বুলডোজারে ধ্বংসের চিহ্ন মুছে ফেলছে মিয়ানমার

বুলডোজারে ধ্বংসের চিহ্ন মুছে ফেলছে মিয়ানমার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুড়িয়ে দেয়া গ্রামগুলোর ধ্বংসলীলার প্রমাণ মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি বলছে, ধ্বংসস্তুপ আর ছাইভস্ম বুলডোজার দিয়ে সাফ করে চিহ্নও মুছে ফেলছে মিয়ানমার সরকার। জাতিগত রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চালানো নিষ্ঠুরতা-নৃশংসতার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নষ্ট করতেই এই অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। শুক্রবার এইচআরডব্লিউ বলেছে, স্যাটেলাইটে ধারণ করা দৃশ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাখাইন রাজ্যে অন্তত ৫৫টি রোহিঙ্গা গ্রামে বুলডোজার চালাতে দেখা গেছে। গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী আগুন দিয়ে রোহিঙ্গাদের এই ৫৫টিসহ ৩৬২টি গ্রাম সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করেছে।

বুলডোজারে ধ্বংসের চিহ্ন মুছে ফেলছে মিয়ানমার

গ্রামগুলোতে চালানো জ্বালাও-পোড়াওয়ের চিহ্ন মুছে ফেলার সরকারি এই তৎপরতার নিন্দা জানিয়েছে সংস্থাটি। রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান-নির্যাতনে এরই মধ্যে রাখাইন রাজ্যটি রোহিঙ্গাশূন্য হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সাড়ে ছয় লাখের বেশি নারী-পুরুষ। এইচআরডব্লিউর এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, মিয়ানমার ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করতে থাকায় নৃশংসতার প্রমাণ মুছে যাওয়ার এবং যেসব রোহিঙ্গা সেখানে বসবাস করতো, তাদের পক্ষে আইনগত দাবি উপস্থাপনের সুযোগ নষ্টের হুমকি তৈরি হয়েছে। এসব গ্রামের অনেকগুলো ছিল রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নিষ্ঠুরতার সাক্ষী। এগুলো সংরক্ষণ করা উচিত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ধ্বংস চিহ্ন থাকলে জাতিসংঘ নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে নির্যাতনের প্রমাণ যথাযথভাবে মূল্যায়নের সুযোগ পেতেন। বার্তা সংস্থা এপি জানায়, শুক্রবার প্রকাশিত তাদের স্যাটেলাইট ছবিতেও দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাখাইনে ২৮টি গ্রাম বুলডোজার দিয়ে সম্পূর্ণ সমান করে দিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ। অবশ্য এসব বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের কোনও মুখপাত্রের মন্তব্য জানা যায়নি।

জাতিসংঘের অভিযোগ, মিয়ানমার সংখ্যালঘু এই জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে। মিয়ানমার সরকার এ অভিযোগ বরাবরের মতো অস্বীকার করে এলেও রাখাইনে জাতিসংঘের তদন্ত দলকে প্রবেশের অনুমতিও দিচ্ছে না। এই নির্মূল অভিযানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়াও সহিংসতা শুরুর পর প্রথম কয়েক মাসেই সেনারা ও তাঁদের সহযোগীরা শত শত গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। গুলি করে হত্যা করে অনেককে। ধর্ষণের শিকার হয় বহু রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরি।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment