রাজধানীতে ভয়াবহ গ্যাস সংকট

রাজধানীতে ভয়াবহ গ্যাস সংকট

রাজধানীতে চলছে ভয়াবহ গ্যাস সংকট। গত সপ্তাহ ধরে এ ভয়াবহতা আরও বেড়েই চলছে। যার কোনো তাৎক্ষণিক সমাধান দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। মাসে মাসে বিল গুণেও প্রয়োজনীয় সেবা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীদের। এমন অভিযোগ গ্যাস কর্তৃপক্ষ আমলেই নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীদের। তারা বলছেন, সিএনজি স্টেশনগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ পেলেও বাসাবাড়িতে পাচ্ছে না গ্যাস। আবার সিএনজি স্টেশনের কর্মকর্তারাও বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী তারাও গ্যাস পাচ্ছেন না। তাহলে গ্যাস পাচ্ছে কে- এমন প্রশ্নে জবাব দিতে পারেনি তিতাস। গ্যাস নিয়ে এমন সমস্যার সমাধান জানা নেই কারো।

রাজধানীতে ভয়াবহ গ্যাস সংকট

তবে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি করা হবে এটাই সমাধান হিসেবে দেখছে গ্যাস কর্তৃপক্ষ তিতাস। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই এলাহী ‘‘গ্যাস সংকট আর হবে না’’ মর্মে বক্তব্য দিলেও ঠিকই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে রাজধানীবাসীর। সরকারের পক্ষ থেকে আশার বাণী শোনানো হলেও কার্যত কোনো সমাধান হচ্ছে না।
শীতের শুরুতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের এ সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ নিয়ে গ্যাস কর্র্তৃপক্ষের যেনো কোনো মাথা ব্যথাই নেই। গত সাতদিন ধরে শুরু হওয়া এ সংকট সমাধানে এখনও তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি তিতাস কর্তৃপক্ষ। এদিকে, সংকট নিরসনে তিতাসের এমন ভূমিকায় দিন দিন আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। এ সংকট নিয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি বলছে, শীতকালে গ্যাসের ব্যবহার বাড়ায় এই সংকট বেড়েছে। অন্যদিকে ভুক্তভোগীরা বলছেন, তিতাস চাইলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। শুধু আবাসিকেই নয়, আকস্মিক গ্যাসের এমন সমস্যা বাণিজ্যিক খাতেও প্রভাব ফেলছে। গ্যাস সরবরাহের এমন অবহেলায় শিল্পকারখানা মুখ থুবড়ে পড়বে। অসংখ্য উদ্যোক্তা বিনোয়োগ করে ফেঁসে যাবে। অনেক দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। মোটকথা-গ্যাসের অভাবে দেশের সার্বিক আর্থিক অগ্রগতিই ভীষণভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র নতুন নতুন কূপ খননের পাশাপাশি দেশের সম্ভাব্য স্পটগুলোতে জ্বালানি সম্পদের অনুসন্ধানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু অধিকাংশ প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা, এমন অনেক প্রকল্পের অগ্রগতিও শুন্য। অথচ ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে অর্ধেকেরও বেশি সময়। কিছু প্রকল্প টার্গেট করা সময়ের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ এগিয়েছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে এসব প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকদের যোগ্যতা নিয়ে । এ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী সভায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে জ্বালানি বিভাগকে। তাই সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর পরিচালকদের কড়া ভাষায় তিরস্কার করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গেলো বছর সেপ্টেম্বর মাসে মতিঝিলের চেম্বার ভবনে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একটি অনুষ্ঠানে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেছিলেন আগামী বছরের শুরুতে প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি হবে এবং বছরের মাধামাঝি আরও ৫০ কোটি ঘটফুট আমদানি হবে। ফলে এখনকার চেয়ে গ্যাসের ৩৭ শতাংশ সরবরাহ বাড়বে। এতে গ্যাসের সংকট আর থাকবে না। তবে গ্যাসের দাম বাড়বে। ব্যবসায়ীদের সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। কিন্তু শীতের শুরুতেই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাটাসুর, মিরপুর, মগবাজার, মধুবাগ, শান্তিবাগ, যাত্রবাড়ী, পুরান ঢাকা, বাড্ডা, মানিকনগর ও সেগুনবাগিচাসহ বেশকিছু এলাকায় গ্যাস সরবরাহ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, নিয়মিত বিল পরিশোধ করা হলেও গ্যাস সংকটের কোনো সুরাহা হচ্ছে না। তবে তিতাস বলছে, শীতকালে গ্যাসের ব্যবহার বাড়ায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
