যাকে ভুলবে না পৃথিবীবাসী

যাকে ভুলবে না পৃথিবীবাসী

স্টিফেন হকিং চলে গিয়েছেন পরপারে, কিন্তু রেখে যান বহু আবিষ্কার। যার কারণে শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও গুণী এই বিজ্ঞানীকে কেউ ভুলতে পারবে না। স্টিফেন হকিং হতে পারেনঅক্ষম ব্যক্তিদের প্রেরণা। শারীরিক অক্ষমতাকে পরাজিত করে তিনি যে মাইল ফলক অতিক্রম করে গিয়েছেন তা সক্ষম ব্যক্তিরও নাগালের বাইরে। যদি বলা হয় কৃষ্ণ গহ্বরের আবিষ্কারক কে? কিংবা বিগ ব্যাং? সব ক্ষেত্রে তার নামই আসবে। আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছেন স্টিফেন হকিং। গ্রভিটেশন, কোয়ান্টাম থিয়োরি, কসমোলজিতে রয়েছে তার অসামান্য অবদান।

 

স্টিফেন হকিং সব সময় বিশ্বাস করতেন এই মহাবিশ্বে মানুষ একলাই জীব না। ভিনগ্রহী প্রাণি আছে। তারা আমাদের দেখে। এদের নিয়ে তিনি বিস্তর গবেষণা করেন। তার মতে ভিনগ্রহীরা হয়ত আমাদের চেয়ে বেশি উন্নত, প্রযুক্তিতে এগিয়ে।

 

এক সাক্ষাৎকারে হকিং বলেছিলেন, একদিন হয়ত মানুষ ভিনগ্রহী প্রাণিদের সন্ধান পাবে। ভিনগ্রহ থেকে সিগনাল আসবে। সেই সিগনালের জবাব তারা দেবে কিনা তা কে বলতে পারে।

 

পৃথিবীর পরিবর্তন দেখে হকিং লোকজনকে গ্রহ ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। যেভাবে লোকসংখ্যা বাড়ছে তাতে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এই পৃথিবী চলাফেরা ও বসবাসের অযোগ্য হবে। এমন সতর্কবাণী তিনি দিয়েছিলেন।

 

হকিংয়ের মৃত্যুতে তার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন এক ভারতীয় বিজ্ঞানী। তার নাম সন্দীপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, তখন আমার ২২। জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছি। রবার্ট গেরোসের তত্ত্বাবধানে চলছে আমাদের কাজকর্ম। সে সময় জেনারেল রিলেটিভিটি গ্রুপে লেকচার দিতে এলেন স্টিফেন হকিং। সেই প্রথম তাকে সামনাসামনি দেখা। তার লেকচার শোনা। সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। যার লেখা পড়ে বড় হয়েছি, তাকেই এত কাছ থেকে দেখা! মনে মনে প্রবল উত্তেজিত ছিলাম সে দিন।

 

রবার্ট গেরোস ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও এক অধ্যাপক জিম হার্টলের সঙ্গে হকিংয়ের তখন গভীর বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বের টানেই বোধহয় বার বার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং লেকচারার হিসেবে চলে আসতেন হকিং।

 

বেশ মনে আছে, ১৯৮১-র অক্টোবরে শিকাগোতে গিয়েছিলাম। আর পরের মাসেই হকিং এলেন আমাদের স্টাডি গ্রুপে পড়াতে। পদার্থবিদ হিসেবে তিনি কত বড় তা তো গোটা বিশ্বই জানে। তবে শিক্ষক হিসেবেও তিনি যে কত উঁচু দরের তা সে বছর টের পেয়েছিলাম। কঠিন বিষয়ও যে এত সহজ-সরল ভাবে বোঝানো সম্ভব, তা হকিংয়ের লেকচার না শুনলে বুঝতে পারতাম না।

 

মনে পড়ে, অত্যন্ত ধীরে ধীরে পড়াতেন তিনি। আমরা যেন কিছুই জানি না, এমন ভাবে শুরুটা করতেন। তার পর আস্তে আস্তে কখন যে বিষয়ের গভীরে পৌঁছে যেতেন, বুঝতেও পারতাম না! আবার গুরুগম্ভীর তত্ত্ব বোঝাতে গিয়ে বেশ রসিকতা করতেন আমাদের সঙ্গে। ফলে পরিবেশটা বেশ সহজ হয়ে উঠত।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment