১৬ দিনে চার খুন ধামরাইয়ে জনমনে আতংক

১৬ দিনে চার খুন ধামরাইয়ে জনমনে আতংক

Sony Rangs - Rangs electronics

ধামরাইয়ে তিনদিনের মাথায় আবারও এক অটোরিকশাচালককে কুপিয়ে ও রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যার পর তার রিকশাটি ছিনিয়ে নিয়েছে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার সকাল ৭টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের কালামপুর ছাপড়া ব্রিজের নিচ থেকে পুলিশ ওই অটোরিকশাচালকের দুই পা বাঁধা ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করেছে। এসময় হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি লোহার রড লাশের পাশ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের আগে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে রিকশার ব্যাটারিটি পাওয়া যায়নি। নিহত অটোরিকশাচালকের নাম বকুল মিয়া (৩৩)। সে নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার নাউতারা ভাটিয়াপাড়ার মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে। তিনি ধামরাইয়ের কালামপুর আমাতন নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের মিজানুর রহমানের বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থেকে রিকশা চালাতেন। লাশ ময়না তদন্তের জন্য সোমবার ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

১৬ দিনে চার খুন ধামরাইয়ে জনমনে আতংক

তিনদিনের ব্যবধানে দুই অটোরিকশাচালককে হত্যার পর রিক্সা ছিনতাই ও ১৬দিন আগে একটি পরিত্যক্ত কারখানার দুই নিরাপত্তা প্রহরীকে হত্যার ঘটনায় এলকাবাসীসহ রিকশাচালকদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।

নিহতের স্ত্রী সাফিয়া বেগম ও ধামরাই থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বকুল মিয়া রবিবার বিকেল পাঁটটার দিকে তার নিজস্ব ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে রাত নয়টার দিকে বাসায় ফিরলেও রবিবার রাতে আর ফেরেনি। রাতে সম্ভাব্য স্থানে তাকে খোঁজাখুজি করে কোথাও পায়নি তার স্বজনরা। সোমবার সকালে তার বাসা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের ছোট কালামপুর ছাপড়া ব্রিজের পাশে দুই পা বাঁধা অবস্থায় তার ক্ষতবিক্ষত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা ধামরাই থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে এবং নিহতের স্ত্রী লাশ সনাক্ত করেন। তাকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। এসময় লাশের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি রড। এদিকে রবিবার রাত দেড়টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের শ্রীরামপুর গ্রাফিক্রা টেক্রাট্রাইলের পশ্চিম পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় ব্যাটারীবিহীন রিক্সাটি উদ্ধার করে পুলিশ। তবে পুলিশ ওই সময় জানতনা ওই্ রিকসা চালক খুন হয়েছে। খবর পেয়ে ঢাকা জেলা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নিহতের স্ত্রী সাফিয়া বেগম জানান, তার স্বামী প্রায় ১২ বছর ধরে কালামপুর এলাকায় ভাড়া থেকে বিভিন্ন বাড়ীতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতো। ৫ মাস আগে ধারদেনা করে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে একটি নতুন রিক্সা কিনে চালাতে থাকেন তার স্বামী। স্বামীর সঙ্গে কারো শত্রুতাও ছিল না বলে জানান তিনি। সাফিয়া বেগম এসময় বিলাপ করে বলতে থাকেন যারা আমাকে ও আমার দুই মেয়েকে এতিম করেছে আল্লাহ যেন তাদের কঠিন বিচার করেন।

লাশ উদ্ধারকারী ধামরাই থানার এসআই কামরুজ্জামান বলেন, নিহতের রিকশা রবিবার রাত দেড়টারদিকে গ্রাফিকস টেক্সটাইল কারখানার পশ্চিম পাশে মহাসড়কের উপর পরিত্যক্তবস্থায় পাওয়া গেছে। তখন জানতাম না ওই রিক্সার চালক খুন হয়েছে। লোহার মোটা রড দিয়ে মাথায় আঘাত ও মাথা থেতলিয়ে রিক্সাচালক বকুলকে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা।

ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ রিজাউল হক সাংবাদিকদের জানান, ‘দুই চালকের হত্যাকান্ড প্রায় একই কায়দায় ঘটেছে। ধারণা করা হচ্ছে, রিকশাচালক খুনের ঘটনা দু’টি একই গ্রুপের কাজ। এ দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন কলকারখানায় দিনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আর রাতের বেলায় ছিনতাইয়ে লিপ্ত হয়। খুনিদের সনাক্ত ও আটকের অভিযান অব্যাহত আছে’।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ধামরাইয়ের কুল্লা-আড়ালিয়া সড়কের সীতিপাল্লীর কাকনাইল এলাকায় আমিজ উদ্দিন (৩২) নামে এক চালককে গলা কেটে হত্যার পর তার অটোরিকশাটিও ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরদিন  আড়ালিয়ার উত্তর পাশে সড়কের খাদে পরিত্যক্ত অবস্থায় ওই রিকশাটিও পাওয়া যায়। তবে সোমবার পর্যন্ত পুলিশ ওই রিকশা চালক আমিজ উদ্দিন হত্যাকান্ডে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। নিহত আমিজ উদ্দিনের বাড়ি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার মৌজাপাঙ্গা গ্রামে। এছাড়া শুক্রবার রাত আটটারদিকে উপজেলার কাকরান গ্রামের আহসান উল্লাহ নামের এক গার্মেন্টস কর্মী কাকরান বাজার থেকে বাড়ী ফেরার সময় ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত গতিরোধ করে মুখে গামছা দিয়ে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে দুটি হাতের রগ ও গলা কেটে হত্যার চেষ্টা চালায়। এছাড়া ৬ জানুয়ারী শ্রীরামপুরে পানি ও রঙের পরিত্যক্ত একটি কারখানার ভিতরে দুই নিরাপত্তা প্রহরীকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এ জোড়া খুনেরও কোন আসামী সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় স্থানীয় রিকশাচালক ও জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ব্যক্তি ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ হত্যা মামলায় মনোযোগী না হয়ে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য মাদক ব্যবসায়ীদের পিছনে বেশী সময় দেয়। এতে সড়ক-মহাসড়ক থাকে অরক্ষিত। ফলে দুর্বৃত্তরা অপরাধ করে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। আগে বিভিন্ন মামলা তদন্তের দায়িত্ব না দিলে দারোগারা ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলতো। আর এখন কোন মামলার তদন্তে দিলে দারোগারা ঝামেলা মনে করে। তারা এখন ছুটে ইয়াবার পিছনে কাকে ধরলে আর ছাড়লে লাভবান হওয়া যাবে। অথচ দেখা যায়, পুলিশ স্টিকার লেখা প্রাইভেটকারে উপজেলার আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ায় পুলিশ। সকাল হলেই থানা কমপ্লেক্সের ভিতর ১০-১২টি প্রাইভেটকার-মাইক্রো অপেক্ষমান থাকে। সকাল ১০টার পর থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন স্থানে মাদকব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment