চুয়েটে পাখি রক্ষায় গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি

চুয়েটে পাখি রক্ষায় গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি
আমির হামজা, রাউজান চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
পাখির নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলার কাজের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর পাখির নিরাপদ আবাসস্থলের জন্য গাছের উপর কলসি স্থাপন উদ্যোগ নিয়ে ইতি মধ্যে কাজ শুরু করছেন চুয়েট বার্ড ক্লাবের কয়েকজন সদস্য।

গত সোমবার (৫-মার্চ) সকালে থেকে চুয়েটের থাকা লেক, নতুন প্রশাসনিক ভবনসহ বেশ কিছু স্থানে পাখির নিরাপদ আবাসস্থলের জন্য গাছের উপর গ্রাম-বাংলার মাঠির কলসি স্থাপন করা হয়। দিরে দিরে চুয়েটের বিভিন্ন স্থানে এসব মাঠির কলসি গাছের মধ্যে স্থাপন করা হবে।

চুয়েটের শিক্ষার্থী’রা রাউজান নিউজে বলেন, এই দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাখির অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। তাই পাখি রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাখি রক্ষার কাজে (চুয়েট বার্ড ক্লাবের) এমন কার্যকলাপ চুয়েট-জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মাত্র দুই-এম মাসের মধ্যে এই বার্ড ক্লাব পাখি ও প্রকৃতি সুরক্ষায় বিশেষ অবদান রেখে চলছে। এই পাখির স্থাপনা মাঠির কলসি দেখতে যেমন সুন্দর দেখাছেন, তেমনি মাত্র কিছু দিনে উদ্যোগ গ্রহণ করে তার কার্যক্রম বেশ প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয় মনে হচ্ছে আমাদের। মাত্র নতুন বছরে শুরু থেকে পাখি রক্ষায় সমাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেইসবুকে প্রচার চালিয়ে বিগত দুই মাস বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে বার্ড ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ ফজলুর রহমান ও তার সহযোগীরা।

বার্ড ক্লাবের সহ-সভাপতি (প্রভাষক) নাহিদা সুলতানা বলেন, শুধুমাত্র পাখি শিকার থেকে বিরত থাকলেই অসংখ্য বন্যপাখি রক্ষা পাবে। এতে পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসম্য টিকে থাকবে। তা নাহলে একদিন আমরা, আমাদের প্রজন্মই সম্মুখীন হবে বিরূপ প্রতিদানের। পাখিরা আমাদের বন্ধু। পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখতে এদের অবদান অপরিসীম। প্রকৃতি পরিবেশ বাঁচলে আমরা বাঁচবো, পৃথিবীও বেঁচে থাকবে যৃগ যৃগ। আমরা চুয়েটের মধ্যে পাখির পরিবেশ রক্ষা করতে এ অালোচনায় থেকেই বৃক্ষে কলসি স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু করি আমরা। শুরুতে মাত্র দুই-চারটি মাঠির কলসি গাছে বাঁধেন, কিছু দিন যেতেই না যেতেই লক্ষ্য করেন কলসে কয়েকটা শালিক পাখি আশ্রয় নিয়েছে। অবাক হয়ে দেখতে থাকেন পাখিদের ঘর-সংসার, বংশবৃদ্ধি হচ্ছে এখানে। নিজেদের এই সাফল্যে মুগ্ধ হন তারা। এর থেকেই চিন্তা আসে পাখির জন্য কিছু করার। শুরু হয় গত ৫- মার্চ থেকে গাছে গাছে কলসি লাগানোর কাজ। সবার সহযোগীতা পেলে পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন তারা।

বার্ড ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম.এ.ফাহাদ খান বলেন, আমাদের এ প্রতিষ্ঠানে যাত্র শুরু জানুৃয়ারি ২০১৮ সালের প্রথমে দিকে। প্রথমে সচেতনতা মূলক প্রচারণা হয়। ফেসবুকে গ্রুপ খুলে বিভিন্ন পোস্ট দেয়া হয়। মার্চের শুরুতে পাখিকে বাসা গড়ে দেয়ার কাজ শুরু করছি আমরা, প্রথমে প্রধান লেক, নতুন প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন ১০টি এলাকার দেশীয় প্রজাতির গাছে হাড়ি বসানো কাজ শুরু করছি আমরা। ইতিমধ্যে স্থাপিত ১০টি হাঁড়ি বিশেষ কায়দায় অর্ডার দিয়ে বানানো হয়। এমনভাবে বানানো হয় যাতে বৃষ্টির পানি না জমে, অক্সিজেন চলাচল করে। প্রতি হাড়িতে দুটো করে ফুটো রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো চুয়েটে লাগানো হবে। আরো ১০টি স্পটে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে লাগানো হবে এ মাঠির কলসি। আমাদের পরের কাজ হলো পাখি বান্ধব বৃক্ষ তৈরি করা, চুয়েটের ড়ব পুকুর ও লেকগুলোতে যাতে অতিথি পাখি বিচরণ করতে পারে সেজন্য উদ্যোগ নেয়া, এছাড়াও পাখি খাবার পায় এমন পরিবেশ তৈরি করা, সচেতনতামূলক কার্যক্রম দেখে ইতিমধ্যে একজন কর্মকর্তা ও একজন কর্মচারী নিজেদের পোষা পাখি খাচা থেকে ছেড়ে দিয়েছে। যে পাখিগুলো চুয়েটে এখন আপন মনে উঢ়ে বেড়াচ্ছে। শিক্ষক-ছাত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এ ব্যাপারে খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে। সবার মধ্যে অানন্দ দেখাযাচ্ছে।

এ সম্পর্কে চুয়েট বার্ড ক্লাবের সভাপতি ও সহকারী রেজিস্ট্রার (সমন্বয়) মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন,  ‘‘চুয়েট ক্যাম্পাস হলো পাহাড়ি সবুজ বনানী এবং চিরায়াত গ্রামের মাঝে সেতুবন্ধনের জায়গায় অবস্থিত। বসতবাড়ির আশে-পাশে এক ধরনের পাখি বেশি থাকে। আবার পাহাড়ি বনেও কিছু পাখির স্থায়ী বসবাস। আর দুটো পরিবেশই চুয়েটে পাওয়া যায়। কারণ চুয়েটের আগে সবুজ গ্রাম, চুয়েটের পরে সবুজ বন। আর এই মনোরম প্রাকৃতিক অবস্থানে চিরসবুজ চুয়েট ক্যাম্পাসকে আমরা আরো বেশি পাখি বান্ধব করতে চাই। আমরা এ জন্য প্রচলিত ও বৈজ্ঞানিক দুটো উপায়েই অগ্রসর হচ্ছি। সকলের সার্বিক সহযোগিতা ও আগ্রহ দেখে উৎসাহিত বোধ করছি।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment