পুঁজি সঙ্কট, লবণের দাম বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজার মন্দা হওয়ায় এবারের ঈদে চামড়া কেনা নিয়ে নানা শঙ্কায় রয়েছেন ঝালকাঠির চামড়া ব্যবসায়ীরা। গত বছরের কুরবানির ঈদের টাকা এখনও ট্যানারি মালিকের কাছে বকেয়া থাকায় ব্যবসায়ীদের হাত রয়েছে শুণ্য। আর এ কারণেই পুঁজি সঙ্কটে রয়েছেন তারা।
পুঁজি সংগ্রহ করতে না পারলে এবার কুরবানির ঈদে চামড়া বাজারে ধস নামার আশঙ্কাও করছেন ব্যবসায়ীরা। আর এ সুযোগে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে অনেক। আবার অনেকে পুঁজির অভাবে চামড়া ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী মো. উজ্জল সরদার জানান, প্রতি কুরবানির ঈদে এখানে প্রায় ১ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়। ২০১০ সালেও জেলায় প্রায় অর্ধশত চামড়া ব্যবসায়ি ছিলেন। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে সময়মত টাকা না পাওয়ায় ঋণ জর্জরিত হয়ে আবার অনেকে লস খেয়ে দেউলিয়া হয়ে শুধু মাংস ব্যবসায় সীমীত আছেন।
বর্তমানে মাত্র ১০/১২ জন চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। গত বছরের চামড়া দাম এখনো ট্যানারি মালিকরা পরিশোধ না করায় এবার ঈদে চামড়া কেনার জন্য এখনো পর্যন্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। ঈদের আগে টাকা না পেলে চামড়া কেনা দুরূহ হয়ে পড়বে। এছাড়া লবণের দাম আগে যেখানে ৫শ টাকা বস্তা ছিল এখন তা ১৫ থেকে ১৬শ টাকা হয়ে পড়েছে। কুরবানি পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। এবার লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪০ টাকা দরে ক্রয় করা হবে।
খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কোনোটিই বাস্তবতার আলোকে ঠিক হয়নি বলে অভিযোগ চামড়া ব্যবসায়ীদের। অনেক চামড়ায় ডিসফুট (নিম্নমানের) থাকে। নির্ধারিত রেটে ওই চামড়া কেনা সম্ভব নয়।
এছাড়াও গ্রামাঞ্চলে মৌসুমভিত্তিক কিছু চামড়া ব্যবসায়ীর সৃষ্টি হয়। তারা স্থানীয়ভাবে নিজেদের ইচ্ছেমত দরদামে চামড়া ক্রয় করে আমাদের কাছে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। যদি লবণসহ আনুষাঙ্গিক খরচের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণসহ ট্যানারি মালিকরা সময়মত টাকা পরিশোধ করে তবে ঈদে চামড়া কেনা সম্ভব।
ব্যবসায়ী কাদের খান জানান, বড় বড় ট্যানারি মালিকদের ব্যাংক থেকে সাপোর্ট দেয়া হলেও জেলা শহরগুলোতে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সাপোর্ট দেয়া হয় না।
এ জন্য ব্যবসায়ীরা এ মৌসুমে চরম পুঁজি সঙ্কট পড়েছেন। ট্যানারি মালিক ও ব্যাংক ঋণের কারণে অনেক ব্যবসায়ী বিলীন হয়ে গেছে। যে কয়েকজন ব্যবসায়ী রয়েছে তারা কোনো রকম টিকে আছে।
এবারও যদি ট্যানারি মালিকরা সঠিক সময় টাকা না দেয় এবং ব্যাংক অল্প সুদে ঋণ না দেয় তবে চামড়া কেনা নিয়ে ব্যবসায়ীরা সঙ্কটে পড়বে।