একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অন্যত্র সরিয়ে নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। মঙ্গলবার জাগো নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার দফতর।
এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা কমিয়ে একটি করা হয়। তারও আগে ২০১০ সালে একটি ট্রাইব্যুনাল দিয়ে এই বিচার শুরু হলেও কাজে গতি আনতে দুটি করা হয়েছিল। মামলার সংখ্যা কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিন বছর পর ২০১৫ সালে দুটি ট্রাইব্যুনালকে একত্রিত করা হয়।
এখন একক ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক। তার সঙ্গে আছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী।
একই বছর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, সদস্য বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া হাইকোর্টে ফেরত গেছেন।
ট্রাইব্যুনাল একত্রিত করার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ ও ২ এর বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বিবেচনায় ওই ট্রাইব্যুনাল দুটিকে একীভূত করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন আবশ্যক। সে লক্ষ্যে অন্য ট্রাইব্যুনালটি পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত অগঠিত অবস্থায় থাকবে।’
তবে পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল থেকে ফেরত আসা বিচারকরা আগের মতোই নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা পাবেন বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।
একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান, বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ একেএম জহির আহমেদকে সদস্য করে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এরপর আরও তিনজনকে যোগ করে প্রথম ট্রাইব্যুনালের বিচারক এটিএম ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে ২০১২ সালের ২৩ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়।
তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই বিচারক হন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহিন এবং ট্রাইব্যুনালের সাবেক রেজিস্ট্রার মো. শাহীনুর ইসলাম। বিচারপতি ফজলে কবীরের স্থলে প্রথম ট্রাইব্যুনালে সদস্য করা হয় হাইকোর্টের বিচারপতি মো.আনোয়ারুল হককে।
ওই বছরের আগস্টে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জহির আহমেদ পদত্যাগ করলে শূন্যস্থানে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেনকে নিয়োগ দেয় সরকার।
এদিকে স্কাইপে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথিত কথোপকথন নিয়ে বিতর্কের মুখে বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করলে ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়।
তিনি অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান হিসেবে আসেন। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দুটি ট্রাইব্যুনালে ২৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। রায়ে বিভিন্ন ধরনের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আসামিদের বেশিরভাগেরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে।