নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরশেন ও জেলা প্রশাসনকে হুঁশিয়ারী দিয়ে উচ্ছেদকৃত হকারদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে পূণর্বাসনের ঘোষণা দিয়েছেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। সোমবার বিকেলে নগরীর চাষাঢ়ায় নবাব সলিমুল্লাহ রোডে পৌর সার্কেটের সামনে হকার সংগঠন আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ ব্যাপারে শামীম ওসমান বলেন, হকাররাও মানুষ। গত ২৫ দিন ধরে তারা পরিবার নিয়ে না খেয়ে আছে। যারা উচ্ছেদ করেছে তারা হকারদের মানুষই মনে করে না। আমারা তাদের মানুষ মনে করি নির্বাচনের সময়। এই ভন্ডামির রাজনীতি আমি করি না।
তিনি বলেন, আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন হকারদের উচ্ছেদের আগে বিকল্প ব্যবস্থা করতে। শেখ হাসিনা মানুষের মুখে রুটি রুজি উঠিয়ে নেয়ার জন্য বাংলার প্রধানমন্ত্রী হন নাই। মানুষের ঘরে খাবার পৌচ্ছে দেয়ার জন্য তিনি বাংলার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে ইঙ্গিত করে বলেন, অন্যায় করবেন আপনি আর গালি খাবে প্রধানমন্ত্রী। তা হবে না। নারায়ণগঞ্জে এইসব নাটক আর হবে না। ওই দিন চলে গেছে। এতোদিন আমি হকারদের ব্যাপারে কোন কথা বলিনি।
আমি দেখতে চেয়েছিলাম নারায়ণগঞ্জের কোন কোন বিবেকবান মানুষ হকারদের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু ২৫ দিন পার হলেও কোন সমাধানর হচ্ছে না। এটাকে ভিন্নভাবে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, আমার বড় ভাই আরেক সংসদ সদস্য হকারদের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়রকে একটি প্রস্তাবমূলক চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু একজন সংসদ সদস্যের প্রস্তাব কোন চিন্তা ভাবনা না করে সাথে সাথেই তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আমি সেলিম ওসমানের মতো চিঠি দেবোনা। আমি আমার ভাইয়ের মতো এতো ভদ্র লোক না। চিঠি লেখার পর উত্তর দিবে সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী ওই এমপি শামীম ওসমান না। তাই আমি কাউকে অনুরোধ করব না।
আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে এই নারায়ণগঞ্জে হকার বসবে। এটা ডিকেলয়ার দিলাম। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থাকব। জনগণের যেন কোন ভোগান্তি না হয়। পুলিশ প্রশাসন বা অন্য কেউ যদি হকারদের গায়ে একটা হাত তোলে তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। হকাররা রাজনৈতিক দলের মানুষ না। তারা সাধারণ মানুষ। আপনাদের ইচ্ছে হলো লাঠিপেটা করে রাস্তা থেকে হকারদের তুলে দিবেন? আপনারা যারা উচ্ছেদ করেছেন, তারা জানেন না ক্ষুধার জ্বালা কি জিনিস। সেটা আমি জানি। আমি আপনাদের বলেছিলাম হকারদের ২ মাস আগে সময় দিতে। কিন্তু আপনারা সেটা করেন নি। কারো মুখে খাবার তুলে দিতে না পারলে, কারো মুখের খাবার কেড়ে নেবেন না। দম্ভকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না।
জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নিয়ম শৃংখলার মাধ্যমেই বিকেল পাঁচটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত হকারদের বসানো হবে। ব্যবসায়ী ও হকার নের্তৃবৃন্দসহ নারায়ণগঞ্জের সুধী মহলকে নিয়ে আপনারা বসেন। একটা বিকল্প ব্যবস্থা করেন। প্রশাসনকে নির্দেশ দিলাম, বিকল্প ব্যবস্থা না করে যদি কোন হকারকে উঠিয়ে দেন তাহলে সেটা শামীম হবে ওসমানের মৃত্যুর পরে।
শামীম ওসমান বলেন, অপনারা আমার বক্তব্যকে কেউ রাজনৈতিকভাবে নিবেন না। হকারদের নিয়ে রাজনীতি করার আমার প্রয়োজন নেই। আমি মানুষ হিসেবে তাদের পাশে এসেছি। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারী মহান ভাষা দিবসের দিন পযন্ত সময় দিলাম আপনারা আলোচনা করে হকারদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করেন।
শামীম ওসমান বলেন, আমি জানি এই হকারদের জন্য বিভিন্ন মার্কেটে বড় বড় পুঁজি নিয়ে দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন তাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের নিম্ন আয়ের মানুষের স্বামর্থ্য নেই বড় বড় দোকান থেকে কেনাকাটা করার। ফুটপাতের দোকানগুলোই তাদের একমাত্র ভরসা।
হকারদের ধৈর্য্য ধারণ করার নির্দেশনা দিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আপনারা সরকারি বেসরকারী কাউকে কোন চাঁদা দিবেন না। তারপরে যদি কেউ আপনাদের উপর কেউ আঘাত করে তাহলে আপনার সহ্য করবেন। পরে কিভাবে পাল্টা আঘাত করতে হয় সেটা আমি বুঝব।
সেমাবার বিকালে রাস্তা অবরোধ করে এ সমাবেশ করেন কয়েক হাজার হকার। মহানগর হকার্স লীগের সভাপতি আসদুজ্জামানের সভাপতিত্বে সমাবেশে জেলা কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো: বাদল, হকার্স নেতা আব্দুর রহিম মুন্সিসহ আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠন ও বিভিন্ন রাজিৈনতিক দলের নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।