীবিত বের হয়ে আসা হাসনাত করিম নিজে গণমাধ্যমকে কিছু না জানালেও সেদিন তার পক্ষ থেকে তার পিতা রেজাউল করিম জানান, “যারা কোরানের আয়াত বলতে পেরেছিল তাদেরকে সন্ত্রাসীরা ছেড়ে দেয়, যারা পারেনি তাদের অত্যাচার করে”।
হাসনাত করিমের স্ত্রী হিজাব পরায় তাদের সাথে হামলাকারীরা কোন খারাপ ব্যবহার করেনি এমনকি রাতে খেতেও দিয়েছিল বলে জানান রেজাউল করিম।
ঘটনাস্থল থেকে বের হয়ে আসার পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বলেও জানিয়েছিলেন রেজাউল করিম।
রেজাউল করিম এর বক্তব্য থেকেই জানা যায়, হাসনাত করিম ২০ বছর দেশের বাইরে ছিলেন। ইংল্যান্ডে প্রকৌশল পড়াশোনার পর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এমবিএ করেন। দেড় বছর আগে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
হাসনাত করিম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ফ্যাকাল্টি এই তথ্য জানার পর থেকে প্রশ্ন উঠেছে আরো অনেক। কারণ হামলাকারীদের মধ্যে একজন নিব্রাস ইসলামও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিল। সেক্ষেত্রে এই হামলার পরিকল্পনার পেছনে হাসনাত করিমের কোন হাত আছে কিনা, কিংবা জীবিত ফিরে আসার পেছনে তিনি যে কারণ দেখিয়েছেন তা আদৌ সত্য কিনা তা যাচাইয়ের অপেক্ষা রাখে বলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকের মত। তাছাড়া এতো বড় দুর্ঘটনা থেকে ফিরে আসার পর তিনি নিজে কেন গণমাধ্যমের সামনে আসলেন না সেটাও সন্দেহের মাত্রাকে ঘনীভূত করছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ৮/৯ জন অস্ত্রধারী যুবক ‘আল্লাহু আকবর’ বলে স্লোগান দিতে দিতে হলি আর্টিসান নামক ঐ রেস্তোঁরায় আক্রমন চালায়। এসময় তারা ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে সবাইকে
জিম্মি করে নেয় ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন বনানী থানার ওসি সালাহ উদ্দিন ও ডিবির সহকারী কমিশনার রবিউল। পুলিশ সদস্য সহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
শনিবার সকালে উদ্ধার অভিযান শেষে দুপুরে ২০ জন বিদেশির জবাই করা লাশ উদ্ধারের কথা জানায় আইএসপিআর। ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার দুজন ও জাপানের এক
নাগরিক রয়েছেন।