মিরপুরের এক ভুক্তোভোগী জানান, তীব্র গ্যাস সংকটে খুব সমস্যায় পড়েছেন তারা। সকাল ৭টা বাজতে না বাজতেই গ্যাস চলে যায়। লাইনে টিপটিপ করে গ্যাস আসায় রান্নাবান্না বন্ধের উপক্রম হয়েছে। অনেক গৃহবধূ চুলায় হাড়ি চড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে গ্যাস আসার অপেক্ষা করছেন। তিনি জানতে চান এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলবে কবে?
দুপুরের দিকে শান্তিবাগের জাকির ক্যাটারিং সার্ভিসে গিয়ে দেয়া যায়, খাবারের জন্য মানুষের ভিড় লেগে আছে। প্রতিদিন যেভাবে কাস্টমার আসে গত এক সপ্তাহে তার চেয়ে বেশি কাস্টমার পাচ্ছেন তারা। বিশেষ করে দুপুরের খাবারের সময়। হঠাৎ কাস্টমারের চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে একজন বলেন, গ্যাস না থাকায় বাসাগুলোতে রান্নাবান্না হচ্ছে না। তাই হোটেলগুলোতে খাবারের জন্য ভিড় লেগে যায়।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক এনামুল হক ভূঁইয়া আমার সংবাদকে জানান, শীতকালে তাপমাত্রার প্রভাবের কারণে সংকুচিত হয়ে চাপ কমে যাওয়ায় গ্যাসের এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নিজেও বাড্ডা এলাকার একজন ভুক্তোভোগী দাবি করে বলে, এখানে কৃত্রিম কোনো সমস্যা নেই। এটা শীতকালীন তাপমাত্রার প্রভাবেই এমন সমস্যা হচ্ছে।
সিএনজি ফিলিং স্টেশন গুলোতে সারাদিনই গ্যাস রিফুয়েলিং হচ্ছে সেটা কিভাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানেও আমি একজন ভুক্তোভোগী। ফিলিং স্টেশনগুলো থেকে গ্যাস নিতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রাহকরা। যেখানে তাদের ৩৫-৪০ দামে প্রতিবার গ্যাস রিফুয়েলিং করার কথা, সেখানে তারা তা করতে পারছে না। যদি কেউ ২০০ বার গ্যাসের জন্য বলে তারা সেখানে দিচ্ছে ১৫০ বার। বাকি ৫০ বারই গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০০ বারের টাকা দিলেও ভুক্তভোগীরা পাচ্ছেন ১৫০ বার।
তবে এ বছরের এপ্রিল-থেকে জুন মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে কাতারের রাহাত গ্যাস থেকে ৫০০ মিলিয়ন গ্যাস জাতীয় গ্রিড হয়ে আসবে বলে জানান তিনি। এরপর থেকে গ্যাসের ঘাটতি বা সৃষ্টি হওয়া বর্তমান সংকট আর থাকবে না বলেও জানান তিনি। দৈনিক বাংলা মোড়স্থ নাভানা সিএনজি ফিলিং স্টেশনে কর্মরত প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, সকাল ৮টায় যাওয়ার পর বিকেল টায় আসে তাও কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে যায়। রাত ৯টার মধ্যে আসার কথা থাকলেও রাত ১১টার আগে আর আসে না।
এ ব্যাপারে তিতাসের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিতাস বলছে, চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে তিতাসের এমন বক্তব্য যথাযথ নয় বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, গত ৬ বছরে এমন সমস্যার সম্মুখীন হই নি। এ সমস্যার জন্য তিতাসকেই দায়ী করেন তিনি এবং তিতাস চাইলেই এ সমস্যার সম্ভব বলেও তিনি জানান। তিতাস গ্যাসের পরিচালক প্রকৌশলী এইচএম আলী আশরাফ বলেন, শীতকালে গৃহস্থালীতে ২০ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে যায়। গরমের সময় ২৫-৩০ ডিগ্রি তাপমাত্র থাকে পানির কিন্তু শীতের সময় তা ৯-১০ এ নেমে আসে বা আরও কম সুতরাং ওই পর্যন্ত তাপমাত্রা নিতে হিট করতে বেশি গ্যাসের খরচ হয়। এ কারণে আমাদের গৃহস্থালীতে ২০ শতাংশ ব্যবহার বেড়ে যায়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment