আমরা পৃথিবীর ভূমণ্ডলের একদম ওপরের স্তরে—মাটিরও ওপরে থাকি। আমাদের পায়ের নিচের মাটিও বেশ নরম। মাটি খুঁড়ে গভীরে যেতে থাকলে কিন্তু ভীষণ মজা হয়। খুঁড়তে খুঁড়তে কখনো পাওয়া যায় পানি, আবার কখনো পাওয়া যায় কঠিন পাথর। ভূমিকম্পের কারবার এই কঠিন পাথরের স্তরে।
এই স্তরে অবশ্য টুকরো টুকরো পাথর থাকে না। প্রচণ্ড চাপে পাথরগুলো একটা বিশাল পাথরের চাঁই হয়ে যায়। সে যে কত বিশাল, তা চিন্তাও করা যায় না। একেকটা চাঁইতে অনেক ঢাকা শহরেরই ঠাঁই হয়ে যাবে, এমনি বড় সেগুলো। এই পাথরের চাঁইগুলোকে বলে প্লেট। এই প্লেটগুলো যখন একটা আরেকটার গায়ে ধাক্কা খায়, তখন প্রথমে কিছুক্ষণ লেগে থাকে। ফলে কোনো প্লেটই নড়ে না, কিন্তু একটা আরেকটাকে বিপুল শক্তিতে ঠেলতে থাকে। সেই ঠেলায় প্রথমে হয়তো প্লেটগুলো একটু-আধটু নড়ে, কিন্তু তাতে তেমন কিছু হয় না। আর একটু পরেই সেই প্রচণ্ড ঠেলা সামলাতে না পেরে দুই প্লেটের শেষ প্রান্তের পাথরগুলো ভেঙে যায়। আর তখনই ভূমিকম্প হয়।
পাথরগুলো ভাঙতে শুরু করলে প্লেট দুটোও নড়তে শুরু করে। ওই প্লেট দুটো যতক্ষণ পর্যন্ত আবার স্থির হয়ে নড়াচড়া বন্ধ না করছে, ততক্ষণ ভূমিকম্পও চলতে থাকে। আর ভূমিকম্পের কাঁপুনি যে কেমন ভয়ংকর, সে তো আমরা বেশ ভালোই জানি এখন!
মাটির নিচের ঠিক যেই জায়গায় পাথর ভাঙে, সেই জায়গাকে বলে ভূমিকম্পের ফোকাস। আর ফোকাসের বরাবর মাটির ওপরের জায়গাকে বলে ভূমিকম্পের এপিসেন্টার।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা—ভূমিকম্প হলে কিন্তু ভয় পাওয়া যাবে না। বাসার শক্ত কোনো টেবিল, বিছানা বা দেয়ালের গোড়ায় গিয়ে বসে থাকতে হবে। তবে যদি সম্ভব হয়, তাহলে বাসা থেকে বের হয়ে বাইরে কোনো খোলা জায়গায় চলে যাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।