বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের জাতির জনক ও দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭১’এ সাড়ে সাত কোটি বাঙালি শেখ মুজিবের নেতৃত্বে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন, এই ধরনের ঐক্যের কোনো দ্বিতীয় উদাহরণ হাজার বছরের ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
১৯৪৭-এ ভারত বিভাগ পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ মুজিব ছিলেন ছাত্রনেতা। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তনের জনগোষ্ঠীর প্রতি সকল ধরণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি একসময় ছয় দফা স্বায়ত্ত্বশাসন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন। যা বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবেও বিবেচিত।
১৯৬৮ সালে গ্রেফতার ৬৯’এ গণ অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবের মুক্তি, ৭০’এ নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। তারপরও তাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয় নি। ৭১’এর মার্চ ২৫ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে গণহত্যা পরিচালনা করে। একই রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয় এবং পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সামরিক আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে তবে তা কার্যকরা হয়নি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯৩ হাজার সেনা সদস্য মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
১০ জানুয়ারি ১৯৭২ শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে হত্যা করে কিছু পথভ্রষ্ট সেনা সদস্য বাঙালি জাতির বুকে কলঙ্কের দাগ এটে দিয়েছিল। ঐ দিনটি সমগ্র বাঙালি জাতির শোকের দিন। সেই কালো রাতে বঙ্গবন্ধু ছাড়াও তাঁর ধানমন্ডির বাড়িতে তাঁর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ও তিন ছেলে ও তাদের স্ত্রী সন্তানসহ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার এবং নিকটাত্মীয়সহ মোট ২৬ জনকে হত্যা করে ঘাতকরা।