ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ক্ষ্যাপা হনুমানের কামড়ে আহত-২০, আতঙ্কে শহরবাসী

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ক্ষ্যাপা হনুমানের কামড়ে আহত-২০, আতঙ্কে শহরবাসী
 রিয়াজ উদ্দীন (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধিঃ-
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে এক সপ্তাহে একটি ক্ষ্যাপা হনুমান পথচারী, দোকানী, বাড়ীয়ালীসহ কমপক্ষে ২০ জনকে কামড়িয়ে গুরুত্বর আহত করেছে। আহত ব্যক্তিরা স্থানীয় হাসপাতালে, ডাক্তার খানা ও প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে।
হনুমানের কামড়ে আহতরা হলো মেসার্স কনিকা গার্মেন্টেস-এর কর্মচারী বলিদাপাড়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম (৪৫), আড়পাড়া গ্রামের (দরগা পাড়ার) বৃদ্ধা মোছাঃ রুবিয়া খাতুন (৭৫), ফয়লা গ্রামের নুরুল ইসলামের ড্রাইভারের পূত্র হারুন (৩৫), বলিদাপাড়া (হঠাৎ পাড়া) মোঃ শাহিন হোসেন (৩৫), আড়পাড়া গ্রামের শ্রী সমিরন বিশ্বাসের পূত্র মৃময় কুমার বিশ্বাস (৪), আড়পাড়া মধূভাজা পাড়ার গৃহিনী সোনালী বেগম (৩২) বাজার পাড়ার মনজের আলীর পূত্র সোহাগ হোসেন (১৩)সহ অন্তত ২০ জন কে কামড় দিয়ে আহত করেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আরো ৭/৮ জন চিকিৎসা গ্রহন করছেন। বর্তমানে ক্ষ্যাপা হনুমানের ভয়ে কালীগঞ্জ পৌরবাসী আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। স্কুল কলেজে যাতায়াতকারী ছাত্র-ছাত্রী, অতিথি, বাড়ীর কচিকাঁচা শিশু-কিশোর, ব্যবসায়ী ও পথচারীরা হনুমান আতঙ্কের মধ্য দিয়ে চলাফেরা করছেন।
গত ২/৩ বছর যাবৎ অর্ধশত হনুমান কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় অস্থানা গড়ে তোলে। এখন এই হনুমানের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক কালে এরা সংঘবদ্ধ হয়ে বাসাবাড়ী, দোকান পাটে হঠাৎ করে হানা দিয়ে ভাত, তরকারী নষ্ট এবং কলা, পাউরুটি, বিস্কুট, কেক, পান বিভিন্ন রকম খাদ্য সামগ্রী ছিড়ে নিয়ে ঘরের ছাদে অথবা গাছের ডালে বসে মজা করে খাচ্ছে। এদের মধ্যে একটি অথবা দুটি হনুমান ক্ষ্যাপা হয়ে যন্ত্রতন্ত্র মানুষকে কামড় দিয়ে রক্তাক্ত জখম করছে।

ফলে ক্ষতিগ্রস্থরা ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হয়ে হনুমানের দাঁতের কামড়ের ব্যয় বহুল ৫ টি ভ্যাকসিন র‌্যাবিপুর ইনজেকশন নিয়ে চিাকৎসা গ্রহন করছেন। এ ব্যাপারে ভূক্তভোগী জনগোষ্টি প্রশাসনসহ নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের সু-দৃষ্টি কামনা করে এর প্রতিকার পাবে এমনটা আশা বরছেন।
এ ঘটনায় জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ এম এ কাফী জানান, কুকুর, বিড়াল, হনুমান, শিয়াল, বাদুর, খাটাশ ইত্যাদি প্রাণীর কামড় থেকে মানুষ যে রোগে আক্রান্ত হয় তাকে জধনরবং জলাতঙ্ক রোগ বলা হয়। এটি একটি মারাত্মক রোগ। এই আক্রান্ত ব্যক্তি জল বা পানিকে ভয় পায়। এজন্য এই রোগের নাম দেওয়া হয়েছে জলাতঙ্ক। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত মানুষের কামড়েও অন্য কোন মানুষ বা পশু-পাখি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

ক্ষ্যাপা বা পাগলা কুকুরের কামড়ে এই রোগ হয় বলে সাধারণ মানুষের নিকট বহুল প্রচলিত। সাধারণত রক্ত, মাংস এবং লালার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। কামড় খাওয়ার পরে রোগটি দেখা দিতে ১০ দিন থেকে ১ বৎসর পর্যন্ত লাগতে পারে।এই রোগের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর, গলাব্যথা, খিচুঁনি, মুখ দিয়ে ফেনা এবং রক্তযুক্ত লালা র্নিগর্ত হওয়া, ভয়ঙ্কর জিনিস দেখা, খিচুঁনির মধ্যেও জ্ঞান ঠিক থাকা, পিঠ বাঁকা হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, প্রচুর লালা নিঃসরণ, সামনে যাকে পায় তাকেই কামড় দিতে চায়, কুকুরের মতো চীৎকার করা, খিচুঁনি ইত্যাদি। জংলী বানর এবং হনুমানের কামড় খাওয়ার পরে দংশনকারী প্রাণীটিকে হত্যা করতে নাই।

বরং তাকে পনের দিন পযন্ত বেধে রেখে লক্ষ্য করতে হবে যে, তাতে পাগলা (অথাৎ জলাতঙ্ক) রোগের কোন লক্ষণ প্রকাশ পাই কিনা না। তবে কামড় খাওয়া ব্যক্তিকে অবশ্যই জলাতঙ্ক রোগের টিকা / ভ্যাকসিন নিতে হবে। সাধারণত এসব প্রাণীর কামড় খাওয়ার সাথে সাথেই পাঁচটি টিকা/ ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া জরুরি। আগে নাভীর গোড়ায় ১৪টি ইনজেকশান নিতে হতো কিন্তু বর্তর্মানে হাতের পেশীতে ৫টি নিতে হয়।

সাধারণত ১, ৭, ১৪, ২৮, ৯০ তম দিন হিসাবে পাঁচটি ইনজেকশান নিতে হয়। এ সব এলোপ্যাথিক টিকা / ভ্যাকসিন ইনজেকশান নেওয়ার আগে আপনাকে মেয়াদ অবশ্যই খেয়াল করতে হবে। মেয়াদ যদি না থাকে তাহলে পরেও আপনি জলাতঙ্ক রোগের আক্রান্ত হতে পারেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment