প্রিমিয়ার লিগে সফল হতে পারবেন গার্দিওলা?

প্রিমিয়ার লিগে সফল হতে পারবেন গার্দিওলা?

বায়ার্ন মিউনিখ যতটা উৎসব-উৎসব ভাবের মধ্য দিয়ে তাঁকে বরণ করে নিয়েছিল, ঠিক ততটা রঙিন হয়নি ম্যানচেস্টার সিটির পেপ গার্দিওলা-বরণ। কোচ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছিলেন ১ জুলাই। রোববার সিটির ফুটবল একাডেমি ঘুরে দেখানোর পর ৫ হাজার ৮০০ সিটিজেন সমর্থকের সামনে হয় স্প্যানিশ কোচের পরিচিত অনুষ্ঠান।

 

প্রিমিয়ার লিগে সফল হতে পারবেন গার্দিওলা?
এসেই ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে সেই একই প্রশ্নের সামনে পড়তে হলো গার্দিওলাকে, ‘কী মনে হয়, সফল হতে পারবেন তো প্রিমিয়ার লিগে?’
গত ফেব্রুয়ারিতে ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনিকে সরিয়ে তাঁকে সিটির নতুন কোচ ঘোষণা করার পর থেকেই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে গার্দিওলাকে ঘিরে। সিটি সমর্থকেরা তাঁর হাতেই নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে; ‘রাজত্ব’, ‘সোনালি দিন’ শব্দগুলোও উড়ছে বাতাসে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উড়ছে শঙ্কা, বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখে যে দাপট দেখিয়েছেন গার্দিওলা, সেটি কি সিটিতেও দেখাতে পারবেন?
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিকও। হয়তো বার্সেলোনা থেকে বেরিয়ে আসার পরপরই সিটিতে এলে প্রশ্নটা এত জোরেশোরে উঠত না। বায়ার্ন মিউনিখে যেমন সেটি হয়নি, জার্মান ক্লাবটিতে সবাই তখন গার্দিওলায় বুঁদ হয়ে ছিলেন। তাঁর প্রতিটি কথা, প্রতিটি অনুশীলন সেশন তখন খবরের শিরোনাম। কিন্তু এবার তেমনটা হচ্ছে না।

একটা কারণ হতে পারে চ্যাম্পিয়নস লিগ। বায়ার্নকে তিন মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাতে পারেননি গার্দিওলা, তিনবারই সেমিফাইনালে উঠে হেরেছেন স্প্যানিশ তিন দলের কাছে। সিটিরও তো এখনো আক্ষেপ এই চ্যাম্পিয়নস লিগ। এখানে ভালো করতে না পারলে যে ইউরোপের কূলীনদের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে না সত্যিকারের বড় দলের মর্যাদা। সিটির হয়ে পেলেগ্রিনি শেষবার সেমিতে ওঠাতে পেরেছিলেন, গার্দিওলা আরেক ধাপ পেরোতে পারেন কি না সেটিও দেখার বিষয়। সিটি সমর্থকেরা সেটিই আশা করে।
তবে সেটি ইউরোপিয়ান মঞ্চের বিষয়। সেখানে গার্দিওলা কী করতে পারেন, তার একটা ধারণা তো তাঁর সাত বছরের কোচিং ক্যারিয়ারেই দেখিয়েছেন। প্রতিবারই দলকে নিয়ে গেছেন সেমিফাইনালে (বার্সাকে চারবার, বায়ার্নকে তিনবার)। কিন্তু গার্দিওলার জন্য বড় পরীক্ষা তো প্রিমিয়ার লিগ। সেই পরীক্ষায় ৪৫ বছর বয়সী কোচের ‘বার্সা-বায়ার্নে’র মতো সাফল্য পাওয়া নিয়েই যত সংশয়।
সংশয়ের কারণও আছে। প্রথমত, খেলোয়াড়। সিটিতে মেসি-ইনিয়েস্তা বা মুলার-লামরা নেই। অবশ্য আবুধাবি গ্রুপের তেল-জাত অর্থ আছে, তাই পছন্দের বেশির ভাগ খেলোয়াড়কেইা গার্দিওলা কিনে আনতে পারবেন। এরই মধ্যে গুন্ডোয়ান-নলিতোদের কিনেও এনেছেন, স্টোনস-সানেদের মতো আরও কেউ হয়তো আসবেন। তবে খেলোয়াড়েরা গার্দিওলার কৌশলের সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন, সেটিও দেখার বিষয়।
সংশয় জাগানোর দ্বিতীয় কারণ, প্রিমিয়ার লিগ। মেসি-রোনালদোদের মতো তারকা হয়তো নেই, তবে প্রতিযোগিতা-রোমাঞ্চের বিচারে প্রিমিয়ার লিগই যে বিশ্বের সেরা, এ নিয়ে তর্ক করার মতো মানুষ খুব বেশি সম্ভবত নেই। বার্সেলোনায় গার্দিওলাকে মূলত লড়তে হয়েছে রিয়ালের সঙ্গে, শেষ দিকে অ্যাটলেটিকোও যোগ দিয়ে লড়াইটাকে ত্রিমুখী বানিয়েছে। বায়ার্নে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ডর্টমুন্ড।
কিন্তু প্রিমিয়ার লিগে? চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, আর্সেনাল তো আছেই। চোখ রাঙিয়ে অপেক্ষা করবে টটেনহাম, লেস্টার সিটির মতো দলগুলোও। প্রতিটি ম্যাচই এখানে তীব্র লড়াই, প্রতিটি দলই মরণ-কামড় দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রতিটি বলের জন্য চলবে লড়াই। গার্দিওলার দলগুলোর রক্ষণ থেকে বল তুলে এনে আক্রমণে যাওয়ার যে প্রবণতা, সেটি কিছুটা চাপে পড়তে পারে। এখানে যে প্রায় প্রতিটি দলই ‘প্রেসিং’ করে খেলে। তারওপর গার্দিওলা যেমন দুই ডিফেন্ডারকে (উইং-ব্যাক) উঠিয়ে নেন আক্রমণে, সেটিও প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর তড়িৎ প্রতি আক্রমণের (ডিফেন্স থেকে লম্বা বলে আক্রমণে) সামনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
পাশাপাশি ইংলিশ লিগের শারীরিক ধরন তো আছেই। সেটির সঙ্গে কতটা পাল্লা দিতে পারে গার্দিওলার টিকি-টাকা, তা-ও দেখার বিষয়। এখানে রেফারিরা ঠিক স্পেন-জার্মানির মতো ‘নরম’ নন, শীতকালীন বিরতি এখানে নেই—সেগুলোর সঙ্গেও মানিয়ে নিতে কিছু সময় লাগতে পারে গার্দিওলার।
শুধু দলই নয়, ডাগআউটেও গার্দিওলাকে লড়তে হবে স্মরণকালের সেরা লড়াই। মরিনহো, ক্লপ, ওয়েঙ্গার, পচেত্তিনো, রানিয়েরি…সঙ্গে গার্দিওলা। প্রিমিয়ার লিগই স্মরণকালের সবচেয়ে কঠিন ‘ডাগআউট-লড়াই’ নিয়ে অপেক্ষা করছে। অবশ্য এই লড়াই গার্দিওলার জন্য যেমন, তেমনি অন্যদের জন্যও।
এই চ্যালেঞ্জে অনুপ্রাণিত হয়েই ম্যানচেস্টার সিটিতে এসেছেন, সেটি গার্দিওলা নিজেই বলেছেন। ৭ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে তাঁর ২১টি শিরোপাও বলছে, চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়ার সব উপায়ই গার্দিওলার জানা আছে। কিন্তু তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই লিগে গার্দিওলা কী করতে পারেন, সেটি দেখতে আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষা করছে ফুটবলবিশ্ব।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